• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বাসযোগ্য ঢাকা গড়াই আমার লক্ষ্য

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৪ জানুয়ারি ২০২০  

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আগামী ৩০ জানুয়ারি। ইতোমধ্যে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক ছোট দল নির্বাচনে তাদের প্রার্থী দিয়েছে। দুই সিটির মেয়র প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজ (শনিবার) প্রকাশিত হলো ঢাকা উত্তরের বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সাক্ষাৎকার।

সিটি নির্বাচনে যদি আপনি বিজয়ী হন তাহলে নগরকে কিভাবে গড়ে তুলবেন?

তাবিথ আউয়াল: এখন ঢাকার শহরকে বর্তমান সরকার, সরকারের প্রশাসন এবং সরকারের মেয়ররা যেখানে নিয়ে গেছে, সেখানে এই ঢাকা শহরকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন আমাদের প্রধান কাজ। জলবায়ু পরিবর্তনসহ অনেক পরিবেশগত কারণে ঢাকা মৃত্যু সিটি হিসেবে ঘোষণা পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে। কারণ ঢাকা অবাসযোগ্য হয়ে গেছে। আর আইনশৃঙ্খলার নিম্ন তালিকাতে চলে গেছে। যদি বায়ু দূষণ, পানি দূষণ এবং শব্দ দূষণের কথা বলি তাহলে এগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশী ঢাকায়। সুতরাং না এই শহর নারী বান্ধব, না এই শহর শিশু বান্ধব এবং না এই শহর মানুষ বান্ধব। তাই আপাতত মানুষ বান্ধব, দূষণমূক্ত এবং জনকল্যাণমূলক শহর গড়ে তোলার জন্য শুরুতেই আমাদেরকে নানা পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আমরা নেবো। আর শুরুতেই কিছু কিছু ইস্যুতে কাজ করতে হবে-সেগুলো হলো বর্জ্য ব্যবস্থা, ট্রাফিক জ্যাম থেকে উত্তরণের একটি ব্যবস্থা নেওয়া, দূষণমুক্ত পরিবেশ, পাবলিক এবং সরকারি জায়গাগুলোকে দখল মুক্ত করা।

আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নাগরিকদের কাছে আপনার প্রতিশ্রুতি কী?

তাবিথ আউয়াল: আমরা নাগরিকদের সাথে কথা বলেছি এবং গণমাধ্যমে দেখছি, আমার উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলি তাদের দাবি। এইসব সমস্যা ঢাকার নাগরিকদের প্রধান সমস্যা। তারা দ্রুত এসবের সমাধান চান। নাগরিক এসব ইস্যুগুলোতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমি নির্বাচিত হলে বর্জ্য ব্যবস্থা, ট্রাফিক জ্যাম থেকে উত্তরণের একটি ব্যবস্থা নেওয়া, দূষণমুক্ত পরিবেশ, সিটি কর্পোরেশনের অবৈধ জায়গাগুলোকে দখল মুক্ত করার চেষ্টা করবো।

নির্বাচনে ঢাকার নাগরিকদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

তাবিথ আউয়াল: নাগরিকদের কাছে আমার প্রত্যাশা, তারা তাদের ভোট যথাযথভাবে প্রয়োগ করবেন এবং কেউ যদি ভোট প্রয়োগে বাধা দেন বা বিশৃঙ্খলা করে তা প্রতিহত করে এবং নিজেরা নিজেদের ভোট অধিকার আদায় করবে।

তিনি বলেন, আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করে আবারও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবো। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের অধিকার কায়েম করবো। যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, সেটা ফিরে আনার জন্য নির্বাচনী আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের এগোতে হবে। আর আমাদের যে বৃহত্তর আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা। আমরা মনে করি, এবিষয়ে নাগরিকরা ভোটের মাধ্যমে তাদের রায়, সাড়া এবং নির্দেশনা দেবে।

গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মত এবারও ভোটের মাঝ পথে বিএনপির প্রার্থীদের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি?

তাবিথ আউয়াল: নির্বাচনের পরিস্থিতি একজনকে মাঠ থেকে সরে যেতে বাধ্য করে। গতবার আমরা দেখেছি যে, সকাল থেকে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল- সেক্ষেত্রে কোন মতেই সেটাকে নির্বাচন বলা যায় না। সুতরাং সেই নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া এবং নির্বাচনে থাকার মতো অবস্থা ছিল না। আর বিএনপিকে একা দোষারোপ করে তো লাভ নেই। কারণ ওই নির্বাচনে আরো চার জন্য প্রার্থী ছিলেন-তারাও কিন্তু ওই দিনই নির্বাচন বয়কট করেছিলেন। তাই এটা মূলত একটি দলের সিদ্ধান্ত নয়, এটা ছিল একটা গণসিদ্ধান্ত। আর এবার ওই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে জেনে শুনেই কিন্তু আমরা মাঠে নেমে যাচ্ছি। তবে কোন নির্বাচনী প্রচার এবং সাবেক পরিস্থিতির উপর আমরা আস্থা রাখছি না। কারণ আমরা জেনে শুনেই নামছি। আর আমাদের নৈতিক সিদ্ধান্ত এবং পার্টির সিদ্ধান্ত যে, কোন মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে যাবো না। আমাদের লড়াই শেষ পর্যন্ত হবে। অর্থাৎ ভোট গণনা করে আইনি পদক্ষেপ এবং নির্বাচনী কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায়-সেগুলোও আমরা সব নেবো। সুতরাং কোন অবস্থাতেই এই নির্বাচন থেকে আমরা সরে দাঁড়াচ্ছি না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে- এবিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

তাবিথ আউয়াল: নির্বাচন কমিশনের কোন কথার উপরে কেউ আর কোন স্বস্তি পায় না এবং আশা রাখে না। বরং নির্বাচন কমিশনের অনেক কথা বিরোধিতা সৃষ্টি করে। আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ইসি আপাতত কোন পরিবেশ রাখেনি। একই সাথে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইসি কাউন্সিলরদেরকে উৎসাহ করার পরিবর্তে নিরুৎসাহ করেছেন। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের কথা সঙ্গে তাদের কাজের কোন মিল আমরা দেখছি না। নির্বাচন করার যে পরিবেশ এবং প্রচার করার যে পরিবেশ- সেই পরিবেশ তারা এখন পর্যন্ত তৈরি করেন নাই বা তৈরি করতে পারেননি। যেকারণে নিজেরা বলছেন, ভোটারদের নিরাপত্তা উনারা নিশ্চিত করবেন। কিন্তু উনারা ভোটারদের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করবেন এবং কবে নিশ্চিত করবেন? এই কথাগুলো কিন্তু উনা’রা বলছেন না। আর প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোন ব্যবস্থা কি কেউ দেখেছে? এটা আজ পর্যন্ত শুনি নাই। তাই এইসব কথা বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য বলা হচ্ছে। কোন স্বস্তি ফিরে আনার জন্য বলা হচ্ছে না।

ইভিএমে ভোট পদ্ধতিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

তাবিথ আউয়াল: এবিষয়ে আমাদের অনেক অভিযোগ আছে। আর আমাদের প্রশ্নও আছে। ইভিএম ব্যবহারটা কি জনকল্যাণে এবং জনস্বার্থে করা হচ্ছে? না কি কোন ব্যক্তিগত ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির পকেটের স্বার্থে? উনা’রা (নির্বাচন কমিশন) আড়াই লক্ষ টাকার মেশিন কিনতে চাচ্ছেন। এর মধ্যে ৮০ হাজার মেশিন ঢাকা উত্তর সিটিতে লাগবে। এই বাণিজ্য থেকে কে লাভবান হবে? নির্বাচন কমিশন না সরবরাহকারীরা, না কি আসলে জনগণ? এই প্রশ্নের উত্তর আমর কখনোই পেলাম না।

ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট না করার বিষয়ে আপনারা কি নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করছেন?

তাবিথ আউয়াল: ইভিএম নিয়ে আমরা আগামী দিনগুলোতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করবো। এই সংলাপে ইভিএমের টেকনিক্যাল বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা হবে। আর আমরা আশা করি, এবার উনা’রা আমাদেরকে স্বস্তি দেবেন।

আপনারা বলছেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়, এরপরও কেনো আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন?

তাবিথ আউয়াল: এই কথা শুধু আমাদের নয়। এই কথাগুলো সাধারণ জনগণেরও। আর এই কথাগুলো ইসির একজন কমিশনারের মুখ থেকেও আমরা শুনেছি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, একজন সংবিধানের বিপক্ষে কাজ করবেন এবং একটা গ্রুপ পুরো জাতিকে তামাশার নির্বাচন দেখাবে- আর আমরা তাদেরকে এভাবে ছাড় দিয়ে চলে যাবো। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও নির্বাচনে বিশ্বাস করি। আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হলো আমাদের দায়িত্ব। আর ইসির দায়িত্ব হলো নির্বাচনকে সুষ্ঠু করা।

এক কথায় বলুন- নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকাবাসীকে আপনি কি বলতে চান?

তাবিথ আউয়াল: আপনারা নির্ভয়ে এবং সকল কিছু অতিক্রম করে নিজের ভোটটা নিজে দেবেন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ