• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মেয়েদের মাসিক কি ও কেন হয় ?

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২১  

মাসিক কোন অসুখ নয়। পৃথিবীর সকল নারীকেই এই প্রাকৃতিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমাদের মা-খালারাও উঠতি বয়সে মাসিক বা ঋতুচক্রের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। একজন নারীকে ভবিষ্যতে সন্তানসম্ভবা হতে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করে এই মাসিক প্রক্রিয়া। একজন কিশোরীর জন্য এটি প্রথম সংকেত যা বলে দেয় যে সে তার বাড়ন্ত কৈশোরে পা রাখতে যাচ্ছে।

ঋতুস্রাব হওয়া মানে প্রতি চার সপ্তাহে অন্তর জরায়ুর ভিতর থেকে রক্তস্রাব হতে থাকা এবং প্রত্যেক বারেই সেটা চার পাঁচ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে। সহজ করে বললে, ‘মুন ক্যালেন্ডার’ বা চন্দ্রমাস অনুয়ায়ী, মেয়েদের জরায়ু যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং প্রতিমাসে হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে যে রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত তরল পদার্থ বের হয়ে আসে, তাকেই মাসিক বা ঋতুস্রাব বলে৷

মেয়েদের ঋতু জীবনের মেয়াদ প্রায় পয়তাল্লিশ বছর। চৌদ্দ পনের বছর থেকে এই জীবন শুরু হয় পয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। প্রত্যেকটি ঋতুকাল চার সপ্তাহ অন্তর চক্রবৎ আসতে থাকে। এক একটি চক্রের দিন গণনা করতে হয় একবারের ঋতু দর্শনের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী বারের ঋতুর প্রথম দিন পর্যন্ত।

স্বাভাবিক অবস্থায় ওভারি ও ডিম্বাশয়ের ক্রিয়ার উপর থেকে যে ঋতুস্রাব হওয়া নির্ভর করে তাতে কোন সন্দেহ  নেই। যখন থেমে ওভাম ও ডিম্বকোষ জন্মাতে শুরু করে তখন থেকে ঋতুও শুরু হয় এবং ডিম্বকোষ জন্মানো থেমে গেলে ঋতু হওয়াও থেমে যায়। যদি ওভারি দুইটি অপারেশনেশর দ্বারা কেটে বাদ দেওয়া যায়, তাহলে ঋতু আর কখনো দেখাই দেয় না।

প্রতি মাসে ডিম্বাশয় একটি ডিম্বাণু উৎপাদন করে। সবচেয়ে পরিপক্ক বা পূর্ণাঙ্গ ডিম্বাণুটি ডিম্বনালির মধ্য দিয়ে জরায়ুতে চলে যায়। জরায়ু হচ্ছে দেহের এমন একটি অংশ যেখানে শিশু সুরক্ষিত থাকে ও প্রতিনিয়ত পুষ্টি পায়। যখন ডিম্বাণু পরিপক্ক হয় তখন শরীর জরাযুতে রাসায়নিক সংকেত পাঠায়। ফলে জরায়ুর ভিতরের অংশ পুরু হয়ে ওঠে। ডিম্বাশয় থেকে পরিপক্ক ডিম্বাণু বেরিয়ে এসে ডিম্বনালীতে অবস্থান নেয়। এই পুরো প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিম্বাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া। ডিম্বানুটি শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত হলে গর্ভসঞ্চার হয়। গর্ভবতী অবস্থায় নিষিক্ত ডিম্বাণুটি ডিম্বনালীর মধ্য দিয়ে জরায়ুতে আসে। ৬ দিনের মধ্যে নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুতে সৃষ্ট নরম, পুরু আবরণের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। আর যদি গর্ভবতী না হয়, তাহলে অনিষিক্ত ডিম্বাণুটি নষ্ট হয়ে যায়। জরায়ুর ভেতরে কোন শিশু জন্ম না নেওয়ায় নরম ও পুরু আবরণটিও ভেঙে যায় এবং শরীর থেকে রক্তের আকারে বের হয়ে আসে। এভাবেই মাসিকের শুরু হয়।

ঋতু হলেই যে বালিকা এমনি যুবতীর কোঠায় উঠে গেছে তা নয়। বালিকা যে, সে তখনই বালিকাই থাকে। তবে তখন থেকেই যে তার দেহ এবং মনে সকল দিক দিয়ে একটা বিশেষ রকম পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে তাতে কোন সন্দেহ নেই । দেহেও তার যৌবনের নতুন চিহ্নগুলি একে একে ফুটে উঠতে থাকে। মনেও তেমনি নতুন ভাবেই চপলতা উদয় হতে থাকে। আর অন্তরের দৃষ্টি এতকাল নিজের গণ্ডীতে নিবন্ধ ছিল, সে দৃষ্টি খুলে যায় বাইরের দিকে।

তার মন যেন জীবনের কোন নতুন জিনিসের গন্ধ পাচ্ছে।  কিন্তু তবু সদ্য ঋতুবতী বালিকার সঙ্গে যুবতীর প্রবেদ আছে। পূর্ণ যুবতী হয়ে ওঠবার আগে তাকে আরও কয়েকটা ধাপ পার হয়ে যেতে হবে। ঋতু দেখা দেওয়া মাত্রই সে যে জননী হবার উপযুক্ত হবে তাও ঠিক নয়। ওর থেকে তারই একটা সুচনা হলো মাত্র। তখনও তার দেহের পরিপূর্ণ গড়া হয়নি, হাত পা গুলো অস্বাভাবিক রকমে লম্বা ও লালিত্য শুন্য চঞ্চল গতি ভঙ্গির মধ্যে তখন কোন নারীর সুলভ ছন্দ দেখা দেয়নি। তারপর ধীরে ধীরে প্রথমে তার বুকের স্তন দুইটি সুস্পষ্ট ও সুডোল হয়ে উঠবে,গলায় স্বর কিছু ভারী হবে। বগলের কাছে ও কামাদ্রির কাছে লোম জন্মাবে,মাথায় চুল আরও বাড়ন্ত হবে। চোখের দৃষ্টি হয়ে সসবে লাজনম্র , সর্বাঙ্গে যৌবনের একটা বিশিষ্ট ধরণের হিল্লোল ছাপাছাপি হয়ে উঠবে। আর তারই উদ্দামতা সংবৃত হবে, তবেই হবে সম্পূর্ণ যৌবনের উদ্যাম।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ