• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

সালাতি হৃদয়ে বাজে বেলালি আজান

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

স্বার্থের মোহে, অর্থের দ্বন্দ্বে, স্বজনের মায়ায়, প্রিয়জনের ছলনায় মানুষ ভুলে যায় নিজেকে। ভুলে যায় তার পরমপ্রিয় প্রভুকে। মানুষ যখন নিজেকে ভুলে যায়, তখন তার ভিতর-জগৎ অন্ধকারে ছেয়ে যায়। পৃথিবীর জটিল সমুদ্রে জীবন নামক সহজ ডিঙিটি হেলেদুলে ভেসেডুবে চলতে থাকে। এই চলায় ছন্দ থাকে না। থাকে না সহজ ঢং। মানুষ চায় একরকম হয় আরেক। চায় আনন্দ, পায় দুঃখ। এভাবেই চোখের জলে, দুঃখের আগুনে পুড়তে থাকে জীবন। ভাসতে থাকে দেহডিঙি। স্বার্থ নামক মোহের আগুন থেকে মানুষকে বাঁচাবে কে? কে তাকে ডেকে বলবে, মানুষ! এই নর্দমাক্ত জীবন তোমার নয়। অর্থের নোংরা ডোবায় ডুবে মরার জন্য তোমাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়নি। স্বজনের মায়ায় হন্যে হয়ে ঘুরে মরাই তোমার একমাত্র কাজ নয়। প্রিয়জনের ছলনায় জীবনভর ভুলে থাকা তোমার সাজে না। তোমার উদ্দেশ্য আরও বড়। তোমার কাজ আরও মহৎ। মানুষের মনে এই মহানের ডাক দিয়ে যায় আজান। তাই তো আজানের প্রথম বাক্য, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আল্লাহই বড়, আল্লাহই মহীয়ান। তুমি যার পেছনে ছুটে জীবন শেষ করছ, সবই মিছে, সবই মায়া, সবই ক্ষুদ্র, সবই অলীক। আসল লক্ষ্য হলো সেই মহান আল্লাহ। তোমার একমাত্র আপন হলেন সেই আল্লাহ, যিনি এক মুহূর্তের জন্য তোমার ওপর থেকে দয়ার চাদর তুলে নেননি। তুমি যতই তাকে ভুলে থাকো, তিনি কিন্তু তোমাকে ভোলেন না। আল্লাহু আকবার! সবকিছুর চেয়ে আল্লাহ বড়। আল্লাহ মহান। তিনি সর্বশক্তিমান। জীবনের কঠিন আঘাতে জর্জরিত একজন মানুষ যখন শান্তির খোঁজে ক্লান্ত হয়ে হতাশার চোরাবালিতে হারিয়ে যেতে থাকে, এমন সময় তার হৃদয়কানে আজানের মধুর বাণী ‘আল্লাহু আকবার’ ভেসে আসে, তখন সে যেন জীবনযুদ্ধে সফলতার নতুন মন্ত্র শুনতে পাওয়ার মতো জেগে ওঠে। সে উপলব্ধি করে, হতাশার চোরাবালি থেকে কে যেন তাকে আশার সবুজ মাঠে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সে দেখতে পায়, এখন ভিতর-জগতে এক আল্লাহর নূরের রওশন ঝলমল করছে। এমন সময় সে শুনতে পায় মুয়াজ্জিন বলছে- আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। তখন সেও মন-প্রাণ উজাড় করে ঘোষণা করে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া জীবনের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। আল্লাহ ছাড়া সাধনার আর কেউ নেই। আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্লাহ। আল্লাহকে পাওয়ার এই সাধনায় একমাত্র পথপ্রদর্শক যিনি তিনি আর কেউ নন, আল্লাহর প্রেরিত রসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁকে মেনে, তাঁকে ভালোবেসেই আল্লাহকে পাওয়ার সাধনা করতে হবে। তাই মুয়াজ্জিনের সঙ্গে সঙ্গে মুমিন বান্দাও বলে ওঠে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি প্রেমময় প্রভুকে পেতে চাইলে মহাপ্রেমিক হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ণ অনুসরণ করে তাঁর খাঁটি প্রেমিক হতে হবে। তবেই আল্লাহকে পাওয়া যাবে। এ যেন কোরআনের সেই বাণীর প্রতিধ্বনি, আল্লাহকে ভালোবাসতে চাইলে হজরতকে ভালোবাসো আগে। হাইয়া আলাস সালাহ। কল্যাণের পথে এসো। সালাতি জিন্দেগির পথে হাঁটো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনভর মানুষকে সালাতি জিন্দেগির সবক দিয়ে গেছেন। সালাতের এক অর্থ হলো, জীবনের প্রতিটি কাজ প্রভুর প্রেমে তম্ময় থেকে প্রভুর বলে দেওয়া পথে সম্পন্ন করা। পাঁচ বেলা ওঠা-বসার যে সালাত আমরা আদায় করি, তা আসলে চব্বিশ ঘণ্টা প্রভুর প্রেমে তম্ময় থাকার এক উচ্চতর প্রশিক্ষণ মাত্র। এ প্রশিক্ষণ যে যত সচেতন মন নিয়ে করবে, বাকি সময় সে তত বেশি প্রভুর প্রেমে ডুবে দুনিয়ার জীবন সালাতি হালে কাটাতে পারবে। যখন মানুষ দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রভুর প্রেমে তম্ময় থাকার সাধনায় সফল হয়, তখনই সে পরিপূর্ণ মুমিন হয়ে ওঠে। এদের সম্পর্কেই কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মুমিনরা সার্থক হয়ে গেছে। কারণ তারা সর্বক্ষণ সালাতি জিন্দেগির চর্চায় ব্রত রয়েছে।’ আল্লাহু আকবার। তারপর আবার শুরুর মতো শেষেও বান্দাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, জীবনের প্রতি মুহূর্তে প্রভুর সাধনায় তম্ময় থাকতে হবে এজন্যই যে, প্রভুর চেয়ে বড়, তাঁর চেয়ে মহান আর কেউ নেই। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। তিনি ছাড়া সাধনা করার, প্রেম করার, মেনে চলার আর কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। হায়! কেউ কি এখন হৃদয়ের কানে আজান উপলব্ধি করে? হজরত বিলালের মতো হৃদয়ছোঁয়া আজান কি আর ভেসে আসবে না!

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ