গোপালগঞ্জে ২ শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ

করোনায় দীর্ঘ দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিদ্যালয়ের মতো খুলে দেওয়া হয় গোপালগঞ্জের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিদ্যালয় খোলার কয়েকদিনের মধ্যেই জেলার দুই বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মোনালীসার করোনা পরীক্ষার ফল পজেটিভ আসে। এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর করোনা আক্রান্ত হন জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার ৪ নম্বর ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তানিয়া খানম।

দুই শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্তের খবর ছড়িয়ে পরার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয় দুটির শ্রেণিকক্ষ তালাবন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি বাড়ি বা অন্য কোনো স্থান থেকে ওই দুই শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।

বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার পর নিয়মিত ক্লাস করছিল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোনলীসা। ১৪ সেপ্টেম্বর মোনালীসার মাথা ব্যাথা ও জর শুরু হয়। এরপর থেকে সে আর বিদ্যালয়ে আসেনি। ২১ সেপ্টেম্বর করোনা পরীক্ষা করা হয় তার। ২২ সেপ্টেম্বর মোনালীসার করোনা পজেটিভ আসে।

মোনালীসার মা মিতু খানম বলেন, ‘বিদ্যালয় বন্ধ থাকাকালীন আমার মেয়ে বাড়িতে ছিলো এবং সুস্থ ছিলো। ১২ সেপ্টেম্বর মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাই ১৪ সেপ্টেম্বর সে মাথা ব্যাথা ও হালকা জ্বর অনুভব করে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে তার বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেই। ২১ তারিখে জর না কমায় নমুনা সংগ্রহ ক‌রে করোনা পরীক্ষা করতে দেই। পরের দিন ২২ সেপ্টেম্বর মোনালীসার করোনা পরিক্ষার ফল পজেটিভ আসে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মোনালীসাকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তাকে দুই দিন অক্সিজেন দেওয়ার পর এখন তার কিছুটা শারী‌রিক উন্নতি হয়েছে। আমাদের পরিবারে অন্য কোনো সদস্য করোনায় আক্রান্ত হননি। ’

বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির  প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার বলেন, ‘মোনালীসা সর্বশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় ক্লাস করে। সেই দিন তার মধ্যে করোনার উপসর্গ জর ও মাথা ব্যথা লক্ষ করা যায়। এরপর মোনালীসার নমুনা পরীক্ষা করলে করোনা পজেটিভ আসে। আমরা সার্বক্ষণিক তার পরিবারে সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এছাড়া সে বিদ্যালয়ের যে কক্ষে ক্লাস করেছিলো সেই কক্ষটি স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকি শ্রেণির ক্লাসগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। তবে অন্য কোন শিক্ষার্থী‌দের মধ্যে করোনার কোন উপসর্গ দেখা যায়নি। আমরা শিক্ষার্থী‌দের নিয়মিত তাপমাত্রা মেপে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করাচ্ছি।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে আমরা জানতে পারি। পরে আমরা ওই বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় তলার ২০১ নম্বর কক্ষ বন্ধ করে দেই। 

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে সুস্থ আছে। আমরা তাকে করোনার চিকিৎসা দিচ্ছি। ’

এদিকে কোটালীপাড়া উপজেলার ৪ নম্বর ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তিনা খানম অন্য সহপাঠিদের সঙ্গে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুলে ক্লাস করে। পরে ওই ছাত্রী জরে আক্রান্ত হলে ১৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় করোনার ফল পজেটিভ আসে। এরপর থেকে তাকে নিজ বাড়িতে মায়ের সঙ্গে কোয়ারেন্টাইন রাখা হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণি ১৪ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকি শ্রেণির ক্লাসগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। এছাড়া ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির আরো ৪ শিক্ষার্থী ঠান্ডা জরে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।