• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

দৈনিক হাজার টাকা সুদের জালে আটকা পড়েছে গ্রাহকরা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯  

জরুরি প্রয়োজনে 'লাখ টাকায় দৈনিক সুদ এক হাজার টাকা' শর্তে টাকা নিয়ে দেনার জালে জড়িয়ে পড়েছে ধান্যহাটি গ্রামের অন্তত ২০টি পরিবার। রোববার (১৩ জানুয়ারি) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে গ্রামের বেশ কয়েকজন নারী পুরুষ ঋণ গ্রহীতা এসে অভিযোগ করে বলেন, ' মহাজনের চাপে এখন তারা বাড়িতে টিকতে পারছেন না। তাদের সম্পত্তি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেনার দায়ে তাদের এখন এক রকম গা ঢাকা দিয়ে চলতে হচ্ছে'।

আশাশুনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধান্যহাটি গ্রামের অন্তত ২০টি পরিবার এই ধরনের ঋণের জালে আটকা পড়েছে। তাদের মহাজন নাজমা বেগম ও তার স্বামী আব্দুর রশিদের দাপটের মুখে স্কুল-কলেজে ছেলে মেয়েদের পাঠাতে পারছেন না । স্বাক্ষরিত সাদা স্ট্যাম্পে তাদের জমি লিখে নিয়েছে নাজমা-রশিদ দম্পতি। টাকা আদায়ে মাছের ঘেরও লুট করে নিয়েছে তারা। এখন আইনি নোটিশ দিয়ে ঋণ গ্রহীতাদের পিছু নিয়েছে এই দম্পতি।

ঋণ গ্রহীতাদের একজন আশাশুনির লতিকা সরকার। মহাজনের দাবি তার কাছে এখনও পাওনা সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা। একইভাবে শর্তে নিয়েছিলেন স্কুল শিক্ষক তাপস চক্রবর্তী। ঋণ শোধের পরও মহাজন তার উপর চাপিয়ে দিয়েছেন বাড়তি ২৪ লাখ টাকার দেনা।

ওই গ্রামের কুন্দুড়িয়া হাইস্কুলের শিক্ষক তাপস চক্রবর্তী জানান, 'তিনি নিজের কিডনি জটিলতা এবং মেয়ের অসুস্থতার কারণে টাকার প্রয়োজনে গ্রাম্য মহাজন নাজমা বেগমের কাছ থেকে শতকরা মাসিক ১০ টাকা সুদে সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ২০১০ সালে। পর্যায়ক্রমে তিনি শোধ করেছেন সাত লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতি লাখে একটি করে খালি চেক এবং নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করে দেওয়া হয়েছিল মহাজনের কাছে। মহাজন নাজমা বেগম এখন এই খালি চেকে ২৪ লাখ টাকা বসিয়ে আমার উপর চাপ দিচ্ছেন। এমনকি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন'। হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'কোথায় পাবো ২৪ লাখ টাকা'।

ওই গ্রামের বাবু লাল অধিকারীর স্ত্রী লতিকা অধিকারী জানান, 'তিনি দুটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন নাজমা বেগমের কাছ থেকে। দৈনিক এক হাজার টাকা শর্তে ৭৬ হাজার টাকা সুদ দিয়েছেন ৭৬ দিনে। ঋণের বিপরীতে কয়েক বছরে তিনি সাড়ে ৬ লাখ টাকা পরিশোধও করেছেন। এখন নাজমা বেগমের দাবি, তাকে আরও সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে'।

এই নিয়ে পারিবারিক অশান্তির জেরে লতিকা বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তিনি জানান, 'তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন নাজমা। রোজই তার বাড়িতে যেয়ে টাকার তাগিদ দিচ্ছেন। তার হুমকির মুখে তার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। এমনকি ২ ফ্রেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় পরিক্ষায়ও সে যাতে যেতে না পারে সেই হুমকিও দিয়েছেন নাজমা ও তার স্বামী'।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, 'নিরীহ ও দরিদ্র এসব পরিবারের উপর নাজমা ও রশিদ দম্পতির মহাজনী নির্যাতন চরমে উঠেছে। মহাজনরা তাদের গরু ছাগল ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তাদের ছেলেমেয়েদের ধরে নিয়ে টাকা উশুল করে নেবেন বলে হুমকি দিয়েছে'।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান, 'নাজমা বেগমের মহাজনী দাপট চরমে ওঠায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিয়ে আমি বৈঠক করেছি। উভয়পক্ষকে কিছুটা শর্ত দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার পরামর্শও দিয়েছি। এ ঘটনার পর থেকে মহাজন নাজমা বেগম পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছি না'।

তিনি আরও বলেন, 'ঋণগ্রহীতা পরিবারের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।

মহাজনী কারবার এবং ঋণের বেশি টাকা আদায় ও জমি দখল সম্পর্কে জানতে মহাজন নাজমা বেগমের মোবাইলে বারবার ফোন করে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার স্বামী আবদুর রশীদকেও পাওয়া যায়নি।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ