• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আত্মগোপনে, ৯ বছর পর যুবক উদ্ধার

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১  

অপহরণ মামলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নয় বছর ধরে আত্মগোপনে থাকা এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আজ বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাসেল মৃধা নামের ওই যুবককে আদালতে হাজির করা হবে। এর আগে সোমবার রাতে ঢাকার রায়েরবাগ এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করেন মামলার বিবাদীরা। পরদিন সকালে তাকে গৌরনদী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অভিভাবকরাই রাসেলকে আত্মগোপনে রেখে অপহরণ মামলা দায়ের করেছিলেন।

ওই মামলায় জেল খাটা বরিশাল গৌরনদী উপজেলার বাসুদেবপাড়া গ্রামের নোয়াব আলী মৃধার ছেলে এস রহমান মৃধা জানান,  পার্শ্ববর্তী নলচিড়া ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামের জনৈক জালাল মৃধার সঙ্গে তার পূর্ব বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরে জালাল মৃধা তাকে এবং তার পক্ষের লোকজনকে ঘায়েল করতে বিভিন্ন সময় একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি বলেন, ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তিনি ও তার দুই ছেলেসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ এবং লাশ গুমের অভিযোগ করেন জালাল মৃধার স্ত্রী মোসাম্মৎ মরিয়ম।

আদালত অভিযোগটি গৌরনদী মডেল থানাকে মামলা হিসেবে নিতে বলেন। এরপর কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তার হাত ঘুরে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গৌরনদীর সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন এসআই মো. ফোরকান হাওলাদার।

অভিযোগ রয়েছে, এসআই ফোরকান বাদীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে দায়সারা তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন। ফলে মিথ্যে মামলায় এস রহমান মৃধা ও তার পক্ষের চারজনকে জেল খাটতে হয়েছে।

এস রহমান মৃধা আরও বলেন, সোমবার জানতে পারি মামলার বাদী মরিয়মের ছেলে রাসেল ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।

এদিকে জামিনে মুক্ত হওয়া মো. মবিন ভূঁইয়া বলেন, হয়রানিমূলক এ মামলায় গত নয় বছরে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সঠিক তদন্ত ছাড়া আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন। বাদী ও মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।

তবে আর্থিক সুবিধা নিয়ে চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা ফোরকান। বর্তমানে সরিকল তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) তিনি।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে সেটি সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই দেওয়া হয়েছিল। আর এখন বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার।

এই পুলিশ কর্মকর্তার তথ্যানুযায়ী, জালাল মৃধার স্ত্রী মোসাম্মৎ মরিয়ম অভিযোগ করেন, তার ১৪ বছরের ছেলে রাসেলকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। মামলায় তিনি প্রতিবেশী এস রহমান মৃধা (৫৫), তার ছেলে আরমান মৃধা (২৬), রায়হান (২৩), স্থানীয় শাহীন মল্লিক (৩০), হক ভূঁইয়া (৭০), তার ছেলে মবিন ভূঁইয়াসহ (২৮) ১৩ জনকে আসামি করেন।

মামলার তদন্তকালে ১২ জনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতেই ২০১৩ সালে এজাহারভুক্ত ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, মামলাটি দায়েরের সময় রাসেলের বয়স ছিল ১৪ বছর। নয় বছর পর এখন তার বয়স ২৩। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন,  গৌরনদী থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে যান তিনি। যাত্রাবাড়ীতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ