• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

কারাগারে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থার অগ্রগতি কী : হাই কোর্ট

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২১  

কয়েদি শনাক্তে আঙুলের ছাপ, হাতের তালুর ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি যুক্ত করে দেশের কারাগারগুলোতে বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনা চালুর অগ্রগতি জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। কারা মহাপরিদর্শক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে এ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। রুল শুনানিতে বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনা চালু সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর রোববার এ আদেশ দেয় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রুলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন।

শিশির বলেন, “একটি রিপোর্ট দাখিল করে সরকার বলেছে, তারা এ ব্যপারে কাজ করছে। তখন আদালত আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।”

ডেপুটি অ্যটর্নি জেনারেল বলেন, আদালত একটা রুল জারি করেছিলেন। আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে অনেকগুলো তারিখ গেছে। বিবাদিদের কেউই রুলের জবাব দেননি। সর্বশেষ চলতি মাসের প্রথম দিকে আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেছিলেন, যদি বিবাদিরা রুলের জবাব না দেয় তাহলে আমরা আদেশ দিতে বাধ্য হব।

“এরপর আমি অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে বিবাদিদের সাথে যোগাযোগ করে কথা বলি। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকে যাবতীয় নথিপত্র দিয়ে জবাব দিলেন। আর আইন সচিব বললেন, এটা (বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনা চালু) উনার দপ্তরের কাজ না। এরপর আদালত আইন সচিবকে রুল থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ”

কেরানিগঞ্জ, কাশিমপুর ও নারায়ণগঞ্জ কারাগারে পিআইডিএস চালু হবে

কারাগারে বন্দিদের ডেটাবেইজ তৈরির বিষয়ে করা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের একটি চিঠি দেয়। আদালতের রুলের জবাবে সে চিঠিটও যুক্ত করা হয়েছে। 

সে চিঠিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও কারা অধিদপ্তরের মধ্যে সভায় প্রিজন ইনমেট ডেটাবেইজ সিস্টেম (পিআইডিএস) চালুর সিদ্ধান্ত হয়।

সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের ন্যাশনাল টেলিকিমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ও  কারা অধিদপ্তরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

ইতিমধ্যে এনটিএমসিতে পিআইডিএসর সার্ভার সংশ্লিষ্ট হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার স্থাপন করা হয়েছে। পিআইডিএস প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কেরানীগঞ্জ, কাশিমপুর ও নারায়ণগঞ্জ কারাগারে কার্যক্রম শুরু হবে। প্রকল্পের কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেল কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহায়তা এবং মূল্যবান মতামত প্রয়োজন। এ লক্ষে্য জেল কর্তৃপক্ষের পক্ষে থেকে একটি সমন্বয়কারী দল গঠন করে এনটিএমসিকে অতিসত্ত্বর অবহিত করার জন্য অনুরোধ হরা হল।

ওই চিঠিতে কারা অধিদপ্তরের সদর দপ্তর ও জেলাসমূহের সাথে এনটিএমসির নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপনের জন্য বিডিকম লিমিটেডকে কার‌্যাদেশ দেওয়ার কথাওেউল্লেখ করা হয়েছে।

আইন কর্মকর্তা বলেন, জেলখানার কয়েদিদের বায়োমেট্রিক বা ইলেক্ট্রনিক ডেটাবেইজ তৈরি যতেষ্ট কাজ ইতিমধ্যে হয়েছে এবং কাজ চলমান। এ জবাবে আদালত সন্তুষ্ট। কিন্তু আদালত বিষয়টা মনিটরিং করবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর আদালত এর অগ্রগতি জানতে চাইবে।

চট্টগ্রামে এক হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজায় দণ্ডিত কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীর পরিবর্তে মিনু আক্তার নামের এক বিধবার প্রায় তিনবছর সাজা খাটার মামলার শুনানিতে গত ২৮ জুন হাই কোর্ট রুল দেয়।

কয়েদি শনাক্তে অঙুলের ছাপ, হাতের তালুর ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি যুক্ত করে দেশের কারাগারগুলোতে বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনা চালু করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজেসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সে রুল শুনানিতেই অগ্রগতি প্রতিবেদন চাইল হাই কোর্ট। এদিকে আড়াই মাস আগে আরেকটি মামলার রায়ে হাই কোর্ট আসমি সনাক্তে বায়োমেট্রিক ডেটাবেইজ চালুর তাগিদ দিয়েছে।  গত ৯ সেপেটম্বর রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেয়।

ওই রায়ে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গ্রেপ্তারের পর আসামির সম্পূর্ণ মুখের ছবি ধারণ করতে হবে। শনাক্তকরণ পদ্ধতিতে বিদ্যমান শনাক্তকরণ ফরমে আসামির সম্পূর্ণ মুখের ছবি যুক্ত করার বিধান প্রবর্তন করতে হবে এবং তা কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ করতে হবে। দেশের সব কারাগারে আঙুলের ছাপ (ফিংগার প্রিন্ট), হাতের তালুর ছাপ (পাম প্রিন্ট) ও চোখের মণি (আইরিশ) স্ক্যানিং ব্যবস্থাযুক্ত বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ