• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

জাতির ঋণ শোধ : বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ কয়েকটি মাইলফলক বিচার সম্পন্ন

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২১  

স্ব‍াধীনতার ৫০ বছরে দেশের বিচার বিভাগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। আস্থা বেড়েছে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের। এখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের সঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইন ও বিচার বিভাগ একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বিচার পাওয়ার ধারায় ফিরে এসেছে বিচার সংস্কৃতি। গত ৫০ বছরে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীন বিচার বিভাগ। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জাতির জনকের কলঙ্কময় হত্যাযজ্ঞের বিচার, জাতীয় চার নেতা হত্যা এবং গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচারের মতো বেশ কিছু মাইলফলক বিচার অর্জিত হয়েছে। আর এসব মামলার বিচারের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের দায়ও মোচন করে দিয়েছে বিচার বিভাগ। যখনই সংবিধানের ওপর আঘাত এসেছে তখনই রুখে দেয়ার চেষ্টা করেছে বিচার বিভাগ।

বাংলাদেশ বিচার বিভাগের ইতিহাস প্রায় হাজার বছরের পুরনো। সুদীর্ঘকাল যাবত ভারতীয় বিচার বিভাগের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনের ফলে আজকের বিচার বিভাগ এই পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ল’স কন্টিনিউএন্স এনফর্সমেন্ট অর্ডার, ১৯৭১ পাস করা হয়, যার ফলে ২৫ মার্চ, ১৯৭১-এর পূর্বে পাস করা সকল আইন বাংলাদেশে বলবত হয়ে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭৪০টি আইন, ৫০৭টি অধ্যাদেশ এবং বহু রেগুলেশনের মাধ্যমে বিচার বিভাগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পুরনো আইনগুলো যুগোপযোগী করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে আইন কমিশন।

বাহাত্তরের সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। খন্দকার মোশতাকের সামরিক শাসন জারির ধারাবাহিকতায় জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক ফরমান জারি করে তা সংশোধন করা হয়। সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বিচারপতিদের অপসারণ করবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সংসদের হাতে পুরনো সেই ক্ষমতা দিয়ে ষষ্ঠদশ সংশোধনী আনে। পরবর্তীতে তা হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগ অবৈধ ঘোষণা করে। বর্তমানে আপীল বিভাগে বিষয়টি রিভিউ শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ১৯৮৬ সালের ১১ নবেম্বর জাতীয় সংসদে সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে এরশাদের ওই সামরিক শাসনের বৈধতা দেয়া হয়। ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট এ সংশোধনীকে আদালত অবৈধ ঘোষণা করে। অন্যদিকে এরশাদ আমলে হাইকোর্টের ছয়টি বেঞ্চ ঢাকার বাইরে স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠনের বিষয়টি বাতিল করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রীমকোর্ট সূত্রে জানা গেছে, বিচার বিভাগের যা উন্নয়ন তা হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। এ সময়ের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা, গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের দায়ও মোচন করে বিচার বিভাগ। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাধীনতার পর আইন অঙ্গন ও বিচার বিভাগে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিচার ব্যবস্থাকেন্দ্রিক যত উন্নয়ন হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসন ক্ষমতাকে অবৈধ ঘোষণা করে ঐতিহাসিক রায় দেন সুপ্রীমকোর্ট।

৫০ বছরে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে বিচার বিভাগেও। আইনের শাসন ও সংবিধান রক্ষায় সোচ্চার বিচার বিভাগ। করোনাকালীন আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা ঘরে বসেই ভার্চুয়ালি পেয়েছেন বিচারিক সুবিধা। সংবিধানের ওপর কোন আঘাত আসলে রুখে দেয়ার চেষ্টা করেছে বিচার বিভাগ। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুপ্রীমকোর্ট উদ্ধোধন করেন। সেই থেকে প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রীমকোর্ট দিবস পালিত হয়ে আসছে। ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ৫ নং আদেশ অর্থাৎ ‘দ্য হাইকোর্ট অব বাংলাদেশ অর্ডার ১৯৭২’ জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ হাইকোর্ট। ১৬ আগস্ট ১৯৭২ সালের হাইকোর্টের আপীল বিভাগ গঠন করা হয় এবং কার্যক্রম শুরু হয়। ১১ জানুয়ারি ‘দ্য প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার’ ১৯৭২ জারি করা হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিচারপতি সায়েমকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে মাত্র ৫ জন বিচারপতি নিয়ে বিচার কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে ২১ জানুয়ারি ৪ জন, ২৬ জানুয়ারি ১ জন ও ২৯ আগস্ট আরও ১ জন বিচারপতি কাজ শুরু করেন। বর্তমানে সুপ্রীমকোর্টে আপীল ও হাইকোর্টে বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৭ জন। পাশাপাশি নিম্ন আদালতে বিচারকের সংখ্যা ১৯ শতাধিক। পাশাপাশি বেড়েছে আদালতের সংখ্যাও। স্বাধীনতার পর বিচার বিভাগের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় এসেই বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার উদ্যোগ নেন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের পর দ্রুত সময়ে প্রণয়ন করা হয় একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান। ৫০ বছরে সংবিধান কাটাছেঁড়া হয়েছে ১৭ বার। সামরিক শাসকরা সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তমসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর মাধ্যমে যে অপরাধ করেছিল সর্বোচ্চ আদালত সেই সকল সংশোধনী বেআইনী ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী খুনী মোশতাক, জিয়া, ও এরশাদকে তস্কর, রাষ্ট্রদ্রোহী ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। তাদের অবৈধ সকল কর্মকা-কে বেআইনী ঘোষণা করেছে।

তবে বিচার বিভাগের অন্ধকার যুগ হচ্ছে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। সামরিক শাসকদের এই সময়টায় বিচার বিভাগ স্বাধীন ছিল না। ১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর খালেদ মোশাররফ, শাফায়াত জামিল এবং অভ্যুত্থানকারী কতিপয় সেনা অফিসারের অনুরোধে ৬ নবেম্বর বিচারপতি সায়েমকে দেশের ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায় প্রথম ‘সিটিং’ বিচারপতিদের প্রবেশ ঘটে। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি সংসদ ও মন্ত্রিপরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে সারাদেশে সামরিক আইন জারি করেন এবং নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ নবেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন এবং সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করেন। এর মধ্যদিয়ে বিচারপতিদের ওপর ভর করে দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন সামরিক বাহিনীর প্রধান।

১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সেনা প্রধান জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন এবং বিচারপতি সায়েম অবসর গ্রহণ করেন। এরপর চার বছর ৩৯ দিন চলে জিয়ার শাসনামল।

জিয়ার মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন জিয়ার নিয়োগকৃত সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। সাত্তার বিচারপতি হলেও তিনি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত। পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে আব্দুস সাত্তার প্রেসিডেন্ট হলেও সেনাপ্রধান এরশাদের কারণে খুব বেশি দিন ক্ষমতায় টিকতে পারেননি। দেশের শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে এইচ এম এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতয় নিয়ে আসেন বিচারপতি আ ফ ম আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে। দুর্ভাগ্য বিচারপতি সাত্তারের, তিনি মাত্র ২৯৮ দিন ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন।

তবে বিচারপতি আ ফ ম আহসান উদ্দিন চৌধুরীর ভাগ্যও সুপ্রসন্ন ছিল না। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের এক বছর ২৫৮ দিনের মাথায় তার কাছ থেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দখল করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দীর্ঘ ছয় বছর ৩৬০ দিন চলে এরশাদের সরাসরি শাসনামল। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতন হলে তিন দলীয় জোটের রূপরেখা অনুযায়ী বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ রাষ্ট্রপতি হন।

রাষ্ট্রক্ষমতায় বিচারপতিগণ থাকলেও তারা স্বৈরশাসকদের কাছে স্বাধীন ছিলেন না। বিচার বিভাগও ছিল না স্বাধীন। স্বৈরশাসকেরা বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়নি। মূলত স্বৈরশাসকদের সময়টাই বাংলাদেশের বিচার বিভাগের কালো অধ্যায়। নব্বইয়ের পর দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নটি আলোচনায় উঠে আসে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর থেকে বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়েছে। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগ পৃথক করার পর দেশের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ওপর বিচার বিভাগের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পরিবর্তে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারকাজ পরিচালনা করছেন। এটা বিচার বিভাগ পৃথক করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও বিগত ১৪ বছরেও তার কোন অগ্রগতি হয়নি। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করার লক্ষ্যে ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার আদেশ দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্ট ।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার পর বিচার বিভাগের উন্নয়ন অনেকটা থমকে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বহু আইন সংস্কার করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনী ব্যবস্থা থেকে শাস্তি এড়ানোর জন্য বাংলাদেশে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খন্দকার মোশতাক আহম্মেদ এ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এর ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নবেম্বর ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তারকা খচিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার : যুদ্ধাপরাধী মামলা ছাড়াও উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতগুলোতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যার বিচার, সিলেটের শিশু রাজন হত্যা, খুলনার শিশু রাকিব হত্যা, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলা, জাপানী নাগরিক কুনিও হোশির হত্যা মামলা, সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ হত্যা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ঈশ্বরদীতে বোমা হামলা, গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে বোমা হামলা, পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা, তারেক রহমানের দুর্নীতির মামলা, গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের দুর্নীতির মামলা, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী রিশা হত্যা মামলা, সড়ক দুর্ঘটনায় দিয়া খানম মিম ও রাজীবের মামলা, গাইবান্ধার এমপি লিটন হত্যা মামলা, ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যাসহ অসংখ্য আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। যা সবার কাছে প্রশংসনীয় হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল উচ্চাভিলাষী সদস্যের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধাদেশ জারি করে তদানীন্তন সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার পথ রুদ্ধ করে দেয়। অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খন্দকার মোশতাক আহম্মেদ এ ইনডেমনিটে (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। ২০১০ সালে ফেব্রুয়ারিতে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এর ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নবেম্বর ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। হাইকোর্টে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানিতে ৭ বিচারপতি বিব্রতবোধ করেন। যার কারণে বিচারকাজ অনেকটাই পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ১৯ নবেম্বর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া পাঁচ আসামির আপীল খারিজ করে। ফলে হাইকোর্টের দেয়া ১২ খুনীর মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল থাকে। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বজলুল হুদা, ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, একেএম মহিউদ্দিন ও মহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল আব্দুল মাজেদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। এখনও ৫ আসামি পলাতক রয়েছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার : নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে। এই অবিস্মরণীয় বিজয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতি মহাজোটোর অঙ্গীকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৯ জানুযারি জাতীয় সংসদে দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইব্যুনালস ) আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী। সেই অনুযায়ীই ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার কথা বিবেচনা করে ২০১২ সালে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ৪৩টি মামলায় মোট ১১৭ আসামির মধ্যে ১০৪ জন রাজাকারকে বিভিন্ন মেয়াদে দন্ড প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে ৭০ জনকে। যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে ৪ জনকে। আমৃত্যু কারাদন্ড হয়েছে ২৪ জনের। ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে ৬ যুদ্ধাপরাধীর। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী নেতা এটিএম আজাহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের রিভিউ আপীল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া আপীল বিভাগে ২৭টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রধান বিচারপতির কারাদন্ড: দেশের ইতিহাসে প্রথম কোন প্রধান বিচারপতিকে দুর্নীতির দায়ে দন্ড প্রদান করা হয়েছে। গত ৯ নবেম্বর ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় পদত্যাগ করা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাকে পৃথক দুটি ধারায় ১১ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। অর্থ পাচারের দায়ে সিনহাকে ৭ বছর কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অর্থ আত্মসাতের দায়ে ৪ বছর কারাদন্ডও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সাজা চলবে একসঙ্গে। এছাড়া এস কে সিনহার ৭৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াফত করা হয়েছে। আইনজীবীগণ বলেছেন, এ রায়ের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে কেউই আইনের উর্ধে নয়।

বিচারকের দেশ ত্যাগ : ২০১৩ সালের ১৭ নবেম্বর ঘুষ হিসাবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। তবে তারেকের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর কারাদ-ের পাশাপাশি ৪০ কোটি টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়। ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মোঃ মোতাহার হোসেন এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করার প্রায় চার বছর পর এ মামলার রায় হয়। ওই রায় ঘোষণার পর তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান।

সংবিধানবিরোধী পর্যবেক্ষণ : চলতি বছরের ১১ নবেম্বর রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনের সবাইকে খালাস দিয়েছেন আদালত। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়। ৭২ ঘণ্টা পার হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। শেষ পর্যন্ত ওই বিচারক বেগম কামরুন্নাহারকে বিচারিক কর্মকান্ড থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। সর্বশেষ ২২ নবেম্বর রেইনট্রি হোটেলে শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলায় সাবেক বিচারক মোছাঃ কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে (সিজ) নেয় আপীল বিভাগ। ওই বিচারক সুপ্রীমকোর্টে হাজিরের পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপীল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বিচারকাজ থেকে বিরত : বিচারিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়নি ২৭ মাসেও। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট তাদের বিচারকাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বিচারকাজ থেকে প্রত্যাহার হওয়া হাইকোর্টের ওই তিন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক। ওই তিন বিচারপতি বিচারকাজে না থেকেও বেতন-ভাতা, আবাসন, যানবাহনসহ আনুষঙ্গিক সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) বিচারাধীন। রিভিউ নিষ্পত্তি হবার পরই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

ষোড়শ সংশোধনী : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপীল বিভাগের দেয়া পুরো রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের শুনানি শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপীল বিভাগ। ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর এই আবেদন দায়েরের পর কেটে গেছে চার বছর। অসামর্থ্য ও অযোগ্যতার কারণে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিয়ে সংশোধনীটি করা হয় ২০১৪ সালে। এর আগে এ ক্ষমতা ছিল সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে। এর পর সংশোধনীটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন নয় আইনজীবী। পরে হাইকোর্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংশোধনীটি বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করে। আপীল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে দেয়া রায় ২০১৭ সালে বহাল রেখে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করেন।

স্বাধীনতার ৫০ বছরের বিচার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহেম্মেদ বলেন, নিঃসন্দেহে বলা যায় বিচার বিভাগের উন্নতি হয়েছে। কারণ হলো বিচারকের সংখ্যা বেড়েছে। আদালত বেড়েছে। অবশ্য মামলাও বেড়েছে। ঠিক তেমনি সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল ডিভিশনে সুন্দরভাবে কাজ চলছে। বলতেই হয় বিচার বিভাগে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবেই চলছে। তিনি আরও বলেন, আগের সরকারের চেয়ে বর্তমান সরকারের সময় বেশি উন্নয়ন হয়েছে। এখন তো নির্বাচিত সরকার। আগে তো নির্বাচিত সরকার ছিল না। একদিকে বলতে হয়, গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। জনগণের প্রতিনিধিরাই সরকার চালাচ্ছে। সেটা অতীতের সরকারের আমলে হয়নি। নির্বিঘ্নে বলা যেতে পারে যে, নিশ্চয়ই সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে।

সুপ্রীমকোর্টের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। স্বাধীনতা পরবর্তী গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এটা ক্রমান্বয়ে বর্তমান আধুনিক সভ্যতায় এসে সম্পূর্ণ রূপে পৃথক বিচার ব্যবস্থার ধারণা গড়ে উঠছে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, তাতেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে মাসদার হোসেন মামলার কারণে এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। এখনও আমলাতান্ত্রিক ধারণা ও রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হতে সময় লাগছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে সামরিক শাসকগণ বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতির জনকের হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে রেখেছিল। কারা অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছিল। সেই সামরিক স্বৈরশাসকদের কারণে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পিছিয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মাধ্যমে আবার বিচার বিভাগকে মুক্ত পথে চলার সুযোগ করে দেন। দিনে দিনে বিচার বিভাগ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বলা যায় উন্নত দেশের বিচার ব্যবস্থার পথে হাঁটছে।

বিচার দ্রুত নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ : বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দ্রুত সময়ে বিচার নিশ্চিত করা। ৫০ বছরে উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতে পাহাড়সম মামলা জট বেঁধেছে। সারাদেশে প্রায় ৪০ লাখ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। পাহাড়সম মামলা নিষ্পত্তি করতে হলে উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতে আরও বিচারক নিতে হবে। পাশাপাশি আদালতের অবকাঠামো এবং আদালতে লোকবলও নিতে হবে। তা না হলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে না। একই সঙ্গে এডিআরএর দিকেও নজর দেয়া।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপাতি মোঃ নিজামুল হক নাসিম বলেছেন, আজকের বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অনিষ্পত্তিকৃত মামলাসমূহ। যার সংখ্যা ৪০ লাখের মতো। আমাদের দেশে বিচারকদের সংখ্যা অনেক কম। ফলে এই অতিরিক্ত মামলাসমূহ ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মামলাসমূহ নিয়মিত করতে হলে অবশ্যই বিচারকদের সংখ্যা এবং তদন্ত কর্মকর্তাসহ বিচার ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদে অনেক লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন। তা না হলে যতই চেষ্টা করি না কেন এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। বর্তমানে আরেকটি নতুন আইন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট নামে পরিচিত। এই আইনটি প্রয়োগের ব্যাপারে সবাই যদি সাবধান হয় এবং জামিন দেয়ার ক্ষমতা যদি আদালতকে পরিপূর্ণভাবে দেয়া হয় তাহলে এই আইনটি আমাদের উপকারে আসতে পারে। একজন ভদ্র লোককে যদি মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে অপমানিত করা হয় তবে তার প্রতিবিধানে এই আইনটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।

১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রীমকোর্ট প্রতিষ্ঠার পরে বাংলাদেশে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। আজকে ৫০ বছর পরে হিসাব করলে দেখা যাবে, বিচার ব্যবস্থা উন্নয়নে এই সময়ে যথেষ্ট কাজ হয়েছে। সঙ্গে কিছু ব্যর্থতাও আছে। অনেক বিখ্যাত মামলা এই সময়ে নিষ্পন্ন হয়েছে। উচ্চ আদালত ঠিকভাবেই তাদের ওপর সংবিধানের অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে সামান্য কিছু বিচ্যুতিও উঠে এসেছে। বিশেষ করে দুই সামরিক শাসনের সময় বিচারপতিরা কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছেন এই বিষয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন বিদ্যমান। তদুপরি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনের যে উন্নয়ন এবং ব্যবহার হয়েছে, বিশেষ প্রয়োজনে নতুন আইন তৈরিও হয়েছে। এই আইনসমূহ দেশের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট অবদান রেখেছে। যেমন বিশেষ ক্ষমতা আইন, নারী নির্যাতন আইন, শিশুর বিচার ব্যবস্থা এবং একে অন্যের অন্যায় আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট ইত্যাদি আইনসমূহ উল্লেখযোগ্য। এ আইনসমূহের কিছু সমালোচনাও বর্তমান।

নারী নির্যাতন আইন একটি যুগোপযোগী এবং জনগণের উপকারে আসা আইন। দীর্ঘদিন যাবত এ দেশে নারীগণ বিভিন্নভাবে সমাজের নেতৃবৃন্দের হাতে এবং তার নিজের পরিবারে নিগৃহীত হতো। এটা নিয়ে এদেশের নারী সমাজ দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে, যার ফলে এই নারী নির্যাতন আইন করা হয়। আজকের দুনিয়ার বাস্তবতায় দেশে এই আইনটির মাধ্যমে নারী সমাজ তাদের ওপর অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারছে এবং মামলা করে ন্যায়বিচার আদায় করতে পারছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ