• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বিচার বিভাগে দুষ্ট ক্ষত প্রশ্রয় দেব না: প্রধান বিচারপতি

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২ জানুয়ারি ২০২২  

মামলা জট নিরসন তথা বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে ৮ বিভাগের জন্য একজন করে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিকে প্রধান করে একটি করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে।

রোববার (০২ জানুয়ারি) অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া সংবর্ধনার জবাবে বক্তব্য দিতে গিয়ে একথা জানিয়েছেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষে সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল লিখিত বক্তব্য পাঠ করে সংবর্ধনা দেন।

সংবর্ধনার জবাবে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, সকল আইনজীবী, সকল স্তরের বিচারক, সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাষ্ট্রের অপর দুটি বিভাগের সক্রিয় সহযোগিতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া আমার ওপর অর্পিত এই পবিত্র দায়িত্ব সফলভাবে পালন করা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, বার ও বেঞ্চ হলো একটি পাখির দুটি ডানা। আর জুডিসিয়ারি হলো সমস্ত দেহ। পাখা দুটি সমানভাবে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এই দেশের সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যেতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। বারের সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই কোর্ট পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

বিচার বিভাগের সমস্যা সম্পর্কে সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, সর্বস্তরে মামলার অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, আদালত অনুপাতে বিচারকার্যে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, বিচার বিভাগে ডিজিটালাইজেশন, আধুনিক বিচার প্রশাসন কৌশল প্রণয়ন, উন্নত প্রশিক্ষণ, বিচার কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের যোগান, রাষ্ট্রের আর্থিক সক্ষমতার নিরিখে বিচারকদের প্রয়োজনীয় দাবি পূরণসহ আরও যে সকল বিষয় রয়েছে, সে সম্পর্কে আমি সজাগ ও সচেতন রয়েছি।

বিচার বিভাগের অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আন্তরিকভাবে কাজ করলে অবশ্যই সমস্যাগুলোর সমাধান করা যাবে বলে মনে করেন নতুন প্রধান বিচারপতি।

রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনটি অঙ্গের একটি অঙ্গ যদি দুর্বল বা সমস্যাগ্রস্ত হয় তাহলে রাষ্ট্রটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হতে পারে না। সে কারণে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের অপর দুটি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রের সকল বিভাগ ও ব্যক্তিকে অবশ্যই বার বার স্মরণ করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক সভ্যতা পরাজিত হবে।

বিচারকের স্বল্পতা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রায় আঠারো কোটি মানুষের এই দেশে মাত্র এক হাজার নয়শ জন বিচারকের কাঁধে যে বিপুল পরিমাণ মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে, তা বিচার বিভাগের জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয়। আমার দায়িত্বভার গ্রহণের সূচনালগ্নে সকল স্তরের বিচারকদের আহ্বান জানাবো—আসুন কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে বিচার প্রার্থীর প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা দিয়ে অধিক পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হই। এটি হবে বিচার বিভাগের জন্য মামলার জট থেকে মুক্তির যুদ্ধ।

মামলা জট নিরসনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, দেশের সকল অধস্তন আদালতে মামলা জট নিরসন তথা বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে ৮টি বিভাগের জন্য একজন করে বাংলদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিকে প্রধান করে একটি করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। প্রতিমাসে আমি তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন গ্রহণ করবো। পুরাতন মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিষ্পত্তির বিষয়ে সুপারভাইস এবং মনিটরিং করা হবে। সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারিক সময় ও দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রত্যেক বিচারককে মামলা নিষ্পত্তির অভূতপূর্ব অভিযাত্রায় অগ্রসেনানী হওয়ার এক ইতিবাচক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।

দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগে কোনো দুষ্ট ক্ষতকে আমরা ন্যূনতম প্রশ্রয় দেবো না। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের সকল শাখাসমূহের অস্বচ্ছতা, অনিয়ম, অলসতা এবং অযোগ্যতাকে নির্মূল করতে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণে সকলকে পাশে পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে নতুন প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শপথবাক্য পাঠ করান।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ