• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ডিআইজি মিজানের সাজা বাড়াতে হাইকোর্টে রুল জারি

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২২  

ঘুষ লেনদেনের মামলয় ৩ বছরের দণ্ডিত পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের দণ্ড কেন বৃদ্ধি করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। দুদকের আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো.ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেছেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো.খুরশীদ আলম খান। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ মামলায় রায় দেন।

রায়ে দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৮ বছর ও পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে ৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এর মধ্যে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মিজানকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ও বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬৫(এ) ধারায় ৩ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে মানি লন্ডারিং আইনের ৪ ধারায় বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাছিরের ২টি দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে তাকে ৫ বছর দণ্ড ভোগ করতে হবে৷ তবে দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় উভয়ে দোষী সাব্যস্ত হলেও একই ধরনের অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ায় এ ধারায় কাউকেই সাজা দেওয়া হয়নি।

এরপর দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন মিজানুর রহমান ও খন্দকার এনামুল বাছির। এছাড়া মিজানুর রহমানকে অর্থ পাচার আইনে খালাসের বিরুদ্ধে ও আপিল করে দুদক।

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, দণ্ড বিধি অনুসারে মিজানুর রহমানকে ৩ বছরের সাজা দিয়েছেন। কিন্তু দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তাকে সাজা দেওয়া হয়নি। এ ধারায় ৭ বছরের সাজা আছে। তাই দুদক সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করেছে।

গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী শুনানি করেন। অপরদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাছিরের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি রায় দেন।

৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের একই কর্মকর্তা।

গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর তিনি মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেন। গত বছর ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।

এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে ৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।

এরপর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ মানি লন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তারর করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে। অন্যদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ডিআইজি মিজানকে এ মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ