• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

পূর্ণাঙ্গ রূপ পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২২  

পূর্ণাঙ্গ রূপ পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি। এ জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি (পর্যায়-২) শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৯ কোটি ৯১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ বাগবেড় মৌজা) এবং কালিয়াকৈর (হরিরাউৎপুলকার মৌর্জা, গাজীপুরে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ফিল্ম সিটি নির্মাণের জন্য শুটিং স্পট ও ফ্লোর নির্মাণ, শুটিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, পোস্ট প্রোডাকশন স্টুডিও স্থাপন এবং শিল্পী-কলাকুশলি ও পর্যটকদের জন্য আবাসন সুবিধা সৃষ্টি হবে।

ফিল্ম সিটিতে আগত দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য ইকোপার্ক ও ল্যান্ডস্কেপিংসহ থ্রিডি ও সেভেন ডি থিয়েটার এবং ফোর কে রেজুলেশনের সিনেপ্লেক্স থিয়েটার এবং শিল্পের প্রতি আকর্ষণ ও আগ্রহ সৃষ্টি করা হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, ‘উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাতারা বিদেশে শুটিংয়ের পরিবর্তে বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটিতে আউটডোর ও ইনডোর শুটিং করতে পারবেন। এখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ ও চলচ্চিত্র জাদুঘর নির্মাণের ফলে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে। কটেজ, থ্রিডি সিনেপ্লেক্স, সেভেন ডি থিয়েটার ইত্যাদি নির্মাণ হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকগণ প্রকল্প এলাকা ভ্রমণে আগ্রহী হবেন। আধুনিক সুযোগ সুবিধা শুটিং স্পট, ফ্লোর, যন্ত্রপাতি ও স্টুডিও ইত্যাদি নির্মাণ হলে উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব হবে। ফলে দর্শকদের সিনেমা হলে যাওয়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।’

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।’

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে— চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে প্রাদেশিক সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন বিল উত্থাপনের মাধ্যমে বিএফডিসি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর প্রায় সাড়ে ৭ একর নিজস্ব জমিতে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয় যা মূলত ইনডোর শুটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু চলচ্চিত্রের আউটডোর শূটিংয়ের জন্য একটি ফিল্ম সিটি প্রতিষ্ঠা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দীর্ঘদিনের চাহিদা ছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণের সময় বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি ঘোষণা দেন। প্রকল্পটি ১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের অক্টোবর হতে ২০১৭ সালের জুনে প্রথম পর্যায়ে নেওয়া হয় যা ২০১৮ সালের জুনে সমাপ্ত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম সিটি তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে।

উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এফডিসিতে সব ধরনের শুটিং সুবিধা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে আউটডোর শুটিং সুবিধা নেই তাই চলচ্চিত্রের পুরো টিম নিয়ে দূরবর্তী কোনো স্থানে কিংবা বিদেশে গমন করতে হচ্ছে। এ জন্য বিএফডিসিতে সময়োপযোগী ফিল্ম সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটির প্রস্তাবিত বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মিত হলে ছবির নতুন দৃশ্যায়নের জন্য তা আকর্ষণীয় হবে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রায় ১৫ বছর আগে ডিজিটাল টেকনোলজিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং সফল হয়েছে। যা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা যায়। এ শিল্পে প্রতিবছর বিপুল অর্থ টার্নওভার হয়ে থাকে এবং প্রায় ২ লাখ লোকবলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।

বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ, চলচ্চিত্র জাদুঘর নির্মাণ, পর্যটকদের আবাসনের জন্য কটেজ নির্মাণ এবং থ্রি-ডি সিনেপ্লেক্স ও সেভেন ডি- থিয়েটার নির্মাণের ফলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। এই ফিল্ম সিটির মাধ্যমে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিও পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি (পর্যায়-১) শীর্ষক প্রকল্প ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের জুনে ২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ৪৬ শতাংশ জমি ক্রয়, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, ফিল্ম সিটির সম্ভাব্যতা যাচাইসহ অন্যান্য কাজ করা হয়েছে।

প্রকল্পটির প্রকৃত ব্যয় ১৮ কোটি ৭০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এরমধ্যেই বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকল্পটি সমাপ্তি প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলো হলো— ২টি শুটিং স্টুডিও, এন্ট্রি রোড, কাস্টম শুল্ক, ক্যাবল কার ক্রয়, মাস্টার প্রাইম লেন্স, ডিজিটাল মুভি ক্যামেরা, পরামর্শক, ঝুলন্ত ব্রীজ নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণ, ক্রয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, ডিজিটাল মুভি আর্কাইভিং, আল্ট্রা প্রাইম লেন্স এবং এয়ারকুলার ক্রয়।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ