• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

কোয়ারেন্টাইনে থেকেই নিউটন ‘মহাকর্ষ সূত্র’ উদ্ভাবন করেন!

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২০  

বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবার জীবনই যেন এক ঝটকায় থেমে গিয়েছে! যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানানো হলো বিশ্বব্যাপী মহামারি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ তখন থেকেই বিশ্ববাসীর মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বর্তমানে লক ডাউনের মধ্যে রয়েছে। সেইসঙ্গে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলও বেড়ে চলেছে। পুরো বিশ্ব আজ নিস্তব্ধ! কারণ সবাই করোনার সংক্রমণ এড়াতে ঘরে বন্দী সময় কাটাচ্ছেন! কেউ রয়েছে কোয়ারেন্টাইনে কেউবা আইসোলেশনে। 

তবে যারা আইসোলেশনে রয়েছেন তাদের চেয়ে কম ঝুঁকিতে রয়েছেন কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিরা। কারণ এদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা এই রোগে সংক্রমিত নন তবে ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্যই ঘরে রয়েছেন। তাদের জন্যই আজকের এই লেখাটি। হয়ত ভাবছেন, ঘরে বসে বেকার কী করবেন? সময়কে কাজে লাগাতে শিখুন। জানেন কি? এমন মহামারি থেকে বাঁচতে যখন শেক্সপিয়ার কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন তখন তিনি একটি উপন্যাস লিখে ফেলেন। আবার আইজাক নিউটন তার মহাকর্ষ সূত্রটির উদ্ভাবন ঘটান। শুধু এই দুইজনই নন এই তালিকায় রয়েছেন আরো তিনজন জনপ্রিয় সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব।

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার

কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন সময় উইলিয়াম শেক্সপিয়ার ‘কিং লিয়ার’ লিখেছিলেন। ১৭ শতাব্দীর গোড়ার দিকে লন্ডনে বুবোনিক প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে। এমন সময় জনসমাগম এড়াতে থিয়েটারগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সে সময় প্লেগের কবলে পড়ে শেক্সপিয়রের কিং মেন থিয়েটার ট্রুপের একজন অভিনেতা এবং অংশীদার মারা যায়। মহামারি ছড়িয়ে পড়ার এক সপ্তাহ পর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ এর কোঠায়। এসময় সরকার কর্তৃক বন্ধ হয়ে যায় জনবহুল এলাকাগুলো।

শহরবাসীরা রোগ থেকে বাঁচতে নিজ নিজ ঘরে বন্দী হয় অথবা শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। প্লেগ রোগের বিস্তার বাড়ায় থিয়েটার শিল্পে ধ্বস নামে তখন। ঠিক এই সময়টিই কাজে লাগান অসম্ভব মেধাসম্পন্ন একজন নাট্যকার, কবি ও অভিনেতা শেক্সপিয়ার। তিনিও অন্যান্যদের মতোই সেসময় গৃহবন্দী ছিলেন। সেসময় ঘরে বসে তিনি ‘কিং লিয়ার’ রচনা করেছিলেন। ১৬০৬ শেষ হওয়ার আগেই শেক্সপিয়ার ‘ম্যাকবেথ” এবং ‘অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা’ রচনা করেন।

আইজ্যাক নিউটন

শেক্সপিয়ারের এসব রচনার প্রায় কয়েক দশক পর আবারো প্লেগের আবির্ভাব ঘটে। আইজ্যাক নিউটন তখন ইংল্যান্ডে বসবাস করছেন। ঘটনাটি ১৬৬৫ সালের, নিউটনের বয়স তখন ২০ এর কোঠায়। তখনও বুবোনিক প্লেগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তাই নিউটন বাধ্য হয়ে শহর ছেড়ে প্রায় ৬০ মাইল দূরে তার পারিবারিক এস্টেটে ফিরে যান। তখন অবশ্য ই-মেইল বা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পড়ার সুযোগ হয়নি নিউটনের।

তবে তিনি নিজ উদ্যোগেই সেই সময় নানা বিষয় নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন। এই তরুণ গণিতবিদ তখন নানা থিওরি নিয়ে খেলা করছিলেন। আর সেসময়ই তিনি সবচেয়ে ভালো কাজটি করে ফেলেন। কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় তিনি যখন গণিতবিদ্যা নিয়ে ব্যস্ত তখনই একদিন মহাকর্ষ শক্তির তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন। যে আপেলের সূত্রটি তিনি সবাইকে জানিয়েছিলেন সেই আপেলের গাছটি তার জানালার বাইরেই ছিল। 

অ্যাডভার্ড মুনচ

জনপ্রিয় একজন চিত্রশিল্পী তিনি। ‘দ্যা স্ক্রিম’ নামক চিত্রটি তার এক অনন্য সৃষ্টি। ১৯১৯ সালে যখন বিশ্বব্যাপী স্প্যানিশ ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে তখন অ্যাডভার্ড মুনচ নরওয়েতে বসবাসরত ছিলেন। দেশব্যাপী তখন সবাই কোয়ারেন্টাইন মেনে গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এর ব্যাতিক্রম হলেন না মুনচও। তিনিও এই সুযোগটি কাজে লাগালেন। তবে মহামারি এই রোগ যে তারও পিছু ছাড়ল না, ঠিকই জাপ্টে ধরল।

তবে গৃহবন্দী থাকার সময়টুকু তিনি অবশ্য নষ্ট করেননি। যখনই সুস্থতা বোধ করেছেন ঠিক তখনই তুলির আঁচড়ে ক্যানভাস রাঙিয়েছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়টি হলো, এই অসাধারণ চিত্রশিল্পী নিজেই নিজের ছবিটি এঁকেছিলেন সেসময়। ‘সেল্ফ পোট্রেট উইথ দ্য স্প্যানিশ ফ্লু’ নামক ছবিটিতে দেখা গেছে, অত্যন্ত রুগ্ন ও স্বল্প চুলের এক ব্যক্তি বসে আছেন তার বিছানায়।

থমাস নাসে

তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত নাট্যকার। যিনি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের সমসাময়িক সময়েই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ১৫৯২ সালে যখন বুবোনিক প্লেগ লন্ডনে প্রাদুর্ভাব বিস্তার করে তখন সংক্রমণ এড়াতে নাসি ইংরেজ পল্লীতে পালিয়ে যান। তখনই গৃহবন্দী অবস্থায় তিনি লিখে ফেলেন ‘সমারস লাস্ট অ্যান্ড টেস্টামেন্ট’। মরণভয়ের কারণে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে গিয়ে তিনি সেসময় উপলব্ধি করেন মানুষের জীবন ও মরণ নিয়ে। যা তার এই লেখায় প্রকাশ পেয়েছে-

পৃথিবীতে আমাদের সময় খুব অল্প,
তবুও মোহের পিছনে ছুটে চলা,
মৃত্যু সত্য, নয় নিছক ভাবনা,
এই সত্য থেকে নেই পালানোর উপায়;
আমি আজ অসুস্থ, একদিন মরেও যাব:
প্রভু, আমাদের দয়া করুন।

জিওভান্নি বোকাচিয়াও

ফ্লোরেনটাইন লেখক এবং বিখ্যাত কবি জিওভান্নি বোকাকাসিও বুবোনিক প্লেগে আক্রান্ত হন। ১৩৪৮ সালে এটি ফ্লোরেন্সে আঘাত হানলে তার বাবা এবং সৎ মা উভয়ই এই রোগে সংক্রামিত হন। এসময় বাধ্য হয়েই নির্জন স্থানে কোয়ারেন্টাইনে চলে যান জিওভান্নি। এসময় তিনি তুস্কান পল্লীতে গৃহবন্দী হয়ে সময় কাটাচ্ছিলেন। তবে তার সময়টুকু অবশ্য বিফলে যায়নি। এসময় ‘দ্য ডেকামেরন’ নামক একটি উপন্যাস লিখে ফেলেন তিনি।

সূত্র: মেন্টালফ্লস

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ