• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে বসছে পূর্বাভাস যন্ত্র

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২১  

বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি ঠেকাতে বজ্রপাত পূর্বাভাস যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং শিগগিরই বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় এসব যন্ত্র বসানো হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, প্রতি বছর বজ্রপাতে অন্তত শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। গত ১০ বছরে বজ্রপাতের কারণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দুই হাজার মানুষ। এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

প্রতিমন্ত্রী জানান, এর মধ্যে ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ এবং চলতি বছর প্রাণহানি হয়েছে গড়ে তিনশর বেশি। ২০১১ সালে ১৭৯, ২০১২ সালে ২০১, ২০১৩ সালে ১৮৫, ২০১৪ সালে ১৭০, ২০১৫ সালে ২২৬, ২০১৯ সালে ১৯৮ এবং ২০২০ সালে ২৫৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ২০১৬ সালে ৩৯১, ২০১৭ সালে ৩০৭, ২০১৮ সালে ৩৫৯ এবং চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৩২৯ জনের।

বজ্রপাত থেকে মানুষ ও প্রাণিকুলকে রক্ষায় ৪৭৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা তিন ধাপে কাজটি করবো। প্রথমত মানুষকে সচেতন করতে আমরা সচেতনতামূলক কাজ করবো।  

তিনি বলেন, বজ্রপাতের আগে মেঘে গুড়গুড় ডাক হবে। এর ৪০ মিনিট পর বজ্রপাত হয়। এই গুড়গুড় ডাক শোনার পরেই যাতে মানুষ ঘরে থাকে বা মেঘ দেখে যাতে ঘরে থাকে সে বিষয়ে তাদের সচেতন করা হবে।  

‘সেই সঙ্গে এখন আধুনিক বিশ্বে বজ্রপাতের জন্য সাইক্লোনের মতো আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কতগুলো মেশিন তৈরি করা হয়েছে যেগুলো ৪০ মিনিট আগে পূর্বাভাস দিতে পারে। এই মেশিনগুলো আমরা বসাবো। ’ 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, যন্ত্রগুলো প্রাথমিকভাবে বজ্রপাত প্রবণ জেলাগুলোতে বসানো হবে, বিশেষ করে হাওড়-বাওড় এলাকায় আমরা গুরুত্ব বেশি দিয়েছি। এই সিগন্যাল একটি অ্যাপের মাধ্যমে যাতে স্থানীয়দের মোবাইলে যেতে পারে সেজন্য একটি অ্যাপও তৈরি করা হবে।  

পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের মতো বজ্রপাত প্রবণ এলাকায় বজ্রপাত আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান এনামুর রহমান।  

তিনি বলেন, আমরা যতগুলো মৃত্যুর খবর দেখেছি সবই কিন্তু খোলা মাঠ বা হাওড়ের মধ্যে। শহরাঞ্চলে কিন্তু বজ্রপাতে মৃত্যু হয় না। এজন্য বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের মতো বজ্রপাতের আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছি। বজ্রপাত প্রবণ ও মুক্ত এলাকায় এগুলো করা হবে।  

এনামুর রহমান বলেন, আমরা যে নকশা করছি তাতে এটি এক ডেসিমেল জায়গায় একটি পাকা ঘর থাকবে এবং প্রত্যেক ঘরে একটি করে লাইটনিং অ্যারেস্টার দেয়া হবে। যাতে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে সতর্কবার্তা শোনার পরে মানুষ সেই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারে এবং বজ্রপাত না হওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান করবে।  

বজ্রপাতের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষের আশ্রয় নেয়া ছাড়াও একাধিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলো মাল্টিপারপাস হবে। এখানে কৃষক-মৎসজীবীরা সকালে নাস্তা করতে পারবে, দুপুরে খাবার খেতে পারবে। অথবা ঝড়-বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টির সময় আশ্রয় নিতে পারবে। কেউ বিশ্রাম করতে চাইলেও সেটা করতে পারবে।  

প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এটা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই রিপোর্ট আসলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠাবো। প্রধানমন্ত্রীর সাথে মৌখিকভাবে আলোচনা হয়েছে তিনি সামারি পাঠাতে বলেছেন, সেটা অনুমোদন হয়ে আসলে আমরা কাজ শুরু করবো।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ