• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

চট্টগ্রাম থেকে ১১শ’ কন্টেইনার ইতালি যাচ্ছে আজ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

বাংলাদেশের রফতানির প্রধান খাত তৈরি পোশাক যার ৬০ ভাগেরই গন্তব্য ইউরোপ। কিন্তু ইউরোপের বাজারে পণ্য পাঠাতে সরাসরি কোন রুট এতদিন ছিল না। সেখানকার বায়াররাই নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহনের উদ্যোগ। ইতালির রেভেনা বন্দর থেকে খালি কন্টেনার নিয়ে এসেছে জাহাজ এমভি সোঙ্গা-চিতা। রফতানির পণ্য নিয়ে আজ সোমবার জাহাজটির বন্দর ত্যাগ করার কথা রয়েছে। পরীক্ষামূলক এই যাত্রা সফল হলে ইউরোপের বাজারে সরাসরি প্রবেশ করবে বাংলাদেশের পণ্য। রফতানিকারক ও শিপিং কোম্পানিগুলো এ রুটকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছে। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, এমভি সোঙ্গা-চিতা শনিবার আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার কেলাংসহ বিভিন্ন ট্রানজিট পোর্ট ঘুরে ইউরোপে পণ্য পৌঁছতে যেখানে প্রায় দেড় মাস পর্যন্ত সময় লাগে, সেখানে মাত্র ষোল দিনে জাহাজটি পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ এই পথ। রবিবার দিনভর চলে এই জাহাজে পণ্য ওঠানোর কাজ। মোট ১১শ টিইইউএস রফতানির পণ্য নিয়ে এ জাহাজটি ইতালির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাবে। রফতানিকারকরা বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন নতুন এই সরাসরি রুট নিয়ে। কেননা, এতে আমদানি ও রফতানিকারক উভয়েরই লাভ। সরাসরি রুটে পণ্য পরিবহন মানে সময় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বড় ধরনের ব্যয় সাশ্রয়। ইতালি থেকে সরাসরি রফতানির পণ্য যাবে জার্মানিতে। এ রুটের সফলতায় খুলে যাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানির পণ্য পাঠাবার পথ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি কনজারভেটর (ডিসি) ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম জনকণ্ঠকে জানান, সোমবার বেলা ১টার দিকে এনসিটি (নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল) চার নম্বর জেটি থেকে জাহাজটির ইতালির উদ্দেশে ছেড়ে যাবার কথা রয়েছে। সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এ রুটটি যেন স্থায়ী রুটে পরিণত হয় সে জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের যা যা করা দরকার, তার সবই করবে।

সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট জানায়, ৯৪৫টি খালি এবং ৭টি পণ্যভর্তি কন্টেনার নিয়ে এমভি সোঙ্গা-চিতা ইতালির রেভেনা বন্দর ছেড়েছিল গত ১৭ জানুয়ারি। কোন ট্রানজিট পোর্ট স্পর্শ করতে না হওয়ায় শনিবারের মধ্যে তা চট্টগ্রামে চলে আসে। রফতানির পণ্য নিয়ে ইউরোপে পৌঁছার সময়ও কমে আসবে। এটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে আশা করছেন রফতানিকারকরা। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য পাঠাতে পারলে তা বায়ার ধরে রাখতে সহায়ক হয়।

বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ইউরোপে যাওয়ার জন্য সরাসরি একটি রুট খুবই প্রয়োজন ছিল। কারণ, পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো।

তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে পণ্য পেতে চায়। সে জন্য নিজ উদ্যোগেই এ ব্যবস্থা করে নিয়েছে, যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে এগিয়ে দেবে। পরীক্ষামূলক রুটটি লাভজনক অর্থাৎ সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী প্রমাণ হলে তা স্থায়ী রুটে পরিণত হবে।

উল্লেখ্য, সমাপ্তি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। এককভাবে আমেরিকা সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলেও ৬০ শতাংশ পোশাক যায় ইউরোপের বাজারে। সরাসরি রুট না থাকায় এ পণ্যকে বিভিন্ন ট্রানজিট পোর্ট হয়ে যেতে হয়। ফিডার জাহাজে রফতানির পণ্য নিয়ে অন্য দেশের গভীর সমুদ্র বন্দরে অপেক্ষমাণ মাদার ভেসেলে তুলতে হয়। এতে সময় অনেক বেশি লেগে যায়। ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া বর্তমান করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক রুটে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের সঙ্কট। বেড়েছে কন্টেনার ও জাহাজ ভাড়া। ইউরোপের রুটে সরাসরি রফতানির পণ্য পাঠাবার পথ উন্মোচিত হয়ে গেলে ভবিষ্যতে রফতানিকারকদের একটি উৎকণ্ঠারও অবসান হবে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ