• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

থাইরয়েডের সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১  

মানুষের শারীরিক সমস্যাগুলোর মধ্যে থাইরয়েডের সমস্যা বর্তমানে অতি পরিচিত একটি রোগ। পৃথিবীতে অন্তত ১২ শতাংশ মানুষ থাইরয়েডজনিত সমস্যায় ভোগেন। মানুষের গলার সামনের দিকে প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থিটির নাম থাইরয়েড। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হরমোন তৈরি হয়। আর যখন থাইরয়েডে হরমোনগুলো অস্বাভাবিক উৎপাদন হয় তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়।

থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় থাইরয়েড হরমোন। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা হরমোন। কারণ এটি থেকে শরীরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপাদন হয়।

সাধারণত দু ধরনের থাইরয়েড সমস্যা দেখা যায়। হাইপারথাইরয়েডিজম ও হাইপোথাইরয়েডিজম। থাইরয়েড গ্রন্থিতে অতিরিক্ত হরমোন তৈরি হলে তাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে। আর পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি হলে তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে।

থাইরয়েডের ক্ষরণ কিন্তু একটা সঠিক পরিমাণে হয়। মানে শরীরের যতটুকু দরকার ততটুকু। হরমোনের মাত্রা শরীরে অত্যধিক বেশি বা কম হয়ে গেলে তা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে থাইরয়েড গ্রন্থি যখন ফুলে যায় তখন গলগন্ড রোগের সৃষ্টি হয়।

থাইরয়েড হরমোন আমাদের বিপাকসহ আরো বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই হরমোন তৈরির জন্য এই গ্রন্থিটির প্রয়োজনীয় পরিমাণে আয়োডিনের দরকার হয়। উক্ত হরমোন আমাদের বিপাক ক্রিয়াসহ বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন না গেলে থাইরয়েডের সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। লবণ শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হলেও এটি থাইরয়েড সমস্যার মোকাবিলা করতে সক্ষম যেহেতু এরমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন রয়েছে।

আপনার শরীরে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিয়েছে কী না, জানার জন্য এই আটটি লক্ষণের দিকে নজর রাখুন। এই শারীরিক বা মানসিক লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনার তাড়াতাড়ি সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত।

ওজন বেড়ে যাওয়া

অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়াও থাইরয়েডের লক্ষণ হতে পারে। শরীরের বিপাকের মাত্রা যদি কমে যায় বা বেড়ে যায়, তার সঙ্গে আপনার শরীর কতটা ক্যালরি বা ফ্যাটের মাত্রার হেরফের হওয়া খুবই স্বাভাবিক, যার ছাপ আপনার ওজনে পড়তে বাধ্য।

ক্লান্তি

থাইরয়েডের সব থেকে সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে ক্লান্তি। থাইরয়েড হরমোন মূলত শরীরে শক্তি জোগান দেয়। আপনি যদি অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে তা থাইরয়েড হওয়ার লক্ষণ হতেই পারে।

অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা

বেশি শীত না পড়লেও যদি আপনার খুব সহজেই ঠান্ডা লাগে, তার মানে আপনার শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালরি ঝরাচ্ছে না। বরং আপনার শরীর ক্যালরি সঞ্চয় করে রাখছে। যা থাইরয়েড হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।

পেশি এবং জয়েন্টে দুর্বলতা ও যন্ত্রণা

বিপাকের সমস্যার কারণে আপনার পেশির এবং জয়েন্টের শক্তির ক্ষয় হতে পারে। যার ফলে আপনার পেশি বা জয়েন্ট দুর্বল হয়ে যেতেই পারে।

চুল পড়া

থাইরয়েডের সমস্যা হলে আপনার চুল ঝরা বেড়ে যেতে পারে। চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই থাইরয়েডজনিত সমস্যা দায়ী।

অবসন্নতা

বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী বেশির ভাগ মানুষ যাঁরা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা অবসাদের কবলে পড়ে যেতে পারেন।

মনোযোগ দিতে না পারা এবং ভুলে যাওয়া

থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন এমন অনেকেই মানসিক ক্লান্তির কথা বলেন। মনোযোগ দিতে না পারা, বা সহজেই কোন কথা ভুলে যাওয়া, এগুলি থাইরয়েডের ক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিচিত লক্ষণ।

ঋতুস্রাবের সমস্যা

শরীরের অন্যান্য হরমোনের সঙ্গে থাইরয়েড হরমোনের সম্পর্ক থাকায়, সেই হরমোনের বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া অন্যান্য হরমোনের কার্যকারিতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। ঋতুস্রাব জড়িত হরমোনের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে ঋতুস্রাবের সময় এবং তীব্রতায় সমস্যা হতে পারে।

থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

থাইরয়েড সমস্যা প্রধানত দেখা যায় স্ট্রেস, ডায়েটের সমস্যা। ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলেই রেহাই পাবেন থাইরয়েড সমস্যা থেকে।

আয়োডিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার থাইরয়েডের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই যে খাবারে এই উপাদানগুলো বেশি থাকে যেমন, দুধ, পনির, দই এই ধরনের দুগ্ধজাতীয় খাবার থাইরয়েডের জন্য অনেক বেশি উপকারী। আয়োডিন সাপ্লিমেন্টও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আপনার থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে কোনও ভাবেই চিনি খাবেন না। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে টি-৩ ও টি-৪ এই দুটি হরমোন উত্পন্ন হয়ে। যা স্বাস্থ্য়ের পক্ষে খারাপ।

যখন আমাদের দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন থাকে না তখন থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে পারে না। যা হাইপোথাইরয়েডিজম-এর দিকে পরিচালিত হয়ে। তাই আয়োডিন যুক্ত খাবার খান।

মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। থাইরয়েডের সমস্যা কম থাকে।

প্রতিদিনের খাবারে আয়রন কম পরিমাণে থাকলেও থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

হরমোন উৎপাদনের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অনেক উপকারী। এতে বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি হয়। এ ছাড়া এটি শরীরের ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বের করে পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে।

আদায় বিভিন্ন রকম খনিজ যেমন- পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম থাকে। তাই এটি থাইরয়েডের সমস্যার জন্য অনেক কার্যকর। থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আদা চা পান করা অনেক উপকারী।

থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ভিটামিন বি খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই যেগুলো খাবারে এই ভিটামিন বেশি থাকে যেমন, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, বাদাম এগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তভুক্ত করতে হবে যাতে এগুলি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি সরবরাহ করতে পারে।

ভিটামিন ডি এর অভাবেও অনেক সময় থাইরয়েডের সমস্যা হয়ে থাকে। আর একমাত্র সূর্যের আলোতেই শরীর ভিটামিন ডি প্রস্তুত করতে পারে। তাই দিনে অন্তত পক্ষে ১৫ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকতে হবে। ভিটামিন ডি বেশি পরিমাণে থাকে এমন কিছু খাবার হচ্ছে- স্যালমন, ম্যাকারেল, দুগ্ধজাতীয় দ্রব্য, কমলালেবুর রস, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।

যোগ ব্যয়াম ও ধ্যান থাইরয়েড গ্রন্থিতে রক্ত প্রবাহকে সঠিক রাখে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ