• বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৭ ১৪৩১

  • || ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে কী করবেন?

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২৪  

শরীরের বর্জ্য পদার্থ কিডনির মাধ্যমে ছেঁকে মূত্রনালি দিয়ে মূত্র হিসেবে বের হয়ে যায়। মানুষের শরীরের দুটি কিডনি, দুটি ইউরেটার, একটি ইউরিনারি ব্লাডার (মূত্রথলি) এবং ইউরেথ্রা (মূত্রনালি) নিয়ে মূত্রতন্ত্র গঠিত। এই রেচনন্ত্রের যেকোনো অংশে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয়, তাহলে সেটাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলা হয়।

ইউরিনে ইনফেকশন হলো প্রধানত ব্যাকটেরিয়াঘটিত একটি রোগ। এর ফলে যখন মূত্রনালির নিম্নাংশ আক্রান্ত হয়, তখন তাকে মূত্রথলির সংক্রমণ (বা সিস্টাইটিস) বলে। আর যখন এর ফলে মূত্রনালির ঊর্ধ্বাংশ আক্রান্ত হয়, তখন তাকে কিডনির সংক্রমণ (বা পায়েলোনেফ্রাইটিস) বলে।

 

প্রতিরোধের উপায়

প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধই উত্তম। তাই, আক্রান্ত হওয়ার আগে কিছু নিয়ম মেনে চললে ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনা যায়। সেজন্য—

১. যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সেজন্য দৈনিক কমপক্ষে ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করা উচিত।

২. প্রস্রাব করার সময়ে মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি করার চেষ্টা করতে হবে।

৩. প্রস্রাবের বেগ এলে বেশিক্ষণ ধরে রাখা যাবে না এবং প্রস্রাব করার সময়ে তাড়াহুড়ো করা যাবে না।

৪. গোপনাঙ্গ শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হবে। টয়লেট শেষে, টিস্যু ব্যবহারের সময়ে সামনে থেকে পেছনের দিকে পরিষ্কার করতে হবে। বাথটাব বা পুকুরে গোসল করার পরিবর্তে শাওয়ার কিংবা বালতির সাহায্যে গোসল করতে হবে।

৫. সহবাসের আগে ও পরে গোপনাঙ্গ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা অন্তর্বাস ব্যবহার করুন।

৬. ডায়াবেটিস আছে যাদের, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৭. এক থেকে তিন বছর বয়সী বাচ্চার ডায়াপার বা কাপড়ের ন্যাপি নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে।

৮. সুগন্ধি সাবান, কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী অথবা ট্যালকম পাউডার গোপনাঙ্গে ব্যবহার করা যাবে না।

ইউরিনে ইনফেকশনের জটিলতা

 ১. অনেকক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা না করালে সংক্রমণ কিডনিতে পৌঁছে গিয়ে, কিডনির স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।

২. যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে পড়লে ‘সেপসিস’ নামক মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে, যাতে এমনকি রোগীর জীবনও বিপন্ন হতে পারে।

৩. পুরুষদের ক্ষেত্রে বারবার সংক্ৰমণ হলে মূত্রনালি সরু হয়ে যেতে পারে। এতে মূত্রতন্ত্রের জটিলতার পাশাপাশি যৌন সমস্যা ও হতে পারে।

৪. গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের ইনফেকশনের ঠিকমতো চিকিৎসা না করা হলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন: জন্মের সময়ে শিশুর ওজন কম হতে পারে ও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বাচ্চা প্রসব (প্রিম্যাচুর বেবি) হয়ে যেতে পারে।

স্রাবের সংক্রমণের চিকিৎসা

 কম পরিমাণে পানি পান করলে কিংবা তীব্র গরমে অল্প মাত্রায় প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সবারই হতে পারে। কিন্তু, সেটা হওয়া মানেই ইউরিনে ইনফেকশন নয়। তাই এর সঠিক ডায়াগনোসিসের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। ইউরিনে ইনফেকশন ধরা পড়লে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি ঘরোয়াভাবে নিচের উপদেশগুলো মেনে চলা যেতে পারে-

১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা জরুরি। এমন পরিমাণে পানি পান করা উচিত যেন নিয়মিত স্বচ্ছ ও হালকা হলুদ রঙের প্রস্রাব হয়।

২. ব্যথা ও অস্বস্তি উপশমের জন্য পেটে, পিঠে ও দুই উরুর মাঝে গরম সেঁক নেওয়া যায়।

৩. সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত যৌন সহবাস থেকে বিরত থাকা ভালো।

চিকিৎসা নেওয়ার পরে আবারও ইউরিন ইনফেকশন হলে বা যাদের বারবার ইউরিনে ইনফেকশন হয় তাদের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসক বিশেষ কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক চক্রাকারে দীর্ঘদিন সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।

নারী-পুরুষ সকলের জন্যই প্রস্রাবের সংক্রমণ খুবই বিব্রতকর একটি রোগ। তবে সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললেই তা মোটামুটি শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। তাই আসুন আমরা সবাই স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হই এবং সুস্থ থাকি।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ