• বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৭ ১৪৩১

  • || ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দৈনিক গোপালগঞ্জ

হঠাৎ ভেঙে গেছে দাঁত? জেনে নিন করণীয়

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০২৪  

দাঁত শরীরের অন্যতম শক্ত ও মজবুত অঙ্গ। কিন্তু কোনো কোনো পরিস্থিতিতে তা ভেঙে যেতে পারে। দাঁত ভাঙলে অসহনীয় ব্যথার পাশাপাশি সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এই ভাঙা দাঁতের স্থায়িত্ব নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
 

নানা কারণেই দাঁত ভাঙতে পারে। যেমন:

১. সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা, খেলাধুলায় আঘাতে কিংবা পড়ে গিয়ে দাঁত ভাঙতে পারে।

২. শক্ত খাবার, যেমন: হাড়, শক্ত ক্যান্ডি কিংবা শক্ত কিছু কামড়াতে গিয়ে দাঁত ভাঙতে পারে। ছোটখাটো দানা, বিচি, যেমন শুকনা মরিচের বিচি, পেয়ারার বিচিতে কামড় লেগেও দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

৩. দাঁতের ক্ষয়রোগ বা ডেন্টাল ক্যারিজের কারণেও অনেক সময় অল্পতেই দাঁত ভেঙে যেতে পারে।

৪. দীর্ঘদিন মেডিকেটেড টুথপেস্ট বা একই টুথপেস্ট ব্যবহারের কারণেও দাঁত ভাঙতে পারে। টুথপেস্টে অত্যধিক ডেন্টিফ্রিসেস থাকলে বা টুথ পাউডার ব্যবহারের ফলে দাঁতের ক্ষয় হয়।

৫.  বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষত পঞ্চাশ বছরের পর অনেকেরই দাঁতে ফাটল ধরে।

লক্ষণ

১. কোনো কিছুতে কামড় দিলে ব্যথা লাগলে, ঠান্ডা বা গরমের দীর্ঘনুভূতি হলে।

২. দাঁতে ক্যারিজ বা ক্ষয় না থাকা সত্ত্বেও উক্ত লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে যে দাঁতে ভাঙা আছে।

দাঁত ভেঙে যাওয়ার কারণ ভিন্ন ভিন্ন এবং ভেঙে যাওয়ার ধরনও থাকে ভিন্ন। যেমন– আংশিক ভাঙতে পারে, আবার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে যেতে পারে।

দাঁতে সূক্ষ্ম ভাঙা থাকতে পারে, যা খালি চোখে সহজে বোঝা যায় না। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে তা নির্ণয় করতে হয়। ভাঙার পরিমাণটা কতখানি অথবা বাইরে যে অংশটুকু ভেঙে আছে, মাড়ির ভেতরে শিকড়ে কোনো ভাঙা বা ফাটল আছে কি না। যদি শিকড়ে ফাটল বা ভাঙা দেখা যায়, তবে হয়তবা দাঁতটিকে শেষ রক্ষা করা যায় না।

 

চিকিৎসা

দাঁত ভাঙার ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা ভিন্ন। এর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো:

১. দাঁতের যে অংশ ভেঙে গেছে সেটা ঠিক করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ক্যাপ পদ্ধতি।

২. ধাতু, সিরামিক ও পোরসেলিন দিয়ে তৈরি করা ক্যাপ দাঁত আগের মতোই আকৃতি ফিরে পায়। আর এটা মোটামুটি দীর্ঘস্থায়ী হয়।

৩. সামনের দিকের আংশিক ভাঙা দাঁতে ভেনিয়ার বা কম্পোজিট রেজিনের ব্যবহার একটি আধুনিক চিকিৎসা।

৪. ভেঙে যাওয়া দাঁতটি রক্ষা করা না গেলে একটি আধুনিক ও স্থায়ী সমাধান হতে পারে ডেন্টাল ইমপ্লান্ট।

৫. দাঁত ভাঙার পর পাল্প টিস্যুতে সংক্রমণ হতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় রুট ক্যানেল করা হয়।

৬. ভাঙা দাঁতে কোনো ব্যথা না থাকলে ফিলিং একটি নিরাপদ পদ্ধতি।

৭. দাঁত যদি সম্পূর্ণ খুলে চলে আসে তখন দাঁতটিকে বাঁচানোর সুযোগ অনেকটাই রোগীর কিছু দায়িত্বের উপর নির্ভর করে।

৮. শিশুরা আঘাত পেলে সেক্ষেত্রে দুধদাঁত হলে কোনো চিকিৎসার দরকার নেই। আঘাতের কারণে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে পরিষ্কার তুলা অথবা কাপড় দিয়ে ১০ মিনিটের মতো চেপে ধরে রাখতে হবে।

৯. আবার দাঁতে ব্যথা থাকলে চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। সংক্রমিত যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কুসুম গরম লবণপানি দিয়ে কুলকুচি করাতে হবে।

১০. যদি আঘাতে স্থায়ী দাঁত সম্পূর্ণ খুলে আসে তবে অবশ্যই সেটি গোড়ার দিকে স্পর্শ করা যাবে না। মাটিতে পড়ে গিয়ে থাকলে কেবল আলতোভাবে পরিষ্কার পানিতে এমনভাবে ধুতে হবে যেন দাঁতে লেগে থাকা কোন টিস্যু সরে না যায়। এরপর দাঁতটি পুনরায় দাঁতের সকেটে বসিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

১১. তবে, সকেটে বসানো সম্ভব না হলে জিহ্বার নিচে, স্যালাইন পানি, ডাবের পানি কিংবা দুধের মধ্যে ভিজিয়ে অতিদ্রুত সম্ভব রোগীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

১২. কিছু আঘাত অনেক বেশি মারাত্মক হতে পারে। যেমন: সড়ক দুর্ঘটনায় দাঁত, চোয়াল, নাক, মুখমণ্ডলের হাড় ভেঙে যেতে পারে। রক্তক্ষরণ ছাড়াও মাড়ি ফুলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন ওরাল এবং ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের নিকট অবশ্যই যেতে হবে। কালক্ষেপণ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই আঘাতের তীব্রতার উপর নির্ভর করে আধুনিক চিকিৎসা নিতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, দাঁত ভেঙে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। নয়ত এই ভাঙা দাঁতের ভেতরে অবস্থিত দন্তমজ্জায় পচন ধরে ধীরে ধীরে সংক্রমণ হতে পারে। ফলে পাশের দাঁতেরও সমস্যা হতে পারে। ভাঙা দাঁতের গর্তে বা ফাঁকা স্থানে ঢুকে থাকা খাদ্যকণা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। ভাঙা দাঁতের ধারালো অংশের ঘর্ষণে জিহ্বার বা গালের নরম অংশে ঘা হতে পারে। এই ঘা কিছুদিন পর ভালো হয়, আবার আঘাতের ফলে সেই ঘা আবার জেগে ওঠে। সেখান থেকে এমনকি ক্যানসারও হতে পারে।

 

প্রতিরোধ

১. দাঁতে ছোট ক্যারিজ থাকতেই তার চিকিৎসা করানো উচিত।

২. সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৩. মাংসের বড় হাড় বা শক্ত কিছু দাঁত দিয়ে চিবোনো বা খোলা পরিহার করুন।

৪. মানসিক চাপ পরিহার, সময়মতো দাঁত ফিলিং করা দরকার।

৫. হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে দাঁতের চিকিৎসা নেওয়া বন্ধ করা উচিত।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ