• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

লোডশেডিং এর রুটিন তৈরি হবে, যাতে মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারি

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৬ জুলাই ২০২২  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের এখন একটাই উপায়, কখন, কোন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হবে সেটার একটা রুটিন তৈরি করা। যাতে মানুষ প্রস্তুত থাকতে পারে। মানুষের কষ্টটা যেন আমরা লাঘব করতে পারি।

বুধবার (৬ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উদ্বোধনের সময় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি দেশবাসী আমাদের সহযোগিতা করবেন। সবাইকে আহ্বান করছি, প্রত্যেককে নিজ নিজ সঞ্চয় বাড়াতে হবে। খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে হবে। যতটুকু পারা যায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে।

তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। আমরা সবার ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি ঠিকই, কিন্তু বর্তমানে আমাদের লোডশেডিং করতেই হবে; উৎপাদনও সীমিত রাখতে হবে। যাতে আমাদের এই ভুর্তকিটা না দিতে হয়।

সরকারপ্রধান বলেন, আমি আপনাদের জানাতে চাই বিদ্যুতে মোট ভুর্তকি দিতে হচ্ছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য এবং ইন্ডাস্ট্রি চালু রাখা এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখার জন্য যে এলএনজি আমদানি করছি, সেক্ষেত্রে ভুর্তকি দিতে হচ্ছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

তিনি বলেন, প্রতি কিউবেক মিটার এলএনজি কিনতে সরকারের ব্যয় ৫৯ দশমিক ৬০ টাকা। কিন্তু আমরা সেটা গ্রাহকদের কাছে আগে বিক্রি করেছি মাত্র ৯ দশমিক ৬৯ টাকায়। যেটা সম্প্রতি বাড়িয়ে ১১ টাকা করা হয়েছে। তারপরও বিশাল অংকের ভুর্তকি রয়ে গেছে সেখানে। এই যে বিশাল অংক আমরা ভুর্তকি দিচ্ছি, এটা আমরা কতদিন দিতে পারব? কারণ আমাদের মানুষকে খাদ্য দিতে হবে, চিকিৎসা দিতে হবে, গৃহহীনদের ঘর দিতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের তাদের প্রতি নজর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা ভুর্তকিই দিতে হবে। এবারের বাজেটে ধরেছি। কিন্তু আমরা যদি ভুর্তকি না কমাই, সরকারের টাকা আসবে কোথা থেকে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশেও সব কিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। যেগুলো আমাদের কিনে আনতে হয়। ভোজ্যতেলও আমাদের আনতে হচ্ছে। সেখানে সবাইকে আহ্বান করেছি প্রত্যেককে নিজ নিজ সঞ্চয় বাড়াতে হবে। খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। সেই বিদ্যুৎ আমরা দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। তবে আপনারা জানেন যে রাশিয়া-ইউক্রেন যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে সে যুদ্ধ, আর যুদ্ধ শুরুর পরে রাশিয়ার ওপর আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিল, ইউরোপ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর ফলাফলটা এই দাঁড়িয়েছে, এখন তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ডিজেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এলএনজির দাম বেড়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সব কিছুর দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে যে, এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালিয়ে রাখা ব্যয়বহুল ও কষ্টকর ব্যাপার হয়ে গেছে। তাই আমাদের নিজস্ব যেটুকু গ্যাস আছে তা দিয়েই চালিয়ে রাখতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, সেই বিষয়টাও আপনাদের আমি জানাতে চাই। কারণ এখানে যে ফার্নেস অয়েল, যার মূল্য ছিল মাত্র ৭০৮ টাকা। সেটা ইউক্রেন যুদ্ধের পর হয়ে গেছে ১ হাজার ৮০ টাকা। অর্থাৎ ৩৩২ টাকা বা ৫২ শতাংশ বেড়েছে। এলএনজি যেটা মাত্র ১০ মার্কিন ডলারে কেনা যেত, যুদ্ধের ফলে এখন তা ৩৮ মার্কিন ডলার হয়েছে। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ২৮০ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কয়লাও ১৮৭ মার্কিন ডলার ছিল, এখন তা ২৭৮ মার্কিন ডলার হয়েছে। প্রায় ৬১ শতাংশ বেড়েছে। ডিজেল লিটার যেটা ৮০ মার্কিন ডলার ছিল, এখন ১৩০ ডলার হয়ে গেছে। শোনা যাচ্ছে দাম ৩০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। অর্থাৎ সারা বিশ্ব এখন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ডিজেলের ওপর অনেক নির্ভরশীল। সেই ডিজেলের দাম আরও বাড়বে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই নিষেধাজ্ঞা যদি না হত তাহলে কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও করত এবং তাদের থেকে তেল, সার, গম এগুলোর সরবরাহ ঠিক থাকত। যদিও জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে একটা চ্যাম্পিয়ন গ্রুপ হয়েছে। তাতে আমি সদস্য হিসেবে আছি।

শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে আলোচনা হয়েছে- সবচেযে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য এবং সার যাতে আনতে দেয় সে বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে এবং সুইফট বন্ধ করার কারণে আমরা ডলার দিয়ে রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে জিনিস কিনতে পারছি না। কাজেই ফাইন্যান্সিয়াল মেকানিজম কী হবে, এর উত্তর কেউ দিতে পারেনি।

তিনি বলেন, ইউরোপেরও খুবই দুরাবস্থা, যদিও তারা রুবল দিয়ে কিনে নিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের সে বিষয়ে খুবই সীমিত সুযোগ আছে। তবুও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে আমাদের ভুর্তকি দিতে হচ্ছে, বিদ্যুতে ভুর্তকি দিতে হচ্ছে। তারপরও আমরা সাধারণ মানুষকে নগদ অর্থ দিচ্ছি। এখন আমরা উপকারভোগী কার্ড করে দিচ্ছি, রেশন কার্ডের মতো পারিবারিক কার্ড। যেখানে স্বল্প মূল্যে প্রায় এক কোটি মানুষের জন্য কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা স্বল্প মূল্যে খাদ্যপণ্য কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি। মানুষের কল্যাণে যা যা করার সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ