• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

আলু সংরক্ষণে ৭৬ উপজেলায় হবে ৪৫০ মডেল ঘর

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০২২  

আলু সংরক্ষণে মডেল ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম)। চাষিদের বসতবাড়ির উঁচু, খোলা ও আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে বাঁশ, কাঠ, টিন, ইটের গাঁথুনি ও আরসিসি পিলারে নির্মিত হবে এ ঘর। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্পও অনুমোদন করেছে সরকার।

‘আলুর বহুমুখী ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রকল্প অনুযায়ী- দেশের সাত অঞ্চলের ১৭ জেলার ৭৬ উপজেলায় ৪৫০টি আলু সংরক্ষণ মডেল ঘর নির্মাণ করা হবে।

জানুয়ারি ২০২২ থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের ব্যয় ৫০ কোটি টাকার কম হওয়ায় প্রকল্পটি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিজ ক্ষমতাবলে অনুমোদন দিয়েছেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘দেশীয় প্রযুক্তিতে বাঁশ, কাঠ, টিন, ইটের গাঁথুনি ও আরসিসি পিলার দিয়ে ৪৫০টি আলু সংরক্ষণের মডেল ঘর নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি মডেল ঘরকেন্দ্রিক ৩০ জন (কৃষক বিপণন দল) কৃষক সুবিধাভোগী হবেন। এভাবে ৪৫০টি কৃষক বিপণন দল গঠন করা হবে। এর মাধ্যমে আলুচাষিদের বিপণন সক্ষমতা বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘১৮ হাজার ৯০০ কৃষক, কৃষি ব্যবসায়ী, কৃষি উদ্যোক্তা ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকারীকে আলুর বহুমুখী ব্যবহারবিষয়ক প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। রপ্তানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারীদের সঙ্গে ৪৫০ কৃষক বিপণন দলের সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থাও থাকবে।’

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে এখন কৃষকপর্যায়ে কম-বেশি ৪০ জাতের আলুর চাষ হচ্ছে। বছরে আলুর উৎপাদন প্রায় ৯৭ লাখ মেট্রিকটন। কিন্তু সারাদেশে মোট উৎপাদনের বিপরীতে হিমাগারে সংরক্ষণ সুবিধার পরিমাণ ২৮ দশমিক ১০ লাখ মেট্রিকটনের।

উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য বহুমুখীকরণ না হওয়ায় উৎপাদিত আলুর একটি অংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্রমবর্ধমান উৎপাদনের ধারা ও টেকসই কৃষি উন্নয়ন অব্যাহত রাখার স্বার্থে অর্থকরী ফসল হিসেবে বসতবাড়িতে আলুর যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

পাশাপাশি রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে আলু চাষের জন্য প্রসিদ্ধ জেলাসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটি ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া ও জয়পুরহাটে বাস্তবায়ন করা হবে।

একদিকে দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ছোট হচ্ছে কৃষি জমি। ফলে অল্প জমি থেকে বেশি মানুষকে খাওয়াতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে কৃষকের স্থান দখল করে নিচ্ছে যন্ত্র। আর সেই যন্ত্রের ব্যবহারে উৎপাদন বাড়ছে। এতে করে পুরাদস্তুর বাণিজ্যে রূপ নিতে চলেছে কৃষি। সে ক্ষেত্রে একটি গোষ্ঠীর হাতে চলে যাবে এই খাত। ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশ থেকে হারিয়ে যেতে পারে কৃষিশ্রমিক। সেই সঙ্গে হারিয়ে যেতে পারে পারিবারিক খামারও। অথচ বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই খামার। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই এটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। করতে হবে সুরাহা।

বুধবার (৩ আগস্ট) ঢাকায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) কনফারেন্স রুমে এসব কথা তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল অ্যান্ড পলিসি সাইন্স বিভাগের ইমিরেটস অধ্যাপক ড. জিওফ উড। এসময় তিনি ‘ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স অব দ্যা বেঙ্গলি ফ্যামিলি ফার্ম’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

উড বলেন, খাদ্য নিরাপত্তায় পারিবারিক খামার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বিশ্বায়নের ফলে কৃষি জমি ছোট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে পারিবারিক কৃষি খামার। কৃষিতে নতুন বৈচিত্র্য এসেছে। সনাতন পদ্ধতির স্থলে জায়গা করে নিয়েছে যান্ত্রিকীকরণ। ৮০’র দশক থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আমরা যে কৃষিকে চিনতাম তার মধ্যে একটা বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আগে কৃষক যেভাবে নিজের জমি চাষ করতো সেই সনাতন পদ্ধতি এখন নেই।

তিনি আরও বলেন, তবে এখানে তিন ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে। তার মধ্যে একটা হলো, ফার্মগুলো ভেঙে যাবে, দ্বিতীয়ত বড় কমার্শিয়াল ফার্মের জন্ম হবে। তৃতীয় হলো সনাতনী রূপটা থাকবে না আবার কমার্শিয়ালও থাকবে না এর মাঝামাঝি কিছু একটা থাকবে। তবে এখানে কৃষকের জায়গাটা নেবে সার্ভিস প্রভাইডাররা। এতে করে কৃষক পুরোপুরি কৃষি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। জমিটা একটা গোষ্ঠী নিয়ে সিজনাল সময়ে কমার্শিয়ালভাবে চাষাবাদ করবে। এতে করে একটা মাস্তানিজম কাজ করবে।

বাংলাদেশের জন্য কৃষিখাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, পৃথিবীর মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। যেখানে বিশ্বায়ন ও নগরায়ন চলছে। যে দেশে রেমিটেন্স একটা বড় ভূমিকা পালন করে। সেখানে কৃষিখাতের ভূমিকা বাড়ছে। কারণ অল্প জমি থেকে বেশি মানুষকে খাওয়াতে হচ্ছে। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কৃষকের কাজ কী সার্ভিস প্রভাইডাররা পূরণ করতে পারবে? বাংলাদেশে কৃষি কাজে বর্গা জমি ২০-৪৫ শতাংশ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নতুন একটা গোষ্ঠী কৃষি কাজে এলে তারা কোন মোটিভেশনালে এলো, তারা কৃষিখাতকে শোষণ করার জন্য এসেছে? নাকি অন্য কিছু। এসব নিয়ে আমাদের আরও আলোচনা করতে হবে। একটা কাজের মধ্য দিয়ে সুরাহা করতে হবে।

দেশের বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, মালিকানা কেন্দ্রিক বা পরিবারভিত্তিক যে কৃষি তা হারিয়ে যাচ্ছে। আগে দেখতাম ধনী কৃষক নিজের ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি অন্যের জন্যও ফসল ফলাতো। একদিকে জমি খণ্ড খণ্ড হচ্ছে, অন্যদিকে এখাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা আসছে। বিশেষ করে গ্রামীণ তরুণেরা কৃষি জমিতে কাজ করছেন।

ছোট জমিতে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসঙ্গে এই কৃষি অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের ধারণা ছিল বড় যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে বড় পরিসরে জমি দরকার। এটা নিয়ে বড় শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমরা মনে করেছিলাম যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে বড় জমি লাগবে। তবে আমি বাংলাদেশ একটা ভিন্নতা দেখেছি। এমন প্রযুক্তি আছে জমি ছোট হলেও ব্যবহার করা যাবে। এখানে জাপানি ও চীনারা বড় ভূমিকা পালন করেছে। ছোট খামারেও যন্ত্র চলে।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একটা শ্যালো মেশিন সঠিকভাবে চালাতে ১৫ একর জমি লাগে। কিন্তু অনেক কৃষকের ১৫ একর জমি নেই, কিন্তু শ্যালো মেশিন আছে। একাধিক কৃষক শেয়ার করে শ্যালো মেশিন ব্যবহার করতে লাগলেন। এছাড়া পাওয়ার টিলারও ব্যবহার করতে লাগলেন কৃষক।

বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান প্রমুখ।

খামারের মুরগি ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এসব রোগের মধ্যে গামবোরো অন্যতম। মুরগির বয়স ২ মাস হলে গামবোরো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সঠিক সময়ে মুরগির গামবোরো রোগের চিকিৎসা না করা হলে খামারের সব মুরগি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা যায়, সর্বপ্রথম আমেরিকার সাসেক্সের গামবোরো নামক স্থানে ১৯৬২ সালে এটি প্রথম শনাক্ত হয়। গামবোরো হলে মুরগির লসিকা গ্রন্থি বারসাকে আক্রান্ত করে বলে একে ইনফেকসাস বারসাল ডিজিজ-ও বলা হয়।

মুরগির গামবোরো রোগ বিরনা নামক ভাইরাসের ফলে হয়ে থাকে। যদিও এর দুটি সেরোটাইপ আছে তবে, একটিই (সেরোটাইপ-১) প্রোল্ট্রির ক্ষতির কারণ। ভাইরাসটি মুরগির ‘বারসা ফেব্রিসিয়াস’ কে আক্রান্ত করে। এর ফলে মুরগির প্রতিরোধ ক্ষমতা, খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা কমে যায়। সাধারণত শতকরা ৩০ ভাগ মুরগির এ রোগ হলে মৃত্যু হয়। মুরগি মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে সে ক্ষেত্রে এর চেয়েও পরিমাণে মারা যেতে পারে।

সেরোটাইপ-১ শধুমাত্র মুরগিকে আক্রান্ত করে। সেরোটাইপ-২ মুরগী, টার্কি, পেঙ্গুইনসহ বেশ কিছু বন্য পাখির হতে দেখা যায়। তবে এটির তেমন কোনো প্রভাব নেই।

গামবোরো বা ইনফেকসাস বারসাল ডিজিজ একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। সাধারণত সংক্রামিত বা আক্রান্ত মুরগি থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এবং খুব দ্রুতই সমস্ত ফ্লকে এটি বিস্তার লাভ করে। ভাইরাসটি সহজেই একটি শেড বা ফার্ম থেকে অন্য শেডে যেতে পারে। অধিক ঘনত্বে মুরগি পালন, বিভিন্ন বয়সের মুরগি একসঙ্গে রাখা, দুটি ব্যাচের মাঝের সময় শেড খালি না রাখা ও বায়োসিকিউরিটিসহ বেশ কিছু কারণে গামরোরো হতে পারে। প্যারেন্টস থেকে বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও গামবোরো রোগের কারণ হতে পারে।

মুরগির গামবোরো রোগ হলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন মুরগি দুর্বল, নিস্তেজ ও ডিহাইড্রেট হয়ে পড়ে। মুরগি পাতলা পায়খানা করে এবং পায়াখানা সাদা চুনের মতো দেখায়। এক জায়গায় বসে থাকে, নড়াচড়ায় অনীহা প্রকাশ করে। মুরগির পালক উস্কোখুস্কো থাকে। মুরগির শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। হঠাত করেই শুরু হয় ও মৃত্যুহার বেড়ে যায়। ভেজা মলদ্বার দেখা যায়।

এছাড়াও এই রোগ হলে মুরগির অভ্যন্তরীণ কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন পা ও রানের মাংসের ওপর ছোপ ছোপ রক্তের ছিটা দেখা যায়। মুরগির বারসা ফুলে যায় এবং বার্সা কাটলে ভিতরে রক্তের ছিটা দেখা যায়। কলিজা বেশ বড় ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কিডনি বড় হয়ে যায়।

গামবোরো হলে মুরগির ডিহাইড্রেশন হয়। ফলে মুরগির প্রচুর ইলেক্ট্রোলাইট ঘাটতি পড়ে। এজন্য স্যালাইন পানি বা অনেকে গুড়ের পানি সরবরাহের কথা বলে থাকেন। দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য এন্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে।

সাধারণত ভাইরাসজনিত রোগের কোনো চিকিৎসা নাই। প্রতিরোধই সর্বোত্তম ব্যাবস্থা। এর জন্য টীকা বা ভ্যাকসিন রয়েছে। সঠিক ভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও বায়োসিকিউরিটি মেনে চললে গামবোরো থেকে মুক্ত থাকা যায়।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ