• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

চাষের মাছ উৎপাদনে সেরা তিন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৬ আগস্ট ২০২২  

মৎস্য খাতে বাংলাদেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও স্বীকৃতি পেয়েছে। একই সঙ্গে দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারে অবদান রাখছে মৎস্য খাত। এছাড়াও বর্তমানে দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে মাছ।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। বিশ্বে স্বাদুপানির মাছের ১১ শতাংশ এখন বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে। চাষের মাছ উৎপাদনে সেরা তিন দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। তালিকার অন্য দুই দেশ ভিয়েতনাম এবং মিশর।

মৎস্য আহরণ ও উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গৌরবের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম, ইলিশ আহরণে ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ অবস্থানে রয়েছে। ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার, ২০২২’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও চাষের মাছ উৎপাদনে তিনটি দেশ বিশ্বের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করছে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম এবং আফ্রিকায় মিশর এই সাফল্য দেখিয়েছে।

বর্তমানে দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে মাছ। মাথাপিছু প্রতিদিন ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে মানুষ এখন ৬২ দশমিক ৫৮ গ্রাম মাছ গ্রহণ করছে। দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এখন মৎস্য খাতের অবদান। বিগত ১২ বছরে মৎস্য খাতে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট মাছের উৎপাদন ছিল ২৭ দশমিক ১ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৪৬ দশমিক ২১ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সামুদ্রিক মাছের অবদান ৬ দশমিক ৮১ লাখ মেট্রিক টন, যা দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।

ইলিশ আহরণে বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল

বিশ্বে ইলিশ আহরণকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মাছের ১২ দশমিক ২২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশের অধিক, যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালে ‘বাংলাদেশের ইলিশ’ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই সনদ লাভ করেছে। ফলে পৃথিবীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের অধিক ইলিশ আহরণকারী বাংলাদেশ এখন থেকে বিশ্বে উপস্থাপিত হবে ইলিশের দেশ হিসেবে।

ইলিশ সম্পদ রক্ষায় এবং উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানা কর্মসূচি নিয়েছে। জাটকা সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাশাপাশি নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন এবং জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের চার মাস ভিজিএফ খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মা-ইলিশ রক্ষায় প্রধান প্রজনন মৌসুমে মোট ২২ দিন দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন ও মজুত বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সরকারের এ ব্যাপক কর্মযজ্ঞের কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হয়েছে। এটি ২০১০-১১ অর্থবছরে ইলিশের মোট উৎপাদনের (৩ দশমিক ৪০ লাখ মেট্রিক টন) চেয়ে ৬৬ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। এছাড়াও ‘হিলশা ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে ইলিশের উৎপাদন ২০০৪-০৫ থেকে ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত গড়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ ফেরাতে উদ্যোগ

দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবং বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ বাঙালির পাতে ফিরিয়ে আনতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গবেষণা এবং উদ্ভাবনে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশীয় মাছ সংরক্ষণে এ পর্যন্ত ৩৬ প্রজাতির দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন কৌশল ও চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠা করেছে দেশীয় মাছের লাইভ জিন ব্যাংক। এই জিন ব্যাংকে এখন পর্যন্ত ১০২ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সম্প্রতি দেশের ১০ জেলার ৪৯ উপজেলায় ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তর। দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও চাষ সম্প্রসারণ, শামুক ও ঝিনুক সংরক্ষণ এবং মুক্তা চাষ সম্প্রসারণে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি দ্রুত বর্ধনশীল ও প্রায় ২০ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল উন্নত জাতের ‘বিএফআরআই-সুবর্ণ রুই’ উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রজাতি বৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে নিয়মিতভাবে পোনা অবমুক্ত ও বিল নার্সারি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিপন্নপ্রায় মৎস্য প্রজাতির সংরক্ষণ, অবাধ প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ৪৯৪টি অভয়াশ্রম রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের রপ্তানি নিশ্চিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় তিনটি মাননিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ি রপ্তানি অব্যাহত রাখতে চাষি পর্যায়ে রোগমুক্ত এবং মানসম্পন্ন পোনা সরবরাহে কক্সবাজার, সাতক্ষীরা ও খুলনায় তিনটি পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মৎস্যচাষ পর্যায়ে ওষুধের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ‘অ্যাকোয়াকালচার মেডিসিনাল প্রোডাক্টস নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

রপ্তানিতে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের অবদান

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য। বর্তমানে বিশ্বের ৫২টি দেশে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদের উন্নয়ন এবং এসব পণ্যের রপ্তানি উৎসাহিত করতে দেশব্যাপী কাঁকড়া, কুঁচিয়া ও সিউইডের চাষ সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলমান।

বাংলাদেশ থেকে প্রধানত গলদা, বাগদা, হরিণাসহ বিভিন্ন জাতের চিংড়ি; স্বাদুপানির মাছ যেমন- রুই, কাতলা, মৃগেল, আইড়, টেংরা, বোয়াল, পাবদা, কৈ প্রভৃতি এবং সামুদ্রিক মাছের মধ্যে ভেটকি, দাতিনা, রূপচাঁদা, কাটল ফিশ, কাঁকড়া ইত্যাদি রপ্তানি হয়। এছাড়াও শুঁটকি মাছ, মাছের আঁশ এবং চিংড়ির খোলসও রপ্তানি হয়। বর্তমানে চাষসহ প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরিত কাঁকড়া ও কুঁচিয়া বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

রপ্তানি করা এসব মৎস্যজাত পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশই ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্টস। বাংলাদেশ থেকে সাধারণত আইকিউএফ, কুকড, ফিশ ফিলেট ইত্যাদি ভ্যালু অ্যাডেড মৎস্যপণ্য রপ্তানি হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের ৫২টি দেশে বাংলাদেশের মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি হয়। কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্ত্বেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ফলে সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৪ হাজার ৪২ দশমিক ৬৭ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মাধ্যমে ৫ হাজার ১৯১ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা আয় হয়েছে, যা বিগত বছরের চেয়ে ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি।

১৯৭৪ সালে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর মাধ্যমে সমুদ্র ও এর সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক জলসীমায় আমাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এর মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে।

সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের মজুত নিরূপণ, এ খাতে দক্ষ জনবল সৃষ্টি, যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং গভীর সমুদ্রে মাছের টেকসই আহরণের মাধ্যমে সমুদ্র অর্থনীতির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো সম্ভব। এই লক্ষ্যে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উপকূলীয় জলাশয়ে মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ও সিউইড চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এ বিষয়ে কাজ করছে।

‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্পের আওতায় সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের সর্বোত্তম আহরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরে এ পর্যন্ত ৩৮টি সার্ভে ক্রুজ পরিচালনা করা হয়েছে। আরভি ‘মীন সন্ধানী’ নামক মৎস্য গবেষণা ও জরিপ জাহাজের মাধ্যমে চালানো অনুসন্ধানে ৪৫৭ প্রজাতির মৎস্য ও মৎস্যজাতীয় প্রাণী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়াও সমুদ্রে টুনা ও পেলাজিক মৎস্য আহরণের জন্য আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য সামুদ্রিক মৎস্য আইন, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় প্রতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন সামুদ্রিক জলসীমায় সব ধরনের নৌযান দিয়ে মৎস্য আহরণ বন্ধ হচ্ছে। ফলে বঙ্গোপসাগরে বিলুপ্তপ্রায় মাছের মজুত বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন মাছ নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ পাচ্ছে। সরকার গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপের কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে সামুদ্র্রিক মাছের উৎপাদন ৬ দশমিক ৮১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নিত হয়েছে, যা ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট উৎপাদনের (৫ দশমিক ৪৬ লাখ মেট্রিক টন) চেয়ে ২৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রোজাউল করিম  বলেন, দেশের মৎস্য খাতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় সরকারের সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক নীতি গ্রহণ, মৎস্য গবেষণার উন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তি সম্প্রসারণসহ নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবং বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গবেষণা ও উদ্ভাবনে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের উদ্যোগে দেশীয় মাছের লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে, যেখানে এখন পর্যন্ত ১০২ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। দেশের কোনো অঞ্চল থেকে কোনো বিশেষ প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেলে জিন ব্যাংক থেকে সেসব অঞ্চলে হারিয়ে যাওয়া মাছ আবার চাষ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রজাতি-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে নিয়মিতভাবে পোনা অবমুক্তি ও বিল নার্সারি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে আমরা মাছে-ভাতে বাঙালির পুরনো ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনতে চাই।

পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখার অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে আমরা মৎস্য খাতকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তবে শুধু মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, বরং মানসম্মত ও নিরাপদ মাছ উৎপাদন ও সরবরাহে সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা, মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ, উত্তম মৎস্য চাষ অনুশীলনসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে- যোগ করেন মন্ত্রী।

গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। এ উত্থানের বাজারে সপ্তাহজুড়েই দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে পচা কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত জেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স।

কোম্পানিটিটির শেয়ার এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে থাকায় সপ্তাহজুড়েই দাম বেড়েছে। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে এই কোম্পানিটি।

গেলো সপ্তাহজুড়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের শেয়ার দাম বেড়েছে ৩৫ দশমিক ১১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৩ টাকা ৩০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৯ টাকা ৪০ পয়সা।

এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি লোকসানে নিমজ্জিত থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। সর্বশেষ ২০১৩ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। এরপর আর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ১২ টাকা ২০ পয়সা লোকসান করেছে।

এমন লোকসান করা কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়া নিয়ে সতর্ক করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। তারপরও দাম বাড়ার প্রবণতা থামেনি। ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়।

তার জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে এবং লেনদেন বেড়েছে, তার জন্য কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

এদিকে, দাম বাড়লেও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ তাদের কাছে থাকা কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে চাননি। ফলে সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে তিন কোটি চার লাখ ৬৫ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৭ লাখ ৬ হাজার টাকা।

গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা মালেক স্পিনিংয়ের শেয়ার দাম বেড়েছে ৩২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইল।

এছাড়া দাম বাড়ার শীর্ষ দশে স্থান করে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ওরিয়ন ইনফিউশনের ২৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, মোজাফ্ফর হোসেন স্পিনিংয়ের ২৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ২৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, গ্লোবাল হেবি কেমিক্যালসের ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, অলেম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ২৩ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং এফএএস ফাইন্যান্সের ২৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ দাম বেড়েছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ