• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

পুত্র শাসাকেই বদলাতে পারছেন না মতিউর!

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০২৩  

‘এ ছেলেই (শাসা) আমার সাংবাদিকতার ক্যারিয়ারে কলঙ্ক নিয়ে আসছে’, আক্ষেপের সুরে এ কথা বলেছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ওরফে বাচ্চু।

মতিউরের ছেলে মাহমুদুর রহমান শাসার কাছে গ্রাফোসম্যান প্রিন্টিংয়ের কর্ণধার মোশাররফ হোসেনের পাওনা প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা পরিশোধ না করা ও তারই ফলে মৃত্যুপথযাত্রী ওই ব্যবসায়ীর ওপর বাংলানিউজে একটি মানবিক রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তার এক আস্থাভাজন কর্মীর কাছে এ মন্তব্য করেছেন।

আক্ষেপ করে তিনি বলেছেন, শাসার জন্য আমার গায়ে যে কালিমা লেগেছে, বাংলাদেশে কোনো সম্পাদকের গায়ে সন্তানের জন্য এমন কালিমা লাগেনি।

‘বদলে যাও বদলে দাও’ স্লোগানের তকমা লাগিয়ে দেশবাসীকে বদলানোর সবক দিলেও প্রথম আলোর সম্পাদক তার নিজের ঘরেই বদলে দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন শত অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খলতা।

মতিপুত্র শাসার শিক্ষার দৌড় কোনোকালেই গতি পায়নি। তাই ঠেলতে ঠেলতে সেটি যে কোন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে তা অজানা। তবে সন্তানদের শিক্ষা ও ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা নিয়ে যে মতিউর সুখী নন তা তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানেন।

শিক্ষায় বড় না হলেও অন্তত প্রভাব প্রতিপত্তিতে বড় মতিউরপুত্র শাসা। অ্যানেক্স কমিউনিকেশন লিমিটেড-এর শীর্ষ পদটি ছাড়াও সফটওয়্যার সলিউশন অ্যান্ড লজিস্টিক এন্টারপ্রাইজ (এসএসএলই) নামে একটি প্রতিষ্ঠানেরও কর্তাব্যক্তি মাহমুদুর রহমান শাসা। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানেরও বড় কিছু ক্লায়েন্ট রয়েছে। মোবাইলফোনে কনটেন্ট সরবরাহ ও বিভিন্ন ধরনের আইটি সলিউশন এর কাজ। তবে এর প্রধান ক্লায়েন্ট দৈনিক প্রথম আলো। বাবার প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ব্যবসায় ছেলের প্রতিষ্ঠান কামিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। এছাড়াও এবিসি রেডিও’র (ট্রান্সকম গ্রুপের এফএম রেডিও স্টেশন) এসএমএস বাণিজ্যও এককভাবে পরিচালিত হয় শাসার এসএসএলই’র মাধ্যমে।

আইটি বিষয়ক কোনো ধরনের ডিগ্রি ছাড়াই আইটি খাতের এত বিশাল বাণিজ্য কিভাবে ফেঁদেছেন শাসা এমন প্রশ্নে তার সহকর্মীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এসএসএলই’র বাণিজ্য চলছে শাসার ম্যানেজিং পার্টনার ও সিইও রাশেক রহমানের হাতে।

জানা যায়, অ্যানেক্স কমিউনিকেশন লিমিটেডেরও বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান শাসা। প্রথম দিকে এ প্রতিষ্ঠানের সভা প্রথম আলোর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতো। মাঝেমধ্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান অ্যানেক্স কমিউনিকেশন লিমিটেডের সভায় সভাপতিত্ব করতেন। ব্যবসায় ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি এ উদ্যোগ নিতেন।

জানা গেছে, প্রথম আলোর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে শাসা দেশের অনেক বড় বড় ইভেন্টের কাজ পেয়েছেন। প্রথম আলোর অনেক বিজ্ঞাপনই অ্যানেক্সের মাধ্যমে আসা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের অন্যতম প্রধান একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্ণধার বলেন, শাসা অ্যানেক্সের মাধ্যমে রীতিমতো মস্তানি শুরু করেছেন। বড় বড় ইভেন্টগুলো ধরছেন। শাসার ভয়ে অনেকেই অ্যানেক্সকে কাজ দিতে বাধ্য হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, ব্যবসায়িক কারণে মনোমালিন্য হলেই শাসা প্রথম আলোর ভয় দেখান।

একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপনী সংস্থার ব্যবস্থাপক বলেন, `শাসা সম্পর্কে না পারছি বলতে, না পারছি সইতে। প্রথম আলোর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিজ্ঞাপনী সেক্টরকে ধ্বংস করছে শাসা। শাসা চাচ্ছে প্রথম আলোর সব বিজ্ঞাপনই অ্যানেক্সের মাধ্যমে আসুক। `

এভাবে মতিউর রহমান তার ছেলের মাধ্যমে ‘গাছেরও খাই তলারও কুড়াই’ পদ্ধতিতে কোটি টাকা কামিয়ে নিলেও ছেলের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একেবারেই অখুশি।

বাণিজ্যের টাকা হাতিয়ে রাজধানীর হোটেলে হোটেলে ব্যস্ত সময় কাটে শাসার। এ বক্তব্য তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর শুক্রাবাদের ‘এরাম হোটেল অ্যান্ড বার’-এর রাতের পরিবেশটা ভীষণ পছন্দ মাহমুদুর রহমান শাসার। আলো-আঁধারি পরিবেশ। রুমজুড়ে মদের ঝাঁঝালো গন্ধ। এয়ারকন্ডিশন্ড কক্ষে ঘুরপাক খায় সিগেরেটের ধোঁয়া। মন্দ লাগে না শাসার।

রাজধানীর অভিজাত অনেক বার (মদের হোটেল) এর চাইতে পুরাতন এই বারটাই বেশি পছন্দ প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সুযোগ্য সন্তান (!) শাসার। শাসার যেমন ‘এরাম’ বেশি পছন্দের তেমনি শাসাকেও পছন্দ করে এখানে কর্মরত কয়েকজন ওয়েটার।

পেশাগত পরিচয় গোপন রেখে ওয়েটারদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায় শাসার ছবি দেখাতেই দু’জন ওয়েটার বলে আরে এ তো আমাদের শাসা স্যার!

শাসা সম্পর্কে একজন ওয়েটারের মূল্যায়ন ‘স্যার অনেক ভালো মানুষ! মদ খাইতে আসলে একশ টাকার নিচে কখনো বকশিশ দেয় না। তিনজন দাঁড়ালে তিনজনকেই বকশিশ দেয়। ’
আরেকজন ওয়েটার শাসার ভালো দিক মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, ‘স্যার ৬/৭ পেগ খেলেও স্বাভাবিক থাকে। শুধু চোখগুলান লাল হয়। ’

পিতা মতিউর রহমান প্রথম আলোর মাধ্যমে মাদকবিরোধী আন্দোলন করছেন। লিখছেন, সভা-সেমিনার করছেন, মানুষকে শপথ করাচ্ছেন ‘মাদককে না বলতে’ আর তার পুত্রের সন্ধ্যা রাতের সময় পার হয় সুরা পান করতে করতে!

শাসার এ মদপানের কথা স্বীকার করেছেন শাসার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারী। শাসার পক্ষ নিয়ে অবশ্য তিনি বলেছেন, ‌‘স্যার মদ খেলেও আপনি তাকে কোনোভাবেই মাদকাসক্ত বলতে পারবেন না। উনিতো ফেনসেডিল খায় না। গাঁজা খায় না। ভালো জায়গায় গিয়ে ড্রিংক করে। ’

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, শাসার মদপান নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন মতিউর রহমান। অনেকবার ফেরাতে চেয়েছেন শাসাকে; কিন্তু শাসা বাবার শাসন কিছুতেই মানছেন না। অনেক আগে থেকেই শাসা মদপান করে আসছেন। কয়েক বছর আগে শাসাকে ত্যাজ্যপুত্র করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন মতি। কিন্তু শাসা বাবার কোনো কিছুই পরোয়া করছেন না।

প্রথম আলোর মাধ্যমে ‘বদলে যাও বদলে দাও’ এর স্লোগান তুললেই নিজের সন্তানকে বদলাতে পারছেন না মতি।

জানা যায়, শাসার বন্ধু-বান্ধবদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। মতিও এসব সম্পর্কে অবগত।

বখে যাওয়া ছেলেকে ফেরাতে মতি শেষপর্যন্ত শাসাকে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। অ্যানেক্স কমিউনিকেশন লিমিটেড নামক বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানটি করে দিয়ে মতি তখন বলেছিলেন, ‘অ্যাড ফার্মের কাগজপত্রসহ সব ওকে করে দিয়েছি। এবার এটা দিয়া ধান্ধা করো। তোমার অস্ত্র প্রথম আলো। এমনভাবে কাজ করবে যাতে সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে। ’ অ্যানেক্সের সাবেক একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ