• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে মহাবারুণীর পূণ্যস্নানে মতুয়ারা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২১  

নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত আধ্যাত্মিক পুরুষ পূণ্যব্রহ্ম শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের লীলাভুমি মতুয়াদের মূল পীঠস্থান গোপালগঞ্জের শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে মহাবারুণীর পূণ্যস্নান সমাপন করছেন মতুয়া ভক্তরা। স্নানোৎসবে যোগ দিতে লকডাউন উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন মতুয়ারা। ভোর হতে না হতেই ঠাকুরবাড়িতে সমাগম ঘটে হাজারও মানুষের। ব্রহ্মমুহূর্তের শুভক্ষণে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ির পুকুরে এ পূণ্যস্নান শুরু হয়।

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ভোররাত ৪টা ৫২ মিনিটে ঠাকুরবাড়ির ‘শান্তিসাগর’ ও ‘কামনা সাগর’ পুকুরে খুলনার তেরখাদা থেকে আগত তিনকড়ি মিয়াদের পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে এ পূণ্যস্নান শুরু হয়। এরপর ঠাকুরবাড়ির গদিনসীন ঠাকুর শ্রীশ্রী শচিপতী ঠাকুর, বাংলাদেশ মতুয়া মিশনের সভাপতি ও ঠাকুরবাড়ির অন্যতম সদস্য পদ্মনাভ ঠাকুর, ঠাকুরবাড়ির ছোট মা বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি সীমা দেবী ঠাকুরাণী এবং ঠাকুরবাড়ির অন্যতম সদস্য ও কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুরসহ ঠাকুরবাড়ির সদস্যগণ স্নান করে বিশ্ববাসীর মঙ্গল তথা করোনা-মুক্তি প্রার্থনা করেন।

পরে আগত সকল মতুয়া ভক্তরা পুকুর দুটিতে পর্যায়ক্রমে স্নান সমাপন করেন এবং সকল ব্যাধিসহ বিশ্বব্যাপী করোনামুক্তির প্রার্থনা করেন। স্নান সেরে তারা শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে গিয়ে প্রণাম ও প্রার্থনা করেন। পরে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে প্রতিবছরই ওড়াকান্দিতে অনুষ্ঠিত হয় তিনদিনব্যাপী মহাবারুণী মেলা ও স্নানোৎসব। লাল নিশান উড়িয়ে পদব্রজে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে হরিবোল হরিবোল ধ্বনিতে ঠাকুরবাড়িতে আগমন ঘটে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মতুয়াভক্তের। করোনামহামারীর কারণে গতবছর সকল আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছিল। এবারও একই কারণে বন্ধ রাখা হয় স্নানোৎসবসহ সকল আয়োজন। তারপরও লকডাউন উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ডঙ্কা-কাঁসর বাজিয়ে দলে দলে অগণিত ভক্ত আসতে থাকেন ওড়াকান্দিতে। ভোর হতে না হতেই ঠাকুরবাড়িতে সমাগম ঘটে হাজারও মানুষের। ভক্তরা পূণ্য ও তাদের মনষ্কামনা লাভের আশায় ঠাকুরবাড়ির পুকুর দুটিতে স্নান করেন। আর নিজেদের তথা বিশ্বের সকল জীবের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে প্রার্থনা করেন। তাদের অনেকেই জানিয়েছেন করোনাকে জয় করতেই লকডাউন উপেক্ষা করে তারা এই পূণ্যভূমি শ্রীধামে এসেছেন। এবার মতুয়া-ভক্তরা ঠাকুরবাড়িতে স্নান সমাপন করলেও বৃহদাকারে কোনো উৎসব বা মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।

২১০ বছর আগে ১২১৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথির ব্রহ্ম মুহূর্তে মহাবারুণীর এ দিনে আবির্ভূত হয়েছিলেন পূণ্যব্রহ্ম শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর। ছেলেবেলা থেকেই তার অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন এবং ছড়িয়ে পড়ে শ্রীধাম ওড়াকান্দির নাম। পরবর্তীতে দেশ-বিদেশের মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে এটি পরিণত হয় তীর্থস্থানে। বিশ্বের সকল মতুয়া ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়ি তাদের পবিত্র পূণ্যভূমি বলেই বিশ্বাস করেন।

বাংলাদেশ মতুয়া মিশনের সভাপতি ও ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ির অন্যতম সদস্য শ্রীশ্রী পদ্মনাভ ঠাকুর আরটিভি নিউজকে বলেন, লকডাউনের এ পরিস্থিতিতে আগেভাগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে খবর পৌঁছে দেয়া হয়েছে ঠাকুরবাড়িতে জনসমাগম না করার জন্য। গতবছরও এ দিনে এখানে কোন উৎসব বা মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। যে কারণে এবারে না বলার পরও বিভিন্ন জেলা থেকে অগণিত ভক্ত ওড়াকান্দিতে এসে পৌঁছেছেন। সন্ধ্যায় শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১০ তম জন্মতিথী উপলক্ষে ঠাকুরের মন্দিরে ২১০টি মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করে বিশ্ববাসীর কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ