• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জের ৭ খালে কচুরিপানা, বিপাকে এলাকাবাসী

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৬ জুন ২০২২  

গোপালগঞ্জ সদর ও কাশিয়ানী উপজেলার উপর প্রবাহিত সাতটি খালের পানি এখন দেখা যায় না। পানির বদলে শুধু চোখে পড়ে কচুরিপানার সবুজ গালিচা। এই খালগুলোর পানি আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষ গৃহস্থালি ও কৃষিকাজে ব্যবহার করে। কচুরিপানা পচে পানি অপরিষ্কার হয়ে পড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কায় রয়েছে এলাকার মানুষ। এলাকায় বেড়েছে মশা-মাছির উপদ্রব। এছাড়া পলি পড়ে খালগুলোর নাব্যতাও কমে গেছে। এক সময় নৌকা চলাচল করলেও এখন আর সেই অবস্থা নেই। এলাকাবাসী ভোগান্তি কমাতে খাল খনন ও কচুরিপানা অপসারণের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর মাথাভাঙা থেকে নিজড়া ইউনিয়নের বটবাড়ি খাল, নারিকেল বাড়ি খাল, কাশিয়ানী উপজেলার নিজাকান্দি ইউনয়িনের তলাতলা বসরত খাল থেকে নিজড়া ইউনিয়নের মৃধাবাড়ি খাল, মোল্লাকান্দি খাল, ছোয়ানিপাড়া খাল, কাঠালবাড়ি ও  বিদ্যাধর খালে যেন এখন কচুরিপানার রাজত্ব।
নিজড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী মিনা ধলু বলেন, এসব খাল দিয়েই নিজড়া  ইউনিয়নের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। খালগুলো নিজড়া ইউনিয়নের প্রাণ। ফসল চাষাবাদের জন্য এসব খালের পানি ব্যবহার করেন ইউনয়নবাসী।
তিনি জানান, গোসল, রান্নাবান্না, কাপড় ধোয়াসহ গৃহস্থালীর সব কাজ এসব খালের পানি দিয়েই করা হতো। নৌযানে কম খরচে পণ্য পরিবহন করা যেত। এ ছাড়া মাছ শিকার করে এলাকার অসংখ্য পরিবার জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। খালে পলি জমে এখন ভরাট হয়ে গেছে। খালে পানি প্রবাহ নেই। কচুরিপানা পচে খালের পানি অপরিষ্কার হয়ে আছে।
“কচুরিপানা ও নাব্যতা সংকটের  কারণে এ অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির শেষ নাই। এই সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দাবি করছি। এটা এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি।”
নিজড়া গ্রামের ফরিদ আহম্মেদ মিনা ও মাকসুদুর রহমান বলেন, এসব খালের পানি নিজড়া, নিজড়া পশ্চিমপাড়া, মধ্যপাড়া, মিনাপাড়া, দোয়ানিপাড়া, বটবাড়ী, বিদ্যাধর, নারিকেল বাড়ি, সাতবাড়ি, কাঠালবাড়ি, মোল্লাকান্দি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার  পরিবার রান্না-বান্নাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করে থাকে।
এছাড়া ১০ হাজার একর জমিতে কৃষিকাজে এসব খালের পানি সেচের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয় বলে তারা জানান।
তারা আরও জানান, খালগুলো কচুরিপানায় ভরে গেছে। খাল সাতটি পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। নাব্যতা সংকটের কারণে এসব খাল দিয়ে নৌকা চলাচল করতে পারে না। এ কারণে বিলের জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে কৃষক পরিবারগুলোর দুর্ভোগের শেষ নেই।
মাকসুদুর রহমান বলেন, “পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কচুরিপানা পচে পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ১০টি গ্রামে বেড়েছে মশা মাছির উপদ্রব।”
নিজড়া গ্রামের গৃহবধূ নাজমা খানম বলেন, “খালের পানি পচে গেছে। এ পানি কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারছি না। তাই পানির কষ্টে আছি। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।”
বটবাড়ি গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, “ধান কেটে নৌকায় বাড়ি নিতে পারছি না। কৃষাণ দিয়ে ধান বাড়ি নিতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। খাল খনন না করলে আগামী মৌসুমে সেচের পানি পাওয়া যাবে না। তাই আমরা দ্রত খাল খননের দাবি জানাচ্ছি।”
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক বলেন, দূষিত পানি ব্যবহার করলে মানুষের শরীরে চর্মরোগ হতে পারে। পান করলে ডায়রিয়া, আমাশয়, টায়ফয়েড দেখা দিতে পারে। তাই এ পানি পান ও ব্যবহার না করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, এ পানিতে জন্ম নেওয়া মশা ম্যালেরিয়া রোগ ছড়াতে পারে। তাই এসব রোগ প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কোনো কাজেই এ পানি ব্যবহার করা যাবে না।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহসিন উদ্দিন বলেন, দ্রুত খাল থেকে কচুরিপনা অপসারণ করা হবে। এরপর খাল খননের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ দুটি কাজ সম্পন্ন করে নিজড়া ইউনয়নবাসীকে পানি সমস্যা থেকে রক্ষা করা হবে।
দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ