• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জে পাটের বাজারে তেজিভাব

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১ আগস্ট ২০২২  

জেলায় পাটের বাজারে তেজিভাব বিরাজ করছে। ২৬ দিন আগে থেকে গোপালগঞ্জের বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করে। এখন হাট-বাজারে পাটের আমদানী বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে পাটকল গুলোতে বেড়েছে পাটের চাহিদা। এ কারণে প্রতি হাটেই পাটের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাটের ভালো  দাম পেয়ে খুশি পাট চাষিরা। এ ব্যবসার সাথে জড়িতরাও আয় করছেন প্রচুর। সব মিলিয়ে জেলার পাটের ব্যবসা এ মুহুর্তে জমজমাট।
 গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় জানান,  এবছর গোপালগঞ্জ জেলায় ২৬ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে তোষা পাট ২৫ হাজার ৪১৯ হেক্টর, মেস্তা পাট ৫৮৬ হেক্টর ও দেশী পাট ১০৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। পাটের জাতের মধ্যে রয়েছে সিভিএল-১, ডি-১৫৪,ও-৭২,ও ৯৮৯৭, ইন্ডিয়ান বঙ্কিম, মহারাষ্ট্র, জেআরও-৫২৪,রবি-১, কেনাফ ও এফ-২৪। প্রতি হেক্টরে ২.৪ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হবে। সে হিসেবে  জেলায় পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হযেছে ৬২ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন পাট। ইতিমধ্যে জেলার ৪০ ভাগ পাট ক্ষেত থেকে কাটা হয়েছে। বাজারে পাটের দাম ভালো রয়েছে। তাই  এ পাট প্রায় ৪ শ’ কোটি টাকায় বিক্রির আশা করছি । এবছর পাট চাষের অনুকূল পরিবেশ ছিল। তাই গোপালগঞ্জে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে কৃষকরে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় জেলার সব স্লুইচগেট খুলে দেয়া হয়েছে।
মুকসুদপুর উপজেলা সদরের পাট ব্যবসায়ী মোঃ আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, কোরবানীর ঈদের আগেই হাট-বাজারে নতুন পাট আসতে শুরু করে। তখন প্রতিমণ পাট ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে কেনা বেচা হচ্ছিল। ঈদের পর পাটকল গুলো পাট কিরতে শুরু করে। তারপর থেকেই পাটের দাম বাড়তে শুরু করে। শুক্রবার মুকসুদপুরের হাটে প্রতিমণ পাট ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পাটের বাজারে এখন তেজিভাব বিরাজ করছে। জুটমিল গুলো এভাবে পাট কেনা অব্যাহত রাখলে পাটের বাজার আরো বাড়তে পারে বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।
মুকসুদপুর উপজেলা সদরের অপর পাট ব্যবসায়ী শ্যামল কুন্ডু বলেন, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলে বেশ কিছু জুট মিল গড়ে উঠেছে। এরা প্রতিযোগিতা করে পাট কিনতে মাঠে নেমেছে। এ কারণে পাটের দাম বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে পাটের বাজার ভালো রয়েছে। তাই আমরা লাভবান হচ্ছি।  কৃষকও পয়সা পাচ্ছে।
মুকসুদপুর উপজেলার কাউনিয়া গ্রামের কৃষক সাত্তার মোল্লা (৫২) বলেন, পাটের ভালো দাম পেয়ে আমি খুশি। এ বছর শুরতেই পাটের বাজার ভালো পেয়ে  আমরা লাভবান। কারণ এ বছর ৫ বিঘা (৫০ শতাংশের বিঘা) বা ১ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করেছি। পানি সংকটের কারণে জমি থেকে পাট কেটে অন্যত্র জাগ দিতে হযেছে। এতে খরচ বেড়েছে। অন্যান্য বছর ১ হেক্টর জমিতে পাট চাষে ৭৫ হাজার টাকা খরচ হত। এ বছর ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারপরও খরচ বাদ দিয়ে ১ লাখ টাকা লাভ হয়েছে।
মুকসুদপুর উপজেরার গাড়লগাতী গ্রামের রবিউল শেখ (৪৭) বলেন, পানি নাই। তাই পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। ইতি মধ্যে পানি পচে গেছে। পচা পানিতে পাট গাজ দিচ্ছি। এতে পাটের রং ভালো হচ্ছে না। পাটের রং ভাল হলে আরো বেশি দামে পাট বিক্রি করতে পারতাম। তবে স্লুইচগেট খুলে দেওয়ায় আমাদের উপকার হচ্ছে।
মুকসুদপুর উপজেলার তারাইল গ্রামের আলমগীর হোসেন (৪৮) বলেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই খাল বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। আমাদের উচু জমিতে বেশি পাট হয়। এ পাট কেটে নিচু এলাকার খাল বিলে জাগ দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়েছে। কিন্তু পাটের ভালো দাম পেয়ে এ কষ্ট লাঘব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তোষা পাটের ৮০টি পাট কাঠির একটি বান্ডিল ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে পাট জাগ, পরিবহন, বাছাই ও শুকানোসহ সব ধরণের খরচ উঠে আসছে। সব মিলিয়ে পাটে এখন আমাদের সু-দিন ফিরেছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ