• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জের কৃষক পাটের ভালো দাম পেয়ে খুশি

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৫ আগস্ট ২০২২  

বৃষ্টি না থাকায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না গোপালগঞ্জের কৃষক। জাগ ভালোভাবে না দেওয়া হলে ভালো পাটের আঁশ মেলে না। আঁশ ভালো না হলে পাটের ভালো দামও মেলে না। আর এমন পরিস্থিতিতে পাট নিয়ে শংকায় পড়েছেন কৃষক। 

তারপরও যতটুকু পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে, তার আঁশ বাজাতে আসতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে পাটকলগুলোতেও বেড়েছে পাটের চাহিদা।

জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে জানা গেছে, গোপালগঞ্জে মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ভালো ফলন পায় কৃষক। জমি থেকে পাট কেটে বাড়ির উঠান, সড়কের দুই পাশে স্তুপ করছেন কৃষকরা। কিন্তু পাট কাটার এ সময়ে ভরা বর্ষা মৌসুম থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টি না থাকায় খাল-বিল আর ডোবা-নালায় দেখা দিয়েছে পানি শূন্যতা। ফলে কৃষকরা পাট পঁচাতে পারছেন না। এক পুকুরে অধিক পাট পঁচানোর ফলে আঁশের রং নষ্ট হয়ে কলো হয়ে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তারা।

বাজার ঘুরে জানা গেছে, এ বছর বাজারে পাট মন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩২শ টাকায়। কিন্তু পাটের রং কালো হয়ে গুণগত মান নষ্ট হলে দাম কমে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন পাট ব্যবসায়ীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় ২৬ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে তোষা পাট ২৫ হাজার ৪১৯ হেক্টর, মেস্তা পাট ৫৮৬ হেক্টর ও দেশি পাট ১০৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। পাটের জাতের মধ্যে রয়েছে সিভিএল-১, ডি-১৫৪, ও-৭২, ও-৯৮৯৭, ইন্ডিয়ান বঙ্কিম, মহারাষ্ট্র, জেআরও-৫২৪, রবি-১, কেনাফ ও এফ-২৪। প্রতি হেক্টরে ২.৪ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হবে। সে হিসেবে জেলায় পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬২ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন পাট। ইতোমধ্যে জেলার ৪০ ভাগ পাট ক্ষেত থেকে কাটা হয়েছে। বাজারে পাটের দাম ভালো রয়েছে। তাই এ পাট প্রায় ৪শ কোটি টাকায় বিক্রি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মুকসুদপুর উপজেলার কাউনিয়া গ্রামের কৃষক সাত্তার মোল্লা (৫২) বলেন, পাটের ভালো দাম পেয়ে আমি খুশি। এ বছর শুরুতেই পাটের বাজার ভালো পেয়ে আমরা লাভবান। তবে পানি সংকটের কারণে জমি থেকে পাট কেটে অন্যত্র জাগ দিতে হয়েছে। এতে আমার খরচ বেড়েছে। অন্যান্য বছর ১ হেক্টর জমিতে পাট চাষে ৭৫ হাজার টাকা খরচ হতো। এ বছর ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

গাড়লগাতী গ্রামের রবিউল শেখ (৪৭) বলেন, খালে পানি নাই। তাই পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পানি পচে গেছে। পচা পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং ভালো হচ্ছে না। পাটের রং ভাল না হওয়ায় বেশি দামে পাট বিক্রি করতে পারছি না।

মুকসুদপুর উপজেলার তারাইল গ্রামের আলমগীর হোসেন (৪৮) বলেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই খাল বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। আমাদের উচু জমিতে বেশি পাট হয়। এ পাট কেটে নিচু এলাকার খাল বিলে জাগ দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়েছে।

মুকসুদপুর উপজেলা সদরের পাট ব্যবসায়ী মো. আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, কোরবানির ঈদের আগেই হাট-বাজারে নতুন পাট আসতে শুরু করে। তখন প্রতিমণ পাট ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে কেনা বেচা হচ্ছিল। ঈদের পর পাটকলগুলো পাট কিনতে শুরু করে। তারপর থেকেই পাটের দাম বাড়তে শুরু করে। মুকসুদপুরের হাটে প্রতিমণ পাট ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাটের বাজারে এখন তেজিভাব বিরাজ করছে। জুটমিলগুলো এভাবে পাট কেনা অব্যাহত রাখলে পাটের বাজার আরো বাড়তে পারে বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।

মুকসুদপুর উপজেলা সদরের অপর পাট ব্যবসায়ী শ্যামল কুন্ডু বলেন- ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলে বেশ কিছু জুট মিল গড়ে উঠেছে। এরা প্রতিযোগিতা করে পাট কিনতে মাঠে নেমেছে। এ কারণে পাটের দাম বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে পাটের বাজার ভালো রয়েছে।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপ পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, এ বছর পাট চাষের অনুকূল পরিবেশ ছিল। তাই গোপালগঞ্জে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় জেলার সব স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ