• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জের দেলোয়ার ১ লাখ বৃক্ষ রোপণ করেছেন

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২ নভেম্বর ২০২২  

মোঃ দেলোয়ার হোসেন (৫৬)। সিএ পদে চাকরি করেন গোপালগঞ্জ ডিসি অফিসে। ‘স্বাস্থ্য আগে সম্পদ পরে, ওষুধি গাছ লাগান ঘরে ঘরে’ এ প্রতিপাদ্যে তিনি গোপালগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ওষুধিসহ বিভিন্ন বৃক্ষ রোপণ  করেছেন। ভবিষ্যতে বৃহত্তর ফরিদপুরসহ দেশে ওষুধি বৃক্ষে ছেয়ে দিতে চাইছেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
মোঃ দোলোযার হোসেনকে এ কাজে সহযোগিতা করছে ফেসবুকভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা সবাই পরের তরে’-এর স্বেচ্ছাসেবীরা।
মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় একযুগ আগে আমার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তাকে ঢাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সুফল পাইনি। পরে  ওষুধি গাছ থেকে ওষুধ তৈরি করে স্ত্রীকে সেবন করাই। এসব ওষুধ সেবন করেই আমার স্ত্রী সুস্থ হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর মতো সবাইকে আমি সুস্থ দেখতে চাই। তাই নিজ অর্থায়নে ও বন্ধুদের  সহযোগিতায় বীজ সংগ্রহ ও নার্সারি থেকে বৃক্ষ কিনে গত ৫ বছরে মানুষের কল্যাণে ১ লাখ বৃক্ষ  রোপণ করেছি।

২০১৮ সালে ৫০০, ২০১৯ সালে ১৫ হাজার ৫০০, ২০২০ সালে ২৬ হাজার,২০২১ সালে ২৮ হাজার ও ২০২২ সালে ৩০ হাজার  ওষুধি, বনজ, ফলজ বৃক্ষের চারা রোপণ করেছি। এগুলো মধ্যে রয়েছে আমলকি, হরিতকি, বহেড়া, নিশিন্দা, অশোক, বাসক, র্অজুন, আমড়া, জাম্মুরা,লেবু, আম, জাম, সজিনা, চালতা, অড়হর, কাঁঠাল, পেয়ারা,শিউলী, বকফুল, গোলাপ,ফনিমনসা,ওলোটকম্বল, তাল গাছ,  আকাশমনি, মহেগনি, সিরিজ, কৃষ্ণচূড়া,বকুল, বভিন্ন জাতের তুলসী, এ্যালোভেরা,গন্ধভাদালিয়া, পুদিনাসহ   ৩০ প্রজাতরি বড় এবং গুম্ম জাতীয় গাছ।       

বৃক্ষ প্রেমী দেলোয়ার হোসেন বলেন,  গাছের গুণাগুণ নিয়ে ‘সুস্বাস্থ্যের যাদু’ নামে একটি বই লিখেছি। বইটি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বাজারে রয়েছে। এ বইয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ গাছের গুণাগুণ ও ইউনানী চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে পারছেন। এ থেকে তারা উপকৃত হচ্ছেন। এছাড়া এ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্রেস্ট পেয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ওষুধি গাছ ও ফলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে যেখানেই ফাঁকা জায়গা পাই সেখানেই ওষুধি বৃক্ষ রোপণ করি। ওষুধি গাছ, ফল ও ওষুধের গুণাগুণ দিয়ে স্থানীয়দের অবহিত করি। অনেকেই আমার পরামর্শ নিয়ে ওষুধি বৃক্ষের বদৌলতে সর্দি, কাশি, জ্বরসহ অন্যান্য রোগ থেকে উপকৃত হচ্ছে। আমি  প্রতিদিন আমলকি, হরিতকি, বহেরা সহ বিভিন্ন উপকারী ওষুধি ফল মানুষের মধ্যে বিতরণ করি। এ সম্পর্কে তাদের অবহিত করি। তিনি বলেন, এ বছর আমি গোপালগঞ্জে ৩০ হাজার ওষুধি বৃক্ষ রোপণ করেছি। আমি ভবিষ্যতে বৃহত্তর ফরিদপুরসহ দেশে ওষুধি বৃক্ষ রোপণ করতে চাই। দেশ ওষুধি বৃক্ষে ছেয়ে দিতে চাই। এটি করা গেলে মানুষ ওষুধি গাছ থেকে উপকৃত হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে। আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করছে  ‘আমরা সবাই পরের তরে’-এর স্বেচ্ছাসেবীরা।

আমরা সবাই পরের তরে’ সংগঠনের সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, মো. দেলোয়ার হোসেন  ওষুধি বৃক্ষ রোপণ করে জেলাকে ওষুধি বৃক্ষে  সমৃদ্ধ করছেন।  আমরা তার এ মহৎ কাজে সহায়তা করছি। তার রোপণ অভিযান যতদিন চলবে, তত দিন আমরা তার পাশে থাকবো।

গোপালগঞ্জ শহরের শিশুবন এলাকার হালিমা বেগম বলেন, দেলোয়র গাছ রোপণ করেন। আমাদের পরামর্শ দেন। এ গাছ ও ফল থেকে থেকে আমরা  সর্দি, কাশি, আমশয়, পেটেরপীড়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় উপকার পাই। এতে আমাদের কোন টাকা লাগে না।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, মো. দেলোয়ার হোসেন উদ্যোগী হয়ে জীবন রক্ষাকারী  ওষুধি বৃক্ষ রোপণ করেছেন। এটি মানুষ ও পরিবেশের জন্য  খুবই উপকারী। এটি যেমন রোগের ওষুধ যোগায়, তেমনি নির্মল বায়ু দেয়।  ওষুধি বৃক্ষ থাকলে সাধারণ মানুষ ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকতে পারবেন। এ চিকিৎসায় পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই। এতে সাধারণ মানুষের আর্থ সাশ্রয় হয়। তাই তারা এ মহৎ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ