• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

কাশিয়ানী মুক্ত দিবস আজ ১৯ ডিসেম্বর

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২  

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী মুক্ত দিবস আজ ১৯ ডিসেম্বর।  ১৯৭১ সালের এ দিনে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। মিত্র ও মুক্তি বাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণে পাক বাহিনীর দখলে থাকা কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস ষ্টেশনের ক্যান্টনমেন্টের পতন ঘটে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হলেও  কশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উড়ে ১৯ ডিসেম্বর সকালে।

শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনতার সমাবেশ ও বঙ্গবন্ধু চত্বরের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে কাশিয়ানী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

মুক্তিযুদ্ধ কালিন কাশিয়ানী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক  কামান্ডার এনায়েত হোসেন জানান, গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-নড়াইল জেলার সীমান্তে অবস্থিত এবং ভৌগলিক ও যুদ্ধের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ রেল ষ্টেশন ও নদী বন্দর ভাটিয়াপাড়া দখল নিয়ে পাকিস্তানি  হানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে লড়াই হয় কয়েক দফা। পাকিস্তানি  বাহিনীর ভাটিয়াপাড়া মিনি ক্যান্টনমেন্টটি গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত হলেও ফরিদপুর-নড়াইল-গোপালগঞ্জ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য বস্তু ছিলো ভাটিয়াপাড়ার ওই মিনি ক্যান্টনমেন্টটি।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৭১ সালের মে মাসে এখানে ওই ওয়্যারলেস ষ্টেশনে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে। দীর্ঘ ৭ মাস ব্যাপী ৬৫ পাকিস্তানি  সেনার শক্তিশালী একটি গ্রুপ এখানে অবস্থান করে এলাকার নিরীহ মুক্তিকামী মানুষের উপর নির্যতন, নিপীড়ন ও গণহত্যাযজ্ঞ চালায়। অনেক মুক্তিকামী মানুষকে হত্যাকরে পাকিস্তানি বাহিনী লাশ ভাটিয়াড়ার দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীতে ভাসিয়ে দিতো। পাকিস্তানি  বাহিনীর একটি দল গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সংলগ্ন জয়বাংলা পুকুরপাড়ের মিনি ক্যান্টনমেন্টন থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ৬ ডিসেম্বর রাতে পালিয়ে গিয়ে ভাটিয়াপাড়ার ওই ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। ভাটিয়াপাড়ার পাকিস্তানি  বাহিনীর মিনি ক্যন্টনমেন্টটি দখলে নিয়ে ৬ নভেম্বর দু’টি মারাতœক যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে  টানা ১৫ ঘন্টা পাস্তিানি  বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘায়েল করতে পাস্তিানিক বাহিনী আকাশ পথে বিমান থেকে গুলি ও বোমা বর্ষণ করতে থাকে। কিন্তু সেদিন অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেনি। এ যুদ্ধে পাক বাহিনী যথেষ্ট ঘায়েল হয়। সে সময় মুক্তিযোদ্ধা মীর মহিউল হক মিন্টু , সাধুহাটির এ কিউএম জয়নুল অবেদীন শহীদ হন।

ওই ওয়্যারলেস ক্যাম্প দখল নিয়ে দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধ হয় ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিনে। ৩ দিন যুদ্ধের পর ১৯ ডিসেম্বর খুব ভোরে নড়াইল  গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের দিক থেকে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডাররা  সম্মিলিতভাবে ভাটিয়াপাড়া ক্যান্টনমেন্টে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাতœক এ হামলা ও বীরোচিত সাহসী যুদ্ধে অবশেষে ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১০ টার দিকে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে ৬৫ জন পাস্তিানিক সেনা আতœসমার্পন করে। এ যুদ্ধে ৬ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। অপর দিকে মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান সিকদার, অনিল কুমার বিশ্বাস,মজিবর রহমান,মোহাম্মদ হান্নান শেখ  নিহত হয়।

এর পর ভাটিয়াপাড়ার ওয়্যারলেস ষ্টেশনের মিনি ক্যান্টনমেন্টে উড়ানো হয় বাংলা দেশের মানচিত্র  ও লাল সূর্য খচিত গাঢ় সবুজ জমিনের বিজয় পতাকা।

হানাদার মুক্ত হয় কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া অঞ্চল। মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দে আতœহারা হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিজয় মিছিল বের করেন। হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ এ বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে অনন্দ উল্ল¬াসে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ