• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মাংস উৎপাদনে উদ্বৃত্ত উপজেলা গোপালগঞ্জ সদর

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা মাংস উৎপাদনে উদ্বৃত্ত উপজেলা। এ উপজেলায় প্রতি বছর চাহিদার তুলনায় ৩৩০ মেট্রিক টন মাংস বেশি উৎপাদিত হয়। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার প্রটিনের চাহিদা পূরণের পর বাড়তি মাংস আশপাশের উপজেলায় বিক্রি হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রটিনের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে মাংস উৎপাদনকারী খামারীরা লাভবান হচ্ছেন।  মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার সর্বত্রই সহজে সাধারণ মানুষ মাংস কিনতে পারছেন।  মাংস বিক্রির সাথে জড়িতরাও ভালো টাকা আয় করছেন। 

প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রভাষ চন্দ্র সেন বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ২১টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৯৩৪ জন। প্রতিদিন একজন মানুষের মাংসের চাহিদা ১২০ গ্রাম। সেই হিসাবে এ উপজেলায় প্রতিদিন মাংসের চাহিদা প্রায় ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩২ হাজার ০৮০ গ্রাম বা প্রায়  ৩৮ মেটিক টন ৬৩৩ কেজি। ৩৬৫ দিনে মাংসের চাহিদা প্রায় ১৪ হাজার ১০০ মেট্রিক টন ৬৮ কেজি । গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায়  প্রতি বছর মাংস উৎপাদিত হয় ১৪ হাজার ৪৩০ মেটিক টন ৬৮ কেজি। সেই হিসাবে এ উপজেলায় উদ্বৃত্ত মাংস থাকে ৩৩০ মেট্রিক টন। 
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, প্রতিবছর গরু থেকে ৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ৬৮ কেজি, ছাগল থেকে ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন, ব্রয়লার মুরগী থেকে ৪ হাজার ৩৯০ মেট্রিকটন, সোনালী ও কক মুরগী থেকে ৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন,  হাঁস থেকে ৩৫ মেট্রিক টন ও কোয়েল, কবুতর এবং  অন্যান্য পাখি থেকে ৫ টন মাংস উৎপাদিত হয়। এতে  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সব মানুষের প্রটিনের চাহিদা পূুরণ হচ্ছে। মাংস উৎপাদনকারী খামারীরা লাভবান হচ্ছেন। মাংস ব্যবসার সাথে জড়িতরাও আয়ের সুযেগ পাচ্ছেন। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হাট,বাজারসহ সর্বত্র মাংসের প্রাপ্যতা সহজ হয়েছে। বাড়তি ৩৩০ মেট্রিক টন মাংস আশপাশের উপজেলা গুলোতে বিক্রি হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের পাচুড়িয়া গ্রামের ব্রয়লার খামারী রইচ সিকদার বলেন, আমার খামারে আমি প্রতি ব্যাচে ৮ হাজার ব্রয়লার মুরগী পালন করি। বছরে ৭ থেকে ৮টি ব্যাচ পালন করি। প্রতি ব্যাচে অন্তত ১ লাখ টাকা লাভ হয়। এখন বাজারে ব্রয়লারের দাম বেশ ভালো। তাই লাভও একটু বেশি হচ্ছে। ফিডের নাম নিয়ন্ত্রণে থাকলে আমাদের ব্যবসা আরো ভালো হত। সেই দিকে সরকারকে নজর দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হরিদাসপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামর গরুর খামারী নেওয়াজ বলেন, গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করি। গত ১০ বছর ধরে এ কাজ করছি। এতে ভালো আয় হচ্ছে। বাজারে মাংসের দাম ভালো রয়েছে। তাই এখন গরু বিক্রি করলে লাভ আগের তুলনায় বেড়েছে। গরু পালনে আমার ফিডের ওপর নির্ভরশীলতা নেই। ফিডের দাম বেড়েছে। যেসব খামারী ফিডের ওপর নির্ভলশীল তাদের লাভ সীমিত আকার ধারণ করেছে।  আমি খড়, ভূষি, কুড়া ও ঘাস দিয়ে গরু পালন করি। এ জন্য লাভের টাকা ঘরে তুলতে পারি।
গোপালগঞ্জ  শহরের মুরগী ব্যবসায়ী মিলন মোল্লা বলেন, আমি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্œ খামার থেকে ব্রয়লার,কক, সোনালী,লেয়ার মুরগী কিনে এনে বাজারে বিক্রি করি। প্রতি কেজি মুরগীতে আমার ৫ থেকে ১০ টাকা লাভ হয়। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১ হাজার কেজি মুরগী বিক্রি করি। 
মাংস ক্রেতা নবিউর রহমান শেখ (৫০) বলেন, আমাদের ছোট বেলায় সব জায়গায় মাংস পাওয়া যেত না। এখন গরু,ছাগল, হাঁস,মুরগীর খামার হয়েছে। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে  মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সব জায়গায় মাংস সহজে পাওয়া যাচ্ছে। সব শ্রেণী পেশার মানুষ ঘরের পাশেই মাংস পাচ্ছেন। মাংসের প্রাপ্যতা সহজ হয়েছে। এতে আমাদের প্রটিনের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে অনেকটা সুলভে আমরা মাংস খেয়ে আসছি। সম্প্রতি সময়ে মাংসের দাম অসম্ভব বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই মাংসের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কার্যকারী ভূমিকা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ