• বৃহস্পতিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১৩ ১৪৩০

  • || ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

আওয়ামী লীগের দুর্গে বিএনপির দুই নেতার ভোট যুদ্ধ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৩  

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা। এটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। আগামী ২০ মার্চ আওয়ামী লীগের এই দুর্ভেদ্য ঘাঁটির কোটালীপাড়া পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 

এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মতিয়ার রহমান হাজরা ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এখন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে ভোটাররা ভোট দেবেন। ওই পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডে দুই বিএনপি নেতা কাউন্সিলর পদে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। এরা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর কোটালীপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক  মোঃ ওলিউর রহমান হাওলাদার ও সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ কামাল হোসন দাড়িয়া। অন্য কেউ এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হননি। ২০০৩ সালে গঠিত কোটালীপাড়া পৌর বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন মোঃ কামাল হোসেন  দাড়িয়া। তারপর তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেননি বলে দলীয় সুত্রে জানাগেছে। 

এদিকে মোঃ কামাল হোসেন দাড়িয়া বর্তমানে কোটালীপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র দেখিয়ে নিজেকে ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দবি করছেন। 
অপরদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ওলিউর রহমান হাওলাদার বিএনপি নেতা বলে প্রচার করছেন মোঃ কামাল হোসেন দাড়িয়া। তাই তিনি ওলিউর রহমান হাওলাদারকে ভোট না দিয়ে তাকে ভোট দেওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছেন। 
পক্ষান্তরে কোটালীপাড়া পৌরসভা ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৪টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি নেতা ওয়ালিউর রহমান হাওলাদার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এবার ৫ম বারেরমতো তিনি কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।
আওয়ামী লীগের দুর্গে দুই বিএনপির নেতার কাউন্সিলর পদে নির্বাচন নিয়ে কোটালীপাড়া এখন টক অব দা টাউনে পরিণত হয়েছে। 
এ বিষয়ে কোটালীপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন হাজরা বলেন, মোঃ কামাল হোসেন দাড়িয়া বিএনপি করত কি না জানি না। আগে থেকে সে আওয়ামী লীগের সদস্য ছিল কি না তাও জানি না। করোনার সময় সে আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে  কাজ করেছে। তাই তাকে একটি প্রত্যয়ণপত্র দেওয়া হয়েছে।। 

কোটালীপাড়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের  সভাপতি আবদুল হাই সিকদার বলেন, ২০১২ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়। তখন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মোঃ নান্নু মোল্লা। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এলাকা ত্যাগ করেন। তার কোন কার্যক্রম নেই। তার অনুপস্থিতিতে  আমরা কামাল হোসেনকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করি। পরে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাকে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে। সেই হিসেবে তিনি ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এটি দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। 

কোটালীপাড়া পৌর বিএনপির ২০০৩ সালের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক হাকিম খলিফা বলেন, মোঃ কামাল হোসেন দাড়িয়া আমাদের কমিটিতে সহ দপ্তর সম্পাদক  ছিলেন। আমরা একসাথে বিএনপি করেছি।

কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশার হাওলাদার বলেন, মোঃ কামাল হোসেন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেননি। তাই তিনি এখনো বিএনপিতে রয়েছেন। পৌর আওয়ামী লীগের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা বনে গেছেন। নির্বাচনে ফায়দা লুটতেই তিনি এটিকে ব্যবহার করছেন।

৯নং ওয়ার্ডের ভোটার মোঃ শওকত খান (৪৫) বলেন, কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। এখানে আওয়ামী লীগের শেঁকড় তৃনমূলে গভীরভাবে প্রথিত। এই পৌরসভায় প্রায় শতভাগ মানুষ আওয়ামী লীগ করেন। তাই কোটালীপাড়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীর কোন অভাব নেই। তারপরও কেন একজন বিএনপি নেতাকে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বানানো হল ? এটি আমার বোধগম্য নয়। এটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবি জানাচ্ছি।  

কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ ওলিউর  রহমান হাওলাদার বলেন, বিগত ৪টি নির্বাচনে ভোটাররা আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। এই নির্বাচনেও আমার বিজয় সুনিশ্চিত। তাই প্রতিদ্বন্দ্বি কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ কামাল হোসেন দাড়িয়া নির্বাচনের কৌশল হিসেবে আমাকে বিএনপি নেতা হিসেবে প্রচার করছেন। আমি আগে বিএনপি করতাম। এখন কোন দল করি না। মোঃ কামাল হোসেন দাড়িয়া বিএনপি করেছেন। এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সেজেছেন। তিনি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এতে কোন লাভ হবে না। ভোটাররা আমাকেই আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। 

কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ কামাল হোসেন দাড়িয়া বলেন, গত নির্বাচনে আমি ওলিউর রহমানের কাছে সামান্য ভোটে পরজিত হই। তারপর স্থানীয়রা আমাকে আওয়ামী লীগের পদে থাকার পরামর্শ দেন। তাই আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রত্যয়নপত্র নেই। আমি পূর্ণশক্তি নিয়ে ভোটে নেমেছি। এইবার সাধারণ মানুষ আমার পক্ষে আছে। আমি এই নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হব ইনশাল্লাহ। ওই প্রার্থী আরো বলেন, আমি আগে কোন দলের রাজনীতির সাথে ছিলাম না। প্রতিপক্ষ আমাকে ঘায়েল করতে আওয়ামী লীগের এই দুর্গে  বিএনপি নেতা হিসেবে প্রচার করছে। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ