• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ব্রি-১০২ ধানে শতাংশ প্রতি ফলন ১ মণ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৩  

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত পুষ্টিসমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল ব্রি-১০২ জাতের নতুন ধানটির পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য মিলেছে। প্রতি শতাংশে এই জাতের ধান ১ মন ফলন দিয়েছে।

গোপালগঞ্জের ৫টি প্রদর্শনী প্লটে এই জাতের ধান হেক্টরে ৮ দশমিক ১০ থেকে ৯ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলন হয়েছে। সেই হিসেবে শতাংশে ফলন হয়েছে প্রায় ১ মণ বা তারও বেশি। ব্রি-২৯ এর বিকল্প হিসেবে এ ধানের আবাদ করা যায়। নতুন এই জাতের ধানে রোগবালাই নেই। লম্বা, চিকন প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এই ধানের ভাত ঝরঝরে এবং খেতে সুস্বাদু।


ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছর গোপালগঞ্জের ৫টি প্রদর্শনী প্লটে প্রথম বারের মতো এই ধানের আবাদ করেন কৃষক। চিকন ধানের জাতের মধ্যে এই জাতই সর্বোচ্চ ফলন দিয়েছে। চিকন ধানে এটি নতুন আশা জাগিয়েছে। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান বাজারে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়। এটি আমাদের কৃষি ও কৃষকরে জন্য সুসংবাদ। এই জাতের ধান এসডিজি অর্জনে সহায়তা করবে। এই ধানের চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ ধানে আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে। কৃষকের আয় বড়িয়ে দেবে এই জাতের ধান।’

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৃজন চন্দ্র দাস বলেন, ‘বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত একটি ক্লাইমেট স্মার্ট জাত ব্রি-১০২ ধান। বোরো মৌসুমের এই ধানটি জিংকসমৃদ্ধ। কারণ মাছে-ভাতে বাঙ্গালির ধানেই সমৃদ্ধি। এই সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে ব্রি -১০২ ধান। এটি আমাদের প্রত্যাশা।’

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক মুহিব শেখ বলেন, ‘লম্বা ও চিকন জাতের ব্রি-১০২ ধান আমার প্রদর্শনী প্লটে সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়েছে। আমি জীবনে চিকন ধানে এতো বেশি ফলন দেখিনি। এই ধানে রোগবালাই নেই বললেই চলে। আমার জমিতে ধান ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়নি। এমন ধান কৃষক, পথচারীসহ সবাইকে মুগ্ধ করেছে। অনেক কৃষকই এই ধান দেখে ভবিষ্যতে চাষাবাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারা আমরা কাছে এই ধানের বীজ চাইছেন। এই ধান লম্বা ও চিকন। তাই বাজারে মোটা ধানের তুলনা মনে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দাম পাওয়া যাবে। এই ধান চাষ করে গোলা ভরবে। অধিক ফলন পেয়ে আমরা লাভবান হতে পারব। এই ধান আমাদের জন্য নতুন দিশা হয়ে এসেছে।’

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের জনসংখ্যার সঙ্গে ২০-২২ লাখ লোক যোগ হচ্ছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হলে অবশ্যই ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতের উফশী ধানগুলো চাষ করতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। কেননা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলোর ফলন আগের পুরনো জাত ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯-এর চেয়ে অনেক বেশি। এগুলো যদি ভালো পরিচর্যা করা যায়, তাহলে আরও বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাজেই এখন পুরনো জাত বাদ দিয়ে নতুন জাতের ধান ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, বঙ্গবন্ধু-১০০ এবং ব্রি-১০২ চাষ করতে হবে। উপরন্তু বঙ্গবন্ধু-১০০ এবং ব্রি-১০২ চিকন, উচ্চ জিংকসমৃদ্ধ, জিরা টাইপের, যা আমাদের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করবে। এগুলো প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান হওয়ায় বাজারমূল্যও অন্য ধানের তুলনায় বেশি।’

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল কাদের সরদার বলেন, ‘বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও উদ্বৃত্ত। কিন্তু এখনো দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের পাশাপাশি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান উৎপাদনে বিশেষ নজর দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশর মানুষ ভাত খেতে অভ্যস্ত। তাই ভাতের মধ্যে পুষ্টিগুণ থাকলে সহজেই মানুষ পুষ্টি পাবে। ব্রি উদ্ভাবিত জিংকসমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ ও ব্রি-১০২ ধান জাতের ধানের চাষাবাদ আমরা সম্প্রসারণ করব। এতে একদিকে যেমন কৃষক অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হবেন, তেমনি দেশের সাধারণ মানুষের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করবে এই ধান।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ