• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২২  

বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর তথ্য নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর বড় বোন ও এক ছোট ভাই বলেছেন, তাঁরা শুনেছেন, তবে নিশ্চিত নন। লন্ডনে বসবাসরত হারিছ চৌধুরীর মেয়েকে টেলিফোন করা হয়েছে। সেখান থেকেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী দাবি করছেন, চার মাস আগে লন্ডনে মারা গেছেন হারিছ চৌধুরী।

হারিছ চৌধুরী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। জোট সরকারের আমলে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এই নেতা এক-এগারোর পালাবদলের পর দেশ ছাড়েন। তার পর থেকে হদিস ছিল না তাঁর। ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী বা আত্মীয়-স্বজন কেউ তাঁর ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি।

হঠাৎ করে কয়েক দিন ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বলা হচ্ছে, গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে লন্ডনে মারা গেছেন তিনি। গত সোমবার বিএনপি নেতা ওয়াদুদ ভূঁইয়াসহ কয়েকজন এই নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। মঙ্গলবার রাতে হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর এ বিষয়ক আলোচনা বড় হয়। আশিক চৌধুরী তাঁর ফেসবুক আইডিতে হারিছ চৌধুরী ও তাঁর ছবি সংযুক্ত করে লেখেন, ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’। এরপর এই ‘মৃত্যুর খবরের’ ডালপালা বাড়ে।

এ বিষয়ে গতকাল খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, মাস দুয়েক আগেও ফেসবুকে একই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন আশিক চৌধুরী। কিন্তু তখন বিষয়টি তেমন আলোচনায় আসেনি। মঙ্গলবার রাতে তিনি কেন আবার একই স্ট্যাটাস দিলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

মৃত্যুর গুঞ্জনের সত্যতা যাছাই করতে লন্ডনে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা চৌধুরীর মুঠোফোনে কল করেন এই প্রতিবেদক। এক ব্যক্তি ফোনটি ধরেন। প্রতিবেদকের নাম-পরিচয় জানালে তিনি শুরুতেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘এই নম্বর আপনি কিভাবে পেলেন? গত ১৫ বছরে কেউ ফোন করে কিছু জানতে চায়নি।’ ফেসবুকে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে আলোচনার কথা জানালে তিনি ওই সব স্ট্যাটাসের লিংক তাঁকে পাঠানোর অনুরোধ জানান। কয়েকবার তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, হারিছ চৌধুরী বেঁচে আছেন কি না? তিনি এর জবাব দেননি। তবে বলেছেন, পরে যোগাযোগ করবেন। তিনি নিজে তাঁর পরিচয়ও প্রতিবেদককে দিতে চাননি।

গত সোমবার বিকেলে হারিছ চৌধুরীর রাজনৈতিক সহকর্মী বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কালের কণ্ঠকে বলেন, মারা গেছেন শুনেছেন। এর বেশি কিছু জানেন না। এক-এগারোর পর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।

গতকাল সকালে আশিক চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বড় ভাইয়ের কথা হঠাৎ মনে পড়ল তাই স্ট্যাটাস দিয়েছি। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে দিইনি। আমাকে খুব স্নেহ করতেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘হারিছ ভাই মারা গেছেন এটা সত্য। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন। পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি লন্ডনে মারা যান। সেখানেই কবর দেওয়া হয়েছে। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে করোনায় মারা যান তাঁর আরেক ভাই সেলিম চৌধুরী।’

কার কাছ থেকে এই মৃত্যুর খবর শুনেছেন জানতে চাইলে আশিক চৌধুরী বলেন, হারিছ চৌধুরীর ছেলে-মেয়ের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন।

কিন্তু বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত একজনকে পাওয়া গেছে যাঁকে আশিক চৌধুরী বলেছেন, হারিছ চৌধুরী গোপনে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি ঢাকায় মারা যান। গেণ্ডারিয়ায় তাঁকে দাফন করা হয়।

আশিক চৌধুরীর এই দুই রকম বক্তব্যের কারণে অনেকের মধ্যে হারিছ চৌধুরীর অবস্থা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় কয়েকবারের চেষ্টায় হারিছ চৌধুরীর বড় বোন একলাসুর নাহারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে। একলাসুর নাহার বলেন, ‘আমি আশিকের কাছ থেকে শুনেছি। নিজে কিছু জানি না। ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই।’

হারিছ চৌধুরীর বড় এই বোন আরো বলেন, ‘মিথ্যা বলব না। তিন বছর আগে আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর দুবার ফোন দিয়েছিল হারিছ। তার পর থেকে আর যোগাযোগ হয়নি। আমি কানাডায় ছিলাম। ছোট ভাই সেলিম মারা যাওয়ার পর কয়েক মাস আগে দেশে আসি। তখন হারিছ মারা যাওয়ার খবর আশিকের কাছে শুনেছি।’

হারিছ চৌধুরীর ছোট ভাই ডা. মুকিত চৌধুরী বসবাস করেন ইরানে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে গত রাতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জেনেছি তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। ২০০৭ সালের পর থেকে ভাইয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়নি।’

সিলেটের কানাইঘাটের দিঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের দর্পনগরে হারিছ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি। পাঁচ ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। হারিছ চৌধুরীর দুই ভাই মারা গেছেন। সবার ছোট ভাই কামাল চৌধুরী জন্মলগ্ন থেকেই অসুস্থ। তিনি গ্রামের বাড়িতে থাকেন। এক ভাই থাকেন ইরানে। তিনি পেশায় চিকিৎসক। হারিছ চৌধুরীর ছেলে ও মেয়ে যুক্তরাজ্যে থাকেন। মেয়ে ব্যারিস্টার, ছেলে বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করেন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ