• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মনোনয়ন দৌড়ে শেষ হাসি কার

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০১৮  

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনে জোটের একক প্রার্থী চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হলেও কৌশলগত কারণে তা প্রকাশে কালক্ষেপণ করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। লক্ষ্য প্রতিপক্ষের প্রার্থী দেখে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আসনে নিজেদের প্রার্থী পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগানো। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ ডিসেম্বরের (প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন) মধ্যে জোটগত ও দলীয় আসন বণ্টনের চূড়ান্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। এসব পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত আসন বণ্টনের তালিকা প্রকাশে শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা করছে উভয় জোট। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, জাতীয় পার্টিকে ৪৫টি এবং মহাজোটের অন্য শরিকদের ২৫টি আসন ছেড়ে দিয়ে অবশিষ্ট ২৩০টি আসনে নিজ দলের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যমতে, আওয়ামী লীগ ২৬৪টি আসনে ২৮১ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। এরমধ্যে বাছাইয়ে ৩ জন বাদ পড়ায় বৈধ প্রার্থী আছেন ২৭৮ জন। আওয়ামী লীগ ২৫টি আসন জাতীয় পার্টির জন্য এবং ১১টি আসন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শরিকদের জন্য আগেই ছেড়ে দেয়। তবে জাতীয় পার্টি ২১০টি আসনে ২৩৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। শরিকদের ৭০টি আসন ছেড়ে দেয়ার ঘোষণার বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল বলছে, নির্বাচনে জয়লাভ করবে এমন প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে, সে মহাজোটের যে দলেরই হোক। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্র মতে, আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগেই মহাজোটের আসন বণ্টন চূড়ান্ত করা হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শেষ মুহূর্তে কয়েকটি আসনে পরিবর্তন আসতে পারে। প্রতিপক্ষের প্রার্থী দুর্বল হলে শরিকদের আসন বাড়তে পারে। আর শক্তিশালী প্রার্থী হলে নিজ দলের প্রার্থীকে রাখবে আওয়ামী লীগ।

প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পেয়ে শরিকদের অনেকেই মহাজোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। প্রত্যাশিত আসনে মনোনয়ন না পেয়ে মহাজোটের বড় শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা এবং মনোনয়নপত্যাশীদের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে নানাভাবে। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ৪৫ আসন ছেড়ে দেবে বলে জানালেও জাপা ২১০টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী আসন না পেয়ে জোটের অন্য শরিকরা হতাশ হলেও আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে খুব একটা যায়নি। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোটের শরিকদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে একটি ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে কোন বাধা নেই। বিএনপি এবং তার জোটের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ধানের শীষের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু কৌশলগত কারণে তা এখনই নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে চাচ্ছেন না বিএনপি। ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন বণ্টনের চূড়ান্ত তালিকা বিএনপি আগামী ৮ ডিসেম্বর জমা দেবে। এদিকে যাচাই-বাছাইয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদ জিয়াসহ দলের অন্তত শতাধিক নেতার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ছয়টি আসনে বিএনপির প্রার্থী শূন্যতার প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ার ঘটনায় করণীয় ঠিক করতে সোমবার (৩ ডিসেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা সোমবার সংবাদকে বলেন, আমাদের ২৪০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত বাকি ৬০ আসন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটকে দেয়া হবে। তবে এখনও আলাপ-আলোচনা চলছে, কিছু পরিবর্তনও হতে পারে। কৌশলগত কারণে ৮ ডিসেম্বরের আগে তালিকা ইসিতে জমা দেয়া হবে না।

দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনে ২৯৫ আসনে বিএনপির ৬৯৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে আদালত কর্তৃক দন্ডিত, ঋণখেলাপিসহ নানা কারণে বাছাইয়ে বেগম খালেদা জিয়াসহ ১৪১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। দলটির বৈধ প্রার্থী বর্তমানে ৫৫৫ জন। কিছু আসনে মনোনয়ন বাতিল হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বাতিল হওয়া মনোনয়ন ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিলের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে কিছু প্রার্থী আপিল করেছেন। আপিলে রায় কি আসে সে বিষয়টি দেখতে হবে। যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থী থাকবে না, সেগুলোতে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের বরাদ্দ দেয়া হবে।

সমঝোতার ভিত্তিতেই শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন চূড়ান্ত করতে চায় উভয় দল। এ লক্ষ্যে শরিকদের সঙ্গে দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করছে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া, শরিকদের দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গেও নানা মাধ্যমে পৃথক আলোচনা চলছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একে অন্যের দিকে নজর রাখছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে দল ও জোটের আসন বণ্টনের তথ্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আসনভিত্তিক একক প্রার্থী মনোনয়নে কৌশলগত কারণে প্রতিপক্ষের দিকে নজর রেখে শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা করছে।

‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট’- বিএনপির কাছে এই দুই জোটের শরিকদেরই প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। তবে বিএনপি সংসদীয় ৩০০ আসনের বেশিরভাগে একাধিক প্রার্থী দিয়ে শরিকদের দ্বিধায় ফেলে দেয়। বিএনপির শীর্ষ একাধিক নেতার মতে, শরিকদের অনেক প্রার্থীর স্বচ্ছ রাজনৈতিক ইমেজ থাকলেও ভোটে জেতার মতো প্রার্থী সবাই নন। তাই জয় নিশ্চিত করতে বিএনপির নিজ দলের শক্তিশালী প্রার্থীর ওপর বেশি ভরসা রাখছে। এই নির্ভরশীলতা শরিক দলগুলোকে চাহিদা মাফিক আসন বরাদ্দে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এসব পরিপ্রেক্ষিতে জোটগত আসন বণ্টন চূড়ান্ত হয়নি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশের ৩০০ আসনে জমা পড়া ৩০৬৫টি মনোনয়নপত্রে মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রের হার ২৫ ভাগের বেশি। ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেয়ার বৈধতা পান ২২৭৯ জন। বাতিলের তালিকায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ১৪১ জন বিএনপির প্রার্থী এবং ৩ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে সোমবার কমিশনে আপিল করেছেন অনেক প্রার্থী। ৫ ডিসেম্বর বুধবার পর্যন্ত আপিলের সময় আছে। শুনানি হবে ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আসনভিত্তিক একক প্রার্থী মনোনয়নে রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর হাতে আর ৫দিন সময় আছে। এর আগেই দলীয় কোন্দল মিটিয়ে জোটের শরিকদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে জোটগত আসনবণ্টন চূড়ান্ত করতে হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী জোটের প্রার্থী বা দলের একাধিক প্রার্থী হলে তা একক করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনের মধ্যেই (৯ ডিসেম্বর) রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে জানাতে হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়ে দল ও জোটের একাধিক প্রার্থীর ক্ষেত্রে একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে বলেছে। অন্যথায় কোনো এক দল অন্য দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। আইন অনুযায়ি, যেসব দল বা জোট একাধিক প্রার্থী দিয়েছে, তাদের একজন প্রার্থীর নাম জানাতে হবে। এর ফলে অন্যগুলো বাতিল হয়ে যাবে। আর কোন প্রার্থীর নাম না জানালে জোটের বৈধ প্রার্থীরা সবাই যার যার প্রতীকে ভোট করবেন। এক্ষেত্রে কোন দলের একাধিক প্রার্থী থেকে গেলে সংশ্লিষ্ট আসনে ওই দলে সবার মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর শুরু হবে প্রতীকসহ প্রচারণা। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটাররা ভোট দিয়ে তিনশ’ সংসদীয় আসনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনীত করবেন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ