• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

টাঙ্গাইল শহরের তিনটি প্রবেশ পথেই ময়লার ভাগাড়

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০১৯  

১৩২ বছরের পুরনো টাঙ্গাইল পৌরসভায় আজও গড়ে উঠেনি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনও ভাগাড়। শহরে প্রবেশের তিনটি পথেই রাস্তার পাশে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ময়লার দুর্গন্ধে নাক চেপে শহরে ঢুকতে হয়। এই দুর্গন্ধ দিয়েই যেন স্বাগত জানানো হয় শহরবাসী ও শহরে আগত অতিথিদের। 

দিনের পর দিন রাস্তার পাশে আবর্জনা ফেলায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী এবং ওই পথে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ। আজও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেই পৌর কর্তৃপক্ষের। শহরের প্রবেশমুখে ময়লা আবর্জনা না ফেলার আহ্বান পৌরবাসীর।

পৌরসভা সূত্র জানা যায়, ১৮৮৭ সালের ১ জুলাই টাঙ্গাইল পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৯ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় প্রায় দুই লাখ লোকের বসবাস। ১৩২ বছরের পুরনো এই পৌরসভায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা তো দূরের কথা, আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট ভাগাড় নির্মাণ হয়নি আজও। শহরের সব আবর্জনা ফেলা হচ্ছে শহরে প্রবেশের বিভিন্ন সড়কের পাশে।

বিগত ৭/৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে উত্তর দিক দিয়ে শহরের প্রবেশমুখে রাবনা এলাকার টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে।

আর দক্ষিণ অংশের ময়লা ফেলা হচ্ছে শহরের আরেক প্রবেশমুখ কাগমারি বেবিস্ট্যান্ড এলাকায়। এছাড়াও শহরের আশেকপুর এলায়কায় ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। দিনের পর দিন ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ওই এলাকায় বসবাসকারী ও এ পথ দিয়ে চলাচলকারীরা দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ।

টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনালের উত্তরে বৈল্লা সেতুর পর থেকে বিশাল এলাকাজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এছাড়া, মৃত জীবজন্তু, গরু-ছাগল, কুকুরও এই ময়লা আবর্জনার সঙ্গে ফেলা হচ্ছে। এতে করে দুর্গন্ধে ওই এলাকায় দাঁড়ানো যায় না। বাসাবাড়িতে বসবাস করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এই এলাকা দিয়ে মানুষ হেঁটে বা অন্য কোনও যানবাহনে অতিক্রম করার সময় নাক চেপে পার হচ্ছে।

এদিকে, প্রায়ই আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন ধোঁয়া ও গন্ধে আশপাশের ঘরবাড়ি ও দোকানদারদের পোহাতে হয় চরম কষ্ট। একই চিত্র দেখা যায় বেবিস্ট্যান্ড ও আশেকপুর এলাকায়। সেখানে আবর্জনার ভাগাড় অতিক্রম করে দক্ষিণাংশের মানুষকে মূল শহরে ঢুকতে হয়। বেবিস্ট্যান্ড এলাকায় ময়লা আবর্জনার ভাগাড় পেরিয়েই যাতায়াত করতে হয় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমএম আলী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইএফআরএম বিভাগর শিক্ষার্থী মানিক শীল  জানান, আসা-যাওয়ার পথে কাগমারি ব্রিজ ও বেবিস্ট্যান্ড এলাকায় পৌরসভার ভাগাড়ের দুর্গন্ধে অনেক সময় দম বন্ধ হয়ে আসে। নাক চেপে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী এই ময়লা আবর্জনার ভাগাড় পেরিয়ে চলাচল করে থাকে। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।

বেবিস্ট্যান্ড গোরস্থান মাদ্রাসাছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গোরস্থান মাদ্রাসা ও এতিম খানায় কয়েক হাজার ছাত্রের বসবাস। ময়লা আবর্জনার গন্ধে আমারদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।


নাগরপুর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শেখ মো. রওশন আলম জানান, বেবিস্ট্যান্ড কাগমারি এলাকায় যেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এখানেই আমার বাসা। পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক দুর্গন্ধের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। আমরা এলাকাবাসী খুবই সমস্যার মধ্যে আছি। বারবার পৌর কর্তৃপক্ষকে ময়লার ভাগাড় সরিয়ে নেওয়ার বা ময়লা ফেলতে নিষেধ করা হলেও তারা কোন কর্ণপাত করছে না। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) টাঙ্গাইল অঞ্চলের গবেষণা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র চন্দ জানান, রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা পরিবেশ সংরক্ষণ আইনবিরোধী কাজ। পৌরবাসীর সুযোগ-সুবিধা এবং স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তোলার সকল কাজ করা উচিত।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের বক্ষব্যাধি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান রতন চন্দ্র সাহা জানান, ময়লা-আবর্জনার এই দুর্গন্ধ থেকে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসসহ ফুসফুসের নানা জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। তাই ময়লা আবর্জনা নিদিষ্ট স্থানে ফেলা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সকলের উচিত।

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরণ জানান, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে শহরের রাস্তাঘাট অনেক প্রশস্তকরণসহ উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। 

তিনি আরও বলেন, ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য যে পরিমাণ জায়গা দরকার তা পৌরসভার নেই। জেলা প্রশাসনের কাছে জায়গা চাওয়া হয়েছে। কিন্ত আমরা সে জায়গা পাইনি।

তবে শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ