• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তর পুরনো যন্ত্রপাতি ও লোক সংকটে জর্জরিত

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৯  

ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তরের সিনিয়র ওয়েদার অবজারভার (জেষ্ঠ্য আবহাওয়া পর্যবেক্ষক) পদ রয়েছে তিনটি এবং আবহাওয়া সহকারীর পদ রয়েছে দুটি। এ পদগুলো দীর্ঘদিন শূন্য থাকায় বেলুন মেকারদের দিয়ে চলছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের কাজ।

আবহাওয়ার আগাম পূবার্ভাস দেয়ার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফরিদপুর জেলা আবহাওয়া দপ্তরটি স্থাপন করা হয়। এক সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভবনে এই দপ্তরে কার্যক্রম চলত। ১৯৮১ সালে শহরের চাঁদমারীতে ১ একর ৫৪ শতাংশ জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় নিজস্ব কার্যালয়। নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মিত হলেও অদ্যাবধি এখানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ৩৮ বছরের পুরনো গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি দপ্তরটি এখনো চলছে মান্ধাতার আমলের এনালগ পদ্ধতিতে।

একজন পেশাগত সহকারী, তিনটি সিনিয়র ওয়েদার অবজারভার তথা জেষ্ঠ্য আবহাওয়া পর্যবেক্ষক এবং দুটি আবহাওয়া সহকারীর পদ সহ ফরিদপুরের এই আবহাওয়া দপ্তরে পদ রয়েছে সাতটি। এরমধ্যে বর্তমানে সিনিয়র ওয়েদার পর্যবেক্ষক ও আবহাওয়া সহকারী পদে কেউ কর্মরত নেই। সেখানে একজন পেশাগত সহকারীসহ কর্মরত আছেন পাঁচজন। বেলুন না থাকলেও এখানে বেলুন ওড়ানোর জন্য রয়েছেন দুই জন বেলুন মেকার। যারা আবহাওয়া পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখানে বায়ুর চাপ পরিমাপের জন্য ব্যারোমিটার, কতক্ষণ সূর্য ছিল সেটি জানার জন্য সানশাইন রেকর্ডার, সূর্যের তীব্রতা মাপার জন্য পায়রনোগ্রাফ, শিশির পরিমাপের জন্য ডিউব্যালেন্স, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থার্মোমিটার, উইন্ডশিল্ড পরিমাপের জন্য কাপ এনোমিউমিটার, বাতাসের দিক নির্ণয়ের জন্য উইন্ড ব্যান্ড, বৃষ্টি পরিমাপ জানার জন্য সেলফ রেকর্ডিং রেইনগজসহ আনুষঙ্গিক কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে। তবে এসব যন্ত্রপাতির সবই পুরনো। এরমধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়ে, পরে সেগুলো মেরামত করে কোনোমতে সচল করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এখানকার জলবায়ু পর্যবেক্ষণ ও আবহাওয়ার সূচক সংগ্রহে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো অনেক দিনের পুরনো হয়ে পড়েছে। মাঝেমাঝে সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। তারপর আবার মেরামত করে ঠিক করা হয়। অনেকটা সময় এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারোপযোগী থাকে না।

আবহাওয়া দপ্তরের কাজ মূলতঃ আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার জন্য জলবায়ুর তথ্য ও সূচক সংগ্রহ করা। আর কৃষিকাজের জন্য মাটি ও পানির তাপমাত্রাসহ আনুষঙ্গিক তথ্যাদি জানা হয় অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন থেকে। ফরিদপুরের এই আবহাওয়া দপ্তরেও একটি অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন রয়েছে।

ফরিদপুর জেলা শহর ছাড়াও কয়েকটি উপজেলায় এই অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। তবে সেখানেও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বারবার তারা আধুনিক যন্ত্রপাতি চেয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে ধরনা দেয়ার পরে এ সব ওয়েদার স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। যন্ত্রপাতিও চলে আসবে। ফরিদপুর একটি কৃষিভিত্তিক অঞ্চল হওয়ায় এখানে অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশনেরও গুরুত্ব রয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তর ও ওয়েদার স্টেশনের মাধ্যমে দিনরাতের আবহাওয়ার তথ্যসহ মাটি ও পানির তাপমাত্রার পরিমাপ জানা গেলেও মেঘের স্তরের (ক্লাউড লেয়ার) নিচের জলবায়ুর তথ্য জানা যায় না। এ জন্য কয়েক হাজার মিটার উচ্চতায় বৃহদাকারের বেলুন উড়ানো হয়। যার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সরাসরি কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের কাছে পৌঁছে যায়। দেশের বিভাগীয় আবহাওয়া দপ্তরগুলোতে এই বেলুন উড়ানো হলেও ফরিদপুরে এখনো এই বেলুন উড়েনি। কৃষিভিত্তিক ফরিদপুর অঞ্চলের জন্য এই বেলুন খুবই জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তরের পেশাগত সহকারী সুরজুল আমীন বলেন, জেলা পর্যায়ের এই দপ্তর থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয় না। তারা প্রতিদিন দুই বার আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন সূচকের তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠান। এছাড়া ওয়েদার স্টেশন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, যন্ত্রপাতি আধুনিক হলে অবশ্যই প্রাপ্ত তথ্যাদিও নিখুঁত হবে। এছাড়া এখান থেকে বেলুন উড়ানো গেলে অনেক উচ্চতা থেকে আবহাওয়ার তথ্যাদি সংগ্রহ সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আবহাওয়া দপ্তরটিকে আধুনিকায়নের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই দপ্তরটিকে যাতে উন্নতমানের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রুপ দেয়া যায় সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। ইতিমধ্যে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে জানানো হয়েছে; যাতে কৃষিভিত্তিক এই জনপদের মানুষ জরুরি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্যাদি পেতে পারে।
 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ