• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথে রয়েছে লোকবল সংকট

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০১৯  

ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থায় পূর্বাঞ্চলীয় রেল সেকশনের সিলেট-আখাউড়ার ১৭৯ কিলোমিটার রেলপথ। এরমধ্যে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মকন্দপুর থেকে বাহুবল উপজেলার লস্করপুর ও সাটিয়াজুরী স্টেশনের মাঝামাঝি স্থান পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এ ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথে রয়েছে লোকবল সংকট রেলপথ দেখভাল করছেন শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের ঊর্ধ্বতন উপ-প্রকৌশলী (পথ) মো. সাইফুল ইসলাম। এ পথে রয়েছে ছোট ও বড় মিলে রয়েছে ৮৪ ব্রিজ। তারমধ্যে শত বছরের পুরনো এ ব্রিজগুলোতে মাঝে মধ্যে সংস্কার করা হয়। কিন্তু এতে করে ঝুঁকি কমছে না।

সূত্র জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় শহর সিলেটের সঙ্গে সর্বপ্রথম রেল যোগাযোগ চালু হয় ১৮৯১ সালে। তবে ১৯১২ সালেই আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে পুরোদমে এ অঞ্চলে রেলসেবা শুরু করে। এসময় চালু হয় শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনও। নির্মাণ করা হয় ছোট-বড় ৮৪ রেল ব্রিজ। এরপর শতবছর পেরিয়েছে। কিন্তু এ রেল পথের উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ ও ব্রিজ দিয়েই বর্তমানে ট্রেন চলছে।

তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আশার বাণী জানিয়ে ঊর্ধ্বতন উপ-প্রকৌশলী (পথ) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর হচ্ছে আখাউড়া-সিলেট রেলপথ। নতুন বছরে এর কাজ শুরু হবে। এ সময় পুরনো এ রেলপথ আর থাকবে না। তিনি জানান, বর্তমানে সার্বক্ষণিক রেলপথ দেখভাল করা হচ্ছে। তবে লোকবল সংকট রয়েছে। দ্রুত লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন বলে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সূত্র জানায়, রেললাইনও সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। সংস্কারের অভাবে এ পথে প্রায়ই রেল লাইনচ্যুতি ঘটে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে। ফলে নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য খ্যাত রেলপথ যাত্রায় অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে সাধারণের। দেখভালকর্মী সংকটের কারণেই এ রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ রেললাইনের অধিকাংশ স্লিপারের নাটবল্টু নেই। নেই পর্যাপ্ত পাথর। অনেক স্থানে আবার লাইন থেকে পাথর উঠে গিয়ে মাটিও বের হয়ে গেছে। স্লিপারেও নেই ক্লিপ। যেসবা ক্লিপ রয়েছে সেগুলোও নড়বড়ে। কাঠের স্লিপার পচে নাটবল্টু ছুটে ব্রিজগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক ব্রিজে স্লিপারগুলো বাঁশ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, এই রুটে ঝুঁকিপূর্ণ নয়, মেরামতের প্রয়োজন চার ব্রিজ। এই ব্রিজগুলো হলো- হবিগঞ্জ জেলার শাহজীবাজারে ৭৩ নম্বর রেলব্রিজ, লস্করপুরের ১০২ নম্বর রেলব্রিজ, শায়েস্তাগঞ্জ পুরানবাজার ১০৫ নম্বর রেলব্রিজ, বাহুবলের রশিদপুরের ১১৪ নম্বর রেলব্রিজ। চলতি বছরের ২৩ জুন রেলপথের মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশনের অদূরে সেতু ভেঙে ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপবনের কয়েক বগি লাইনচ্যুত হলে ঘটনাস্থলে চার যাত্রী নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। সিলেটের স্মরণকালের এই রেল দুর্ঘটনার পর রেলপথের সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে এরপর থেকে এই পর্যন্ত ১৩ বার ট্রেন লাইনচ্যুতি ঘটেছে।

এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা বলছেন, রক্ষণাবেক্ষণ না করায় রেললাইন এবং ব্রিজগুলো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই লাইন দিয়ে সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম পথে ট্রেন চলাচল করছে। এর ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সিলেট-ঢাকা রেলপথে পারাবত, জয়ন্তিকা, উপবন ও কালনীসহ চার জোড়া আন্তঃনগর এবং সিলেট-চট্টগ্রাম পথে পাহাড়িকা ও উদয়নসহ দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে এর বাইরে কিছু লোকাল ট্রেনও প্রতিদিন এই পথে চলাচল করে। তবে চাহিদার তুলনায় ট্রেনের আসন অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন যাত্রী সাধারণ। চলতি বছরের ২৪ জুন কুলাউড়ার বরমচালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, আখাউড়া-সিলেট রেলপথ প্রকল্পে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা একনেকে অনুমোদন হয়েছে। মিটার গেজ এই রেলপথকে ডুয়েল গেজে পরিবর্তন করার লক্ষ্যে অনুমোদিত এই অর্থ ব্যয় হবে। আর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ২০২৫ সালের মধ্যে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ