• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ভাইরাল বিষয়টি যেন নেতিবাচক না হয়

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৯  

কোন ব্যক্তি বা কোন বিষয়ের অনুমতি বা স্বত্ব ছাড়া তার সম্পর্কিত ছবি, ভিডিও বা কোন তথ্য অন্যদের কাছে ছড়িয়ে দেয়াই ভাইরাল। অর্থাৎ ইন্টারনেটে কোন বিষয় দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া। ২০১৭ সালে গুগল, ইউটিউব, ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে, ভাইরাল শব্দটি সেগুলোর মধ্যে একটি। গুগল ট্রান্সলেটরে যার আভিধানিক অর্থ ভাইরাস ঘটিত এবং ব্যবহারিক অর্থ বিষপূর্ণ, বিষাক্ত, দূষিত, দুষ্টু। আজকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল শব্দটি প্রচুর ব্যবহৃত হচ্ছে। কোন তারকার বিয়ের ছবি থেকে শুরু করে হিলারি ক্লিনটনের গোপন ফোনালাপ পর্যন্ত সবকিছুই আজকাল ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে।

কোন ছবি, ভিডিও বা লেখা অনলাইনে বানের মতো প্রচার হলে আমরা সেটাকে বলি ভাইরাল। এই ছবি, ভিডিও বা লেখাগুলো অনেক সময় বানের তোড়ে ভেসে যায়। কোন কোনটি স্রোত থেকে বেরিয়ে স্থায়ী আসন গাড়ে। এর কোন কোনটি সমাজে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। কিছু ভাইরাল বিষয় স্রেফ আনন্দ দিয়ে যায়, কোনটি ভাবায় কিংবা কাঁদায়। আজকাল ভাইরাল করা অনেকটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে শুধু পপুলার হওয়া বা খ্যাতি পাওয়ার জন্য নিজেই নিজের ভাইরাল ভিডিও সৃষ্টি করছে। তবে আমাদের সমাজে ভাইরাল শব্দটি অনেকটা নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। কেউ একটা খারাপ জিনিস করলেই সেটা সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল করে দিচ্ছে। অন্যের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এসে তার স¤পর্কে গোপন তথ্য ভাইরাল করে দিচ্ছে। এমনকি আত্মহত্যার মতো বিষয়টি আজকাল ভিডিও আকারে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। এ তো গেল এক শ্রেণী যারা অন্যের দ্বারা ভাইরালের শিকার হচ্ছে। আর এক শ্রেণী রয়েছে যারা নিজেরাই নিজেদের ভিডিও ভাইরাল করছে শুধু খ্যাতি পাওয়ার জন্য। এর মাধ্যমে শুধু যে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেগেটিভ ব্যবহার করছে তাই নয়, নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে। অনেকেই নিজের আবেগকে সামলাতে না পেরে এমন সব কাজ করছে, যা আইন ভঙ্গ করছে। যা পরবর্তী সময়ে তার ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলছে। ভাইরাল যে শুধু নেগেটিভ হতে হবে তা কিন্তু নয়। বর্তমান যুব সমাজ অনেক বেশি সচেতন। তাদের অনেকেই অন্যায়ের বিরদ্ধে কাজ করেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। যেখানেই অন্যায় দেখছে তা ভিডিও করে মাধ্যমে ভাইরাল করে দিচ্ছে। যার কারণে সমগ্র জাতির মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই কোন কিছু ভাইরাল করার আগে তার পজিটিভ-নেগেটিভ দুটো দিকই বিবেচনায় আনতে হবে। একযুগ আগেও ভাইরাল শব্দটি ছিল আতঙ্কের কারণ। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ভাইরালকে দিয়েছে ইতিবাচক ভাবমূর্তি। অনেকেই এখন ভাইরাল হতে চান। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ভাইরাল হওয়ার জন্য খোঁজে নানা উপায়। মুদ্রার উল্টো দিকও আছে; অনলাইনে ভাইরাল হওয়ার কারণে অনেকের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ, ছড়ায় ভুল তথ্য।

বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সহিংসতা হয়ে উঠেছে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব রূপ নিচ্ছে সংঘাতে, ব্যক্তি জীবনের ক্ষুদ্র কোন ঘটনা সহিংসতায় রূপ নিয়ে প্রাণ যাচ্ছে অনেকের। আবার সহিংস কর্মকান্ড খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে, অনলাইন সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জনমানুষের মধ্যে ভালভাবেই আলোড়িত হয় এসব সহিংসতা। গবেষণায় দেখা গেছে সহিংস সংঘাত, মনন-মানসিকতার ওপর দীর্ঘস্থাায়ী প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ এসব সহিংস ঘটনা যত বেশি আমাদের সামনে আসে, আমরা ততই এর প্রতি এক ধরনের আসক্তি কিংবা ভীত হয়ে পড়ি। সহিংসতা দেখা মানুষগুলো তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে এর উপস্থিাতি অনুভব করে, অর্থাৎ সে মনে করতে থাকে গোটা সমাজ কিংবা দেশই সহিংসতার আওতায়, কোথাও কোন কিছু বলা যাবে না, প্রতিবাদ করা যাবে না, এমনকি রাতের অন্ধকারে পরিচিত রাস্তায় হাঁটাও সে বিপজ্জনক মনে করে। এতে সমাজ জীবনের যে গতি, তার প্রেক্ষাপট হয়ে যায় ভিন্ন, রূপ নিতে থাকে ব্যাধিগ্রস্ত সমাজে। এসব সহিংস সংঘাতের ভিডিওবার্তা, সমাজের এক শ্রেণীর মানুষকে সাহস যোগায়, চিন্তায় আনে নেতিবাচক পরিবর্তন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সহজ উপায়ও পেয়ে যায়এ ভেতরের ক্ষোভ ও আবেগ নিঃসরণ করতে বাস্তবজীবনে সহিংসতা ঘটাতে এক ধরনের উত্তেজনায় ভোগে। মনে করতে থাকে, আমিও তো এমন করতে পারি, আর করলে কি এমন হবে! এই বোধ জন্মানোর ফলে সমাজে বেড়ে যায় আরও সহিংস সংঘাত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব সংঘাতের ভিডিও চিত্র ভাইরাল হলে, আমরা ভালই মনে করি তা দেখতে পেরে, কিন্তু সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে তা নেতিবাচক এবং কখনও কখনও ভয়ঙ্কর।

নেতিবাচক এমন হাজারো ছবি, ভিডিও বা লেখা আছে ইন্টারনেটে। অনলাইনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাই এর অন্যতম সমাধান। সবচেয়ে বড় কথা হলো- ভাইরাল মানেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেহেতু কোন সম্পাদক নেই, যা ইচ্ছা তা-ই শেয়ার করা যায়। অতএব নিশ্চিত না হলে যাচাই করে নেয়াই উত্তম।

লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ