• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিমণ্ডল

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৯  

বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে—এ কথা আজ কে না জানে। এখন সময় হয়েছে এই এগিয়ে চলাকে সুসংহত ও ত্বরান্বিত করতে হবে। বস্তুত বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে চিহ্নিত। তবে দেশটি ইতিমধ্যে ‘স্বল্পোন্নত’ তমগা ঝেড়ে ফেলার লক্ষ্যে মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এবং মানব-সক্ষমতাসংক্রান্ত তিনটি শর্তই ভালোভাবে পূরণ করেছে। মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে নিম্নমধ্য আয়ের দেশেও উন্নীত হয়েছে। সামাজিক বিভিন্ন সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্বে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে।

২০১৮ সালে জাতিসংঘের মূল্যায়নে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে আসার সব শর্ত পূরণ করেছে। প্রথা অনুযায়ী জাতিসংঘ আবার ২০২১ সালে বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করবে এবং তখনো শর্ত পূরণ অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালে এই পর্যায় থেকে উত্তরণের ছাড়পত্র পেতে পারে।

অনেকেই বলছেন, স্বল্পোন্নত দেশগোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে এলে এসব দেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় তা থেকে বাংলাদেশ ‘বঞ্চিত’ হয়ে সমস্যায় পড়বে। কাজেই যত দেরি করে এই অবস্থান থেকে বের হওয়া যায় ততই ভালো। আমি মনে করি, এই বিবেচনা পরমুখাপেক্ষিতার নামান্তর।

একসময় বলা হতো, শিল্পোন্নত বিশ্বে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ‘কোটা’ ব্যবস্থা উঠে গেলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে ধস নামবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। বাংলাদেশের মোট বস্ত্র ও তৈরি পোশাক রপ্তানির ৯৪-৯৫ শতাংশ গন্তব্যস্থল ছিল এসব দেশ। ২০০৫ সালে কোটা ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়, তবে কোটা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস তো নামেইনি বরং রপ্তানি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। স্বল্পোন্নত দেশগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত থাকায় বর্তমানে বাংলাদেশ সাধারণ অগ্রাধিকার ব্যবস্থা (generalized system of references) থেকে কিছু বাণিজ্য-সুবিধা পায় আর সহজ শর্তে কিছু ঋণ পেয়ে থাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে (যেমন বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক থেকে)।

এছাড়া আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে আসা-যাওয়ার খরচসহ অংশগ্রহণ খরচ পাওয়া এবং উন্নত কোনো দেশে পড়ার জন্য কিছু বৃত্তি পাওয়া যায়। এগুলো হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এ ধরনের ‘করুণা’ গ্রহণের পর্যায় থেকে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে। পড়াশোনায় ভালো করলে এমনিতেই উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পাওয়া যায়, স্বল্পোন্নত তমগার প্রয়োজন নেই।

আবার স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে চিহ্নিত থাকার কারণে এক ধরনের অধস্তন অবস্থা এবং সেজন্য উন্নয়ন ও অন্যান্য বিষয়ে এদেশকে খবরদারির আওতায় রাখার প্রবণতা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে লক্ষ করা যায়। সামান্য সহায়তা দিয়ে অনেক খবরদারি চালানো হয়। এটি সম্মানজনক অবস্থান নয়। বর্তমানের বাংলাদেশের এই অবস্থায় থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন নিশ্চয়ই নিজস্ব স্বকীয়তায় এগিয়ে যেতে পারে।

স্বল্পোন্নত দেশগোষ্ঠীভুক্ত যে কোনো দেশ স্বেচ্ছায় যে কোনো সময় সার্বভৌম সিদ্ধান্তে এই গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালে জাতিসংঘের দ্বিতীয় মূল্যায়নের পর স্বেচ্ছায় এই দেশগোষ্ঠী থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসা উচিত অর্থাত্ স্বল্পোন্নত কাতার থেকে উত্তরণ ঘটানো উচিত বলে আমি মনে করি। ফলে দেশের মর্যাদা বাড়বে এবং উন্নতি করার সুযোগও অনেক বাড়বে। এছাড়াও ২০২১ সাল অন্য কারণেও জাতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর। ঘোষিত মুুজিববর্ষ ২০২১ সালে শেষ হবে এবং ২০২১-এই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে কখনো চিহ্নিত ছিল না। ইতিমধ্যে মালদ্বীপ ও ভুটানের স্বল্পোন্নত পর্যায় থেকে উত্তরণ ঘটেছে। নেপালও ২০২১/২২ সালে ঐ অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার কথা। ২০২১-এর পর বাংলাদেশ যদি স্বল্পোন্নত দেশগোষ্ঠীভুক্ত থাকে, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের সঙ্গে এক কাতারে থাকবে।

উল্লেখ্য, তিনটি দেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হতে রাজি হয়নি। এই দেশ তিনটি হলো : ঘানা, জিম্বাবুয়ে ও পাপুয়া নিউগিনি। আর স্বল্পোন্নত দেশগোষ্ঠী থেকে এ পর্যন্ত যে কয়েকটি দেশের উত্তরণ ঘটে, এগুলোর কোনোটাই সব কটি অর্থাত্ তিনটি শর্ত পূরণ করেনি। দুটি পূরণের পরই তাদের উত্তরণ ঘটেছে। বাংলাদেশ শুধু তিনটি শর্ত পূরণই করে নাই, দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে।

বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন সহায়তার ওপর সামান্যই নির্ভরশীল। বর্তমানে তা জাতীয় আয়ের ২.০ শতাংশের কম এবং ঋণ পরিশোধ বাদ দিলে নিট ১.০ শতাংশের কম। এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে আসা এবং অব্যাহত আর্থসামাজিক অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ঋণ-মান আরো ভালো হবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে সরকারি বা বেসরকারি ঋণ অপেক্ষাকৃত কম সুদ হারে পাওয়া যাবে। উন্নত ও উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলে রপ্তানি বৃদ্ধি সম্ভব। উন্নয়নশীল বাংলাদেশ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্যও অধিকতর উপযোগী বলে বিবেচিত হবে এবং শ্রমও এখানে অপেক্ষাকৃত সস্তা। তবে এসব সুযোগ গ্রহণ এবং দেশে-বিদেশে বিরূপ পরিস্থিতি থাকলে তা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে হলে অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যাপকভাবে জনদক্ষতা সৃষ্টি, সুশাসনে বিদ্যমান ঘাটতি দূরীকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়ক-ব্যবস্থাকে অধিক কার্যকর করে তুলতে এখন থেকেই বিশেষভাবে এবং অব্যাহতভাবে নজর দিতে হবে ।

বিশ্বায়ন যেমন কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেছে তেমনি সমস্যাও তৈরি করেছে। সুযোগের মধ্যে সম্ভাব্য স্বল্প-শুল্ক ব্যবস্থায় বাণিজ্য বৃদ্ধি ও উন্নয়ন সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য। তবে যে বিশ্বায়ন ঘটেছে তা মূলত ব্যবসা ও পুঁজি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে। এ থেকে উন্নত বিশ্ব অধিক লাভবান হয়েছে। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে উন্নত দেশসমূহে মানুষের যাতায়াত বরং ক্রমশ অধিকতর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কাজের জন্য যাওয়ার ক্ষেত্রে কঠিন প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান থেকেছে। এক্ষেত্রে সহজীকরণ অর্থাত্ বিশ্বায়ন হলে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশসমূহ বিশেষভাবে লাভবান হতে পারত।

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা বর্তমানে বছরে ১৫-১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে প্রেরণ করে থাকেন। বিভিন্ন দেশে (যেমন : জাপান, জার্মানি) প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুবই শ্লথ অথবা নেতিবাচক হওয়ায় সেসব দেশে বিদেশি শ্রমিকের চাহিদা বাড়বে। বিভিন্ন দেশে প্রয়োজন আছে এমন দক্ষ জনবল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সুযোগ গ্রহণে কার্যকরভাবে সচেষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে যেসব দালাল বিদেশে কাজের জন্য যেতে আগ্রহীদের ঠকিয়ে অনেক সময় নিঃস্ব করে বা মহাবিপদে এমনকি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

সাংস্কৃতিক আগ্রাসনও লক্ষণীয়। উন্নয়ন সহযোগিতার নামে গ্রহীতা দেশগুলোর আর্থসামাজিক ও সংস্কৃতিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়। অবশ্য প্রশ্ন করা যায় যে, এগুলো কেন গ্রহণ করা হয়? সোজা উত্তর, নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এক ধরনের নির্ভরতা তৈরি হয়ে আছে এবং ফলে তারা চিন্তাভাবনা না করে প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করেন। হয়তো-বা ভাতা-প্রাপ্তি ও বিদেশ ভ্রমণসহ অন্যান্য কিছু সুযোগ-সুবিধাও থাকে। সুতরাং এক্ষেত্রে দোষগ্রহীতা দেশেরও রয়েছে। অভিজ্ঞতা থেকে এটি সুস্পষ্ট যে অনেক প্রকল্প দীর্ঘ মেয়াদে দেশটির অগ্রগতিতে তেমন অবদান রাখে না, বরং নানা অসামঞ্জস্য ও টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। সবচেয়ে বড়ো কথা বিশ্বায়ন হয়েছে এবং হচ্ছে ওয়াশিংটন সহমত (Washington Consensus)-এর ভিত্তিতে। অর্থাত্ বাজার অর্থনীতি এবং নব্য উদারতাবাদের মূল চালিকা শক্তি। এই ব্যবস্থায় পরিচালিত অর্থনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে বৈষম্য সৃষ্টি হয় এবং ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। তাই বিশ্ব জুড়ে আজ বৈষম্য আকাশচুম্বী (১ শতাংশ সর্বোচ্চ ধনীর হাতে পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ এবং ৯৯ শতাংশের হাতে বাকি অর্ধেক। এই ৯৯ শতাংশের মধ্যেও ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। পৃথিবীতে ৮০০ মিলিয়নের অধিক মানুষ বর্তমানে অতিদরিদ্র এবং প্রায় সমপরিমাণ মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণায় সময় সময় ভুগছে—কখনো পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব, কখনো-বা পর্যাপ্ত পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্যের অভাবে।

আয় বৃদ্ধির আগ্রাসি অর্থনীতি সর্বত্র, বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে, বাস্তবায়ন এবং ধনিকদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের ফলে পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত। জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং কয়েক বছরের মধ্যে এই ধারাকে নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে পৃথিবী এক মহাসংকটের মুখোমুখি হবে। বাংলাদেশের মতো ভঙ্গুর প্রাকৃতিক বাস্তবতার দেশসমূহ দ্রুত বিধ্বস্ততার পথে এগিয়ে যাবে। বিশ্ব নেতৃত্ব এ বিষয়ে কথা বলছে কিন্তু এই দ্রুতগতির ধ্বংসের পথ থেকে পরিত্রাণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পৃথিবীর ক্ষমতাশীলদের নিজ নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে অর্থাত্ সম্পদ ও ক্ষমতা বাড়াতে লোভ-লালসায় মত্ত থাকা এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

যে বিশ্ব বাণিজ্য উদারীকরণের মাধ্যমে বিশ্বায়ন ঘটেছিল, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্মুখী হয়ে পড়ছে। চীন-মার্কিন বাণিজ্য-যুদ্ধ চলছে, একে অপরের রপ্তানির ওপর শুল্ক বাড়াচ্ছে। এর ফলে শুধু এই দুই দেশের মধ্যেই নয় বরং ব্যাপক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে গোটা বিশ্ববাজারেই। তাই সারা বিশ্ব এই বিরূপ অভিঘাতে জর্জরিত হতে পারে। বিভিন্ন উন্নত দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা ও উন্নয়নশীল বড়ো বড়ো অর্থনীতিতে (যেমন, চীন ও ভারতে) জাতীয় উত্পাদনে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়া লক্ষণীয়। অর্থনীতিতে এরকম নানা চাপ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও বিরাজমান। এই বাস্তবতায় বিশ্বমন্দার হাতছানি দেখছেন অনেক বিশ্লেষক। এক্ষেত্রে যেসব দেশ ও অঞ্চলে বাংলাদেশের স্বার্থ অধিক জড়িত সেসব স্থানে কী কী ঘটছে এবং ঘটতে পারে সেদিকে নজর রেখে বাংলাদেশকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে দেশের অগ্রগতিতে বিরূপ প্রভাব না পড়ে বা তা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ইউরোপীয় জোট থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার ধস্তাধস্তির প্রক্রিয়া ইউরোপে টানাপোড়ন ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে। শেষ পর্যন্ত কী অবস্থা দাঁড়ায় এক্ষুনি বলা যাচ্ছে না। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেলে যদি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে, বাংলাদেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে সে দেশে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর এবং সেখান থেকে বাংলাদেশে প্রেরিত রেমিট্যান্সের ওপর বিরূপ প্রভাবের মধ্য দিয়ে। এছাড়া সন্ত্রাবাদের বিশ্বায়ন ঘটছে, যা বিশ্বশান্তি ও বিশ্বের টেকসই উন্নয়নের জন্য এক বড়ো হুমকি। উন্নত এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশে সামরিক ব্যয় বেড়েই চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়াসহ অনেক দেশই নিজ নিজ দেশের এবং নিজ নিজ স্বার্থের সুরক্ষা ছাড়াও বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে তা করছে। ফলে বিশ্বে টেকসই উন্নয়নে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদানে তাদের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে বিশ্ব-সামরিক ব্যয় ১ দশমিক ৮ (১.৮) ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নতি হয়েছে। ২০১৭-এর তুলনায় তা ২.৬ শতাংশ বেশি। অর্থাত্ এক বছরে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়েছে। শুধু এই বর্ধিত ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সামরিক খাতে ব্যয় না করে উন্নয়ন সহযোগিতায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যয় করলে বিশ্ব অনেক উপকৃত হতো।

বাংলাদেশেকে একদিকে বিশ্বপরিমণ্ডলে সৃষ্ট সুযোগ গ্রহণে সচেষ্ট থাকতে হবে। অপরদিকে আভ্যন্তরীণ সব শক্তি সুচারুভাবে সমাবেশ করতে হবে এবং অধিকতর উপযোগী করে গড়ে তুলে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে জনবল, জমি, পানি (নদনদী, হাওর, বিল, সমুদ্র) উল্লেখ্যযোগ্য। এ লক্ষ্যে চলার পথে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় বিদ্যমান দুর্বলতা ও ঘাটতি দূর করে সকল কর্মকাণ্ডের বাস্তবায়ন যাতে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতায় ঘটে সেদিকে অধিক নজর দিতে হবে। অবচয় ও দুর্নীতি দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। সেটা অনুধাবন করে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২০১৮ নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকার করা হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বর্তমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান ও বেশ কিছু দিন থেকে চলে আসা বুড়িগঙ্গাসহ কয়েকটি নদী ও নদীর পাড় দখলমুক্ত করার কার্যক্রম প্রশংসার দাবি রাখে। আশা করা যায়, এই শুভ সূচনা দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে অব্যাহত থাকবে এবং ব্যাংকিং খাতসহ সব খাতে সম্প্রসারিত করা হবে, জোরদার করা হবে। এক্ষেত্রে সফলতা দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হবে এবং দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করবে।

লেখক :অর্থনীতিবিদ

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ