• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় স্কুল থেকে কাজ করতে হবে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০১৯  

দেশ কি সত্যিই জঙ্গলের রাজ্যে পরিণত হলো? টিভিতে প্রকৃতিভিত্তিক ডকুমেন্টারিতে দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রাণীকে তাড়িয়ে পশুরাজ সিংহ তার শিকারটি নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। এটি জঙ্গলের বন্যপশুর নীতি। এমনটাই ঘটেছে ভোলার মনপুরা উপজেলায়। এক নারী যাত্রীকে স্পিডবোট থেকে নামিয়ে নির্জন চরে নিয়ে ধর্ষণ করেছে চারজন। এ খবর পেয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ধর্ষকদের তাড়িয়ে তার পর নিজেই হতভাগ্য নারীকে ধর্ষণ করেন। বোঝা যাচ্ছে এই জননেতা নারীটিকে উদ্ধার করার জন্য সেখানে যাননি, শিকারের সন্ধান পেয়েই ছুটে গিয়েছিলেন। তার পর তৃপ্তিসহকারে পৌরুষের ক্ষুধা চরিতার্থ করলেন।

মানতেই হবে, বাংলাদেশে নারীরা আর নিরাপদ নয়। শিক্ষাঙ্গনে নয়, যানবাহনে নয়, পথে তো নয়ই, ক্ষমতাবানদের কাছেও নয়, কর্মক্ষেত্রে নয়, এমনকি থানাতেও নয়, নয় নিজ ঘরে, উঠোনে, বাগানেও। কোথায় যাবে তা হলে নারীরা, কার কাছ থেকে সহায়তা পাবে?

আইন, পুলিশ, উকিল, বিচারব্যবস্থা কোথাও তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই। প্রেমিক বন্ধুদের নিয়ে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করে, স্বামীও বন্ধুদের ধর্ষণের সুযোগ করে দেয়। এমনকি স্বামীর প্রবল ইচ্ছায় স্ত্রী তার শারীরিক কষ্ট সত্ত্বেও সহবাসে বাধ্য হয়। এ-ও এক রকমের ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন।

আমাদের সমাজে এখনো সব সিদ্ধান্তের মালিক পুরুষ। মেয়েরা কাজকর্মে বাড়ির বাইরে আসছেন বটে কিন্তু পথে, কর্মস্থলে কোনো না কোনো ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হতেই হয় তাদের। হয়তো একে তারা নিজের আয় ও পরিচয়ের মূল্য হিসেবে দেখেন। কিন্তু সমাজ তো উভয় লিঙ্গের মানুষের দ্বারাই গঠিত। সমকামী বা তৃতীয় লিঙ্গের প্রসঙ্গ এখানে টানব না। সুস্থ সবল মানুষরা কেন অমানুষের মতো কাজ করবেন? তাদের দৌরাত্ম্যে আজ নারীরাও কোথাও নিরাপদ নয়। জরিপে দেখা যাচ্ছে, শতকরা প্রায় ৯০ জন নারী ঘরে, পথে, যানবাহনে এবং কর্মস্থলে কখনো না কখনো যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। আর ধর্ষণের ঘটনা প্রতিদিন এত ঘটছে যে, তার সবটাই গণমাধ্যমে আসে না, মামলাও হয় না। ফলে ধর্ষকরা ভালোভাবেই বেঁচেবর্তে থাকে এ সমাজে, অবাধে নিজেদের লালসা চরিতার্থ করে থাকে। আর যেসব মামলা হয় তার সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করে যে বিচার তাও তো নারীর জন্য চরম অবমাননাকর। অনেক লেখালেখি সত্ত্বেও প্রমাণের দায় নারীর ওপর চেপে রয়েছে। জানা যাচ্ছে বাধা ডিঙিয়ে যত মামলা হয়েছে তার নগণ্যসংখ্যকের বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি সব ঝুলে আছেÑ নারীরই বিড়ম্বনা হিসেবে।

ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বন্ধে আন্তরিক হলে স্কুল থেকেই ছেলেদের নারীর প্রতি সহানুভূতি, সম্মান এবং বন্ধুত্বের শিক্ষা দিতে হবে। সেটা আসলে কঠিন কাজও নয়। কিন্তু আমরা শুরুই করছি না। সংখ্যাতাত্ত্বিক নিয়মে স্কুলে, যাতায়াতে, কর্মস্থলে মেয়েদের সংখ্যা যদি পুরুষের সমান বা অধিক হয় তা হলে যত্রতত্র যখন-তখন তাদের হয়রানি করা বন্ধ হবে। অপরিচয়ের দূরত্ব নয়, পরিচয়ের ক্ষেত্র বাড়িয়েই ছেলেদের অহেতুক চিত্তচাঞ্চল্যের অবসান ঘটাতে হবে। পরিবর্তনের ধুয়ার মধ্যে নারী-পুরুষের সমাজে সমতা ও সমমর্যাদার কালচার তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ