• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মহানবী (সা.)-এর জীবনে সফর মাসে যা ঘটে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  

হিজরি বর্ষের দ্বিতীয় মাস হলো সফর মাস। আমাদের সমাজে নানা কথা বা কুসংস্কার প্রচলিত আছে সফর মাস নিয়ে। কোনো মাসকে অশুভ মনে করা কোনো মুমিনের জন্য উচিত নয়। এটি ইসলামী আকিদার পরিপন্থী। ইতিহাস বা সিরাতগ্রন্থের দিকে তাকালে দেখা যায়, রাসুল (সা.)-এর নবুয়তি জীবনে সফর মাসে বেশ কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়। নিম্নে তা তুলো ধরা হলো—

খাজিদা (রা.)-এর সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর বিয়ে : রাসুল (সা.) ২৫ বছর বয়সে উপনীত হলে খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হন। রাসুল (সা.)-এর চাচা আবু তালিব অভিভাবক হিসেবে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাসুল (সা.)-এর মোহরানা হিসেবে ২০টি উট প্রদান করেন। ঐতিহাসিক এই বিবাহ সংঘটিত হয়েছিল সফর মাসে। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/২৬৫)

গৃহ থেকে গারে সাওরে : নবুয়তের চতুর্দশ সালে ২৭ সফর মধ্যরাতের কিছু সময় পর রাসুল (সা.) নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে  আবু বকর (রা.)-এর ঘরে উপস্থিত হন। সেখান থেকে রাতের আঁধারেই বের হয়ে মক্কা থেকে পাঁচ মাইল দূরে সাওর পর্বতে অবস্থান করেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ২০৮)

রজির ঘটনা : চতুর্থ হিজরির সফর মাসে আজল ও কারাহ গোত্রের কয়েকজন লোক রাসুল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়। তারা তাদের গোত্রের লোকজনকে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য কয়েকজন সাহাবিকে পাঠানোর আরজ করে। তখন রাসুল (সা.) ছয়জন বা ১০ জন সাহাবি তাদের সঙ্গে প্রেরণ করেন। রাসুল (সা.) মারসাদ আল-গানভিকে তাদের আমির নিযুক্ত করেন। তারা রজি নামক ঝরনার কাছে পৌঁছলে আজল ও কারাহ গোত্রের লোকেরা বনু লাহয়ানকে আক্রমণের জন্য প্ররোচিত করে। বনু লাহয়ান সাহাবিদের ওপর আক্রমণ করে তাদের কয়েকজনকে শহীদ করে, আর কয়েকজনকে বন্দি করে। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৩৩৩)

কুদাইদ অভিযান : বুন মুলাওওয়াহকে শায়েস্তা করার জন্য গালিব ইবনে আব্দুল্লাহ আল লায়সির নেতৃত্বে কুদাই নামক স্থানে এ অভিযান প্রেরণ করা হয়। বনু মুলাওওয়াহ বিশর ইবনে সুওয়াইদের বন্ধুদেরকে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই অভিযান প্রেরণ করা হয়। সপ্তম হিজরির সফর বা রবিউল আওয়াল মাসে এ ঘটনা ঘটে। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা : ৪৩৮)

আবওয়ার অভিযান : দ্বিতীয় হিজরির সফর মাসে রাসুল (সা.) ৭০ জন যোদ্ধা নিয়ে আদ্দানের নিকটবর্তী আবওয়া অঞ্চলের অভিমুখী হন। এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল কুরাইশের একটি কাফেলার পথরোধ করা। এই অভিযানে সংঘাতমূলক কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা ছিল প্রথম যুদ্ধ, যাতে রাসুল (সা.) নিজে অংশগ্রহণ করেন। এই অভিযানে রাসুল (সা.) ১৫ দিন মদিনার বাইরে ছিলেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, ২৪৩)

আলি (রা.) ও ফাতেমা (রা.)-এর শুভ বিবাহ : ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, দ্বিতীয় হিজরির সফর মাসে আলী (রা.)-এর সঙ্গে ফাতেমা (রা.)-এর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। (আস-সিরাহ আন নববিয়্যাহ লিবনে কাসির, ৪/৬১১)

কুতবাতু ইবনে আমের (রা.)-এর অভিযান : নবম হিজরির সফর মাসে কুতবাতু ইবনে আমর (রা.)-এর নেতৃত্বে রাসুল (সা.) খাসআম গোত্রের উদ্দেশ্য একটি অভিযান প্রেরণ করেন। এই অভিযানের সৈন্য সংখ্যা ছিল ২০ জন আর বাহন ছিল ১০টি উট। যার ওপর পালাক্রমে তারা আরোহন করতেন। রাতের বেলা মুসলিম বাহিনী আক্রমণ চালায়। এতে কুতবাসহ আরও কয়কজন মুসলিম সৈন্য শহিদ হয়। তা সত্ত্বেও মুসলিমরা বিজয়ী হয়ে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ নিয়ে মদিনায় ফিরে আসেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা : ৪৮৬)

আজরার প্রতিনিধিদলের আগমন : নবম হিজরিতে রাসুল (সা.)-এর কাছে আজরা গোত্রের ১২ জন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আগমন করে। তাঁদের মধ্যে হামজা বিন নোমানও ছিলেন। রাসুল (সা.) তাঁদের স্বাগত জানান এবং শাম বিজয়ের সুসংবাদ দেন। দলটি ইসলাম গ্রহণের পর কয়েক দিন মদিনায় অবস্থান করে নিজ গোত্রের কাছে ফিরে যায়। (আর-রাহিকুল মাখতুম, ৫০৯)

আমর ইবুনল আস (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণ : ইবনে ইসহাক (রহ.) বলেন, অষ্টম হিজরির সফর মাসে আমর ইবুনল আস, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ এবং উসমান ইবনে তলহা ইসলাম গ্রহণ করেন। (আল-মজামুল কাবির, ৯/৬১)

খালিদ (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণ : ইবনে ইসহাক (রহ.) বলেন, অষ্টম হিজরির সফর মাসে আমর ইবুনল আস, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ এবং উসমান ইবনে তালহা ইসলাম গ্রহণ করেন। (আল-মজামুল কাবির : ৯/৬১)

শেষ সামরিক অভিযান প্রেরণ : ১১ হিজরির সফর মাসে রাসুল (সা.) উসামা ইবনে জায়দের নেতৃত্বে রোমানদের উদ্দেশে শেষ সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন। সাহাবিরা উসামা ইবনে জায়দের নেতৃত্বে একত্রিত হয়ে যাত্রা করেন। তাঁরা মদিনা হতে তিন মাইল দূরে জুরফ নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন। কিন্তু রাসুল (সা.)-এর অসুস্থতার কারণে বাহিনীর অগ্রযাত্রা থেমে যায়। (আল-মুনতাকা ফি সিরাতিল মোস্তফা : ১/৮২)

রাসুল (সা.)-এর অসুস্থতার সূচনা : একাদশ হিজরির ২৯ সফর। রাসুল (সা.) জান্নাতুল বাকিতে গেলেন কোনো এক জানাজায়। সেখান থেকে ফেরার পথে তাঁর মাথা ব্যথা শুরু হয়। এই অসুস্থতাই ছিল রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুরোগের সূচনা। এই অসুস্থতা নিয়ে রাসুল (সা.) ১১ দিন পর্যন্ত নামাজের ইমামতি করেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৫২৯)

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ