• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বসে পানাহার মহানবীর সুন্নত

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১  

টি-স্টলে দেখা যায়, বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বাধ্য হয়ে ক্রেতাদের সেখানে দাঁড়িয়ে পানাহার করতে হয়। শুধু চা-কফিই নয়, চা-কফির সঙ্গে হালকা নাশতা সেরে নিতে হয় দাঁড়িয়ে। এটি দেখতে যেমন দৃষ্টিকটু,  তেমনি খাওয়ার আদবের পরিপন্থী। প্রিয় নবীজি (সা.) দাঁড়িয়ে পানাহার করা পছন্দ করতেন না। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) কোনো মানুষকে দণ্ডায়মান হয়ে পান করতে বারণ করেছেন। কাতাদা (রহ.) বলেন, আমরা বললাম, তবে দাঁড়িয়ে খাবারের ব্যাপারে (আদেশ কী)? তিনি বলেন, সেটা তো আরো নিকৃষ্ট, আরো জঘন্য।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫১৭০)

দাঁড়িয়ে পানাহারের মাধ্যমে শুধু খাবারের আদব লঙ্ঘন হয় না; বরং এতে মানুষের শারীরিক অনেক ক্ষতি হয়। এবং যেসব দোকান মানুষের চলাচলের রাস্তার পাশে, সেখানে জটলা বেঁধে পানাহার করার কারণে মানুষের চলাচলেও বিঘ্ন ঘটানো হয়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে অনুচিত। বরং মুমিনের দায়িত্ব হলো, মানুষের চলাচলের রাস্তায় কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা দূর করা। আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে একটি গাছের কারণে জান্নাতে আনন্দ-ফুর্তি করতে দেখেছি। এই গাছ সে রাস্তার ওপর থেকে দূর করেছিল, যেটি মানুষকে কষ্ট দিত। (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬৫)

তাই এমন দোকানে পানাহার করা উচিত নয়, যেখানে বসার ব্যবস্থা রাখা হয়নি এবং মানুষের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পানাহার করতে হয়। এভাবে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে পানাহার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) দাঁড়িয়ে পান করা থেকে কঠিনভাবে সাবধান করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫১৭২)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কখনো দাঁড়িয়ে পান না করে। কেউ ভুলে পান করলে সে যেন পরে বমি করে ফেলে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫১৭৪)

দাঁড়িয়ে পান করার অপকারিতা সম্পর্কে বিশেজ্ঞরা বলেন, এতে বদ-হজম হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে, জিইআরডি-তে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে, অ্যাংজাইটি লেভেল বেড়ে যায়, পানি পান করলেও তেষ্টা থেকেই যায়, কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়, অ্যাসিড লেভেলে তারতম্য দেখা দেয়, আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

দাঁড়িয়ে খাবার গ্রহণ করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে চলে যায়। এতে খাবার সঠিকভাবে হজম হয় না ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়। আর খাদ্যনালি, পাকস্থলীতে কোনো সমস্যা না থাকলেও হতে পারে অ্যাসিডিটির সমস্যা। খাবার ঠিকমতো হজম না হলে এর প্রভাব পুরো শরীরে পড়ে। কারণ বদহজম নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। বদহজম হলে গ্যাস, পেট ফাঁপা, খাবার জমাট হয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বুক জ্বালা ও অবসাদ দেখা দেয়।

সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাপার হলো, দাঁড়িয়ে পানাহার করলে ওই খাবারে ইবলিস শয়তান এসে যোগ দেয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে পান করতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি পছন্দ করো যে তোমার সঙ্গে বিড়াল একসঙ্গে পান করুক? জবাবে লোকটি বলল, না। রাসুল (সা.) বলেন, তোমার সঙ্গে তার চেয়ে নিকৃষ্ট কেউ পান করেছে, আর সে হলো শয়তান। (মুসনাদে আহমদ)

তাই আমাদের উচিত দাঁড়িয়ে পানাহার করা থেকে বিরত থাকা। শুধু জমজমের পানির বিধান ভিন্ন। কারণ কোনো বিজ্ঞ আলেমের মতে, জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা মুস্তাহাব। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জমজম থেকে পানি পান করিয়েছি। তিনি দাঁড়িয়ে তা পান করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৫১৭৫)

কারো কারো মতে, অন্য পানির মতো জমজমের পানিও বসে পান করা মুস্তাহাব। রাসুল (সা.)-এর দাঁড়িয়ে পান করার কারণ হলো, জমজম কূপের চারপাশে কাদা ও মানুষের ভিড় ছিল। আর সেখানে বসারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মুফতি শফি (রহ.)-এর গবেষণা মতে, জমজমের পানিও অন্য পানির মতো বসে পান করা উত্তম।

ইসলাহি খুতুবাত : ৫/১৯২)

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ