• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মুমিনের আচরণশৈলী

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২১  

আল্লাহ মানুষকে যত নেয়ামত দান করেছেন, তার অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ হলো ইমান। ইমান ছাড়া দুনিয়ার জীবনের কোনো আমলই আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় নয়। এটি মুসলমানের অমূল্য সম্পদ।  পরকালীন সফলতা ও মুক্তির মানদণ্ড। তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসীকে মুমিন বলে। মুমিনের আচার-আচরণ, চলাফেরা, কথাবার্তা ও জীবনযাপন কেমন হবে, কোরআন-হাদিসে সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।

ধৈর্য ও সহনশীলতা : নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য রহমত। মানবজাতির অনুপম আদর্শ। মুমিন জীবনের পরম ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু। জগতের শ্রেষ্ঠ মানব হয়েও বিপদ, শঙ্কা ও শত্রুমুক্ত ছিল না তার জীবন। কঠিন কঠিন মুহূর্ত তাকে পার করতে হয়েছে। সর্বত্রই তিনি অত্যন্ত ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। উম্মতকেও তিনি এ শিক্ষা দিয়ে গেছেন। সফল মুমিন হতে গেলে অন্যের প্রতি দয়া-মায়া ও ভালোবাসার সঙ্গে প্রয়োজন রয়েছে ধৈর্য ও সহনশীলতার। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, তোমরা ধৈর্যধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং সুসম্পর্ক স্থাপনে আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামে অবিচল থাকো, আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ সুরা আলে ইমরান : ২০০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সহনশীল হওয়ার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে সহনশীলতার শক্তি দান করবেন, আর সহনশীলতা থেকে অধিক উত্তম ও ব্যাপক কল্যাণকর আর কিছুই কাউকে দান করা হয়নি।’ সহিহ্ বোখারি

নম্রতা : সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল এক জাতি মানুষ। অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রকাশ করা মানুষের মানায় না। বিনয় ও নম্রতা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়। এটা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তার চলাফেরা, কথাবার্তা ও আচার-আচরণে কখনোই অহংভাব ও দাম্ভিকতা প্রকাশ পাবে না। অহংকারী ও দাম্ভিককে আল্লাহ অপছন্দ করেন। নম্র ও বিনয়ীকে তিনি ভালোবাসেন, মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সঙ্গে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম এবং যারা রাত্রিযাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দণ্ডায়মান হয়ে এবং যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ; বসবাস ও অবস্থানস্থল হিসেবে তা কত নিকৃষ্ট জায়গা!’ সুরা ফুরকান : ৬৩-৬৬

সততা : নিষ্ঠা ও সততা একজন ভালো মানুষের গুণ। উন্নত দেশ ও জাতি গঠনের পূর্বশর্ত। প্রকৃত সফলতা অর্জনের মূলমন্ত্র। মুমিনের জন্য আবশ্যক। কপটতা ও প্রতারণা তার মাঝে কখনো দানা বাঁধতে পারে না। কথা ও কাজে সব সময় থাকবে অভিন্ন। জীবনের সর্বত্রই তাকে সৎ ও নিষ্ঠাবানের পরিচয় দিতে হবে। পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ বলেন, আজকের দিনে সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের উপকারে আসবে। তাদের জন্য উদ্যান রয়েছে, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত হবে; তারা তাতেই চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট, এটিই মহাসফলতা।’ সুরা আল মায়েদা : ১১৯

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার সুপারিশ তার জন্য, যে একনিষ্ঠতার সঙ্গে সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; যার অন্তর তার মুখকে সত্যায়ন করবে এবং মুখ অন্তরকে সত্যায়ন করবে।’ মুসনাদে আহমাদ

উদারতা : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পরমতসহিষ্ণুতা ও অহিংসার ধর্ম ইসলাম। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন উদারতা, শান্তিপূর্ণ সমঝোতা ও পরমতসহিষ্ণুতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে উদার মানসিকতার খুব বেশি প্রয়োজন। ইসলাম তার অনুসারীদের ধর্মীয় বিধিবিধান, আচার-অনুষ্ঠান, উৎসব ও সংস্কৃতি পালনে যেমন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে, তেমনি সমাজে অবস্থানরত অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সদয় ও উদার হওয়া এবং তাদের উপাসনা ও উৎসব পালনে বিঘœ সৃষ্টি না করার বিষয়েও জোর তাগিদ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিও না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহকেও গালি দেবে।’ সুরা আন নুর : ১০৮

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান, যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।’ আবু দাউদ

অনেককে দেখা যায়, অতি উদারতার বুলি আওড়িয়ে স্বীয় ধর্মের সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা জলাঞ্জলি দিয়ে অন্য ধর্মের রীতিনীতি, সংস্কৃতি ও কালচারকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এটা কখনোই কাম্য না। মুমিনকে অবশ্যই এ বিষয়টি মাথায় রেখে চলতে হবে।

চারিত্রিক অনুপমতা : মুমিন জীবনে চলার পথের উৎকৃষ্টতম পাথেয় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শ। আল্লাহ বলেছেন, ‘রাসুলের জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।’ উত্তম আদর্শ মুমিনকে দুনিয়া ও আখেরাতে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ও মর্যাদাবান করে তোলে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।’ সহিহ বোখারি

ইসলাম বিশ্বময় বিস্তৃতি লাভ করেছে তার আদর্শবলে, তলোয়ারের জোরে নয়। সততা, নম্রতা, উদারতা, নৈতিকতা, ধৈর্য ও সহনশীলতা যার মূল চালিকাশক্তি। ইসলামের শিক্ষা হলো প্রথমে ভালো মানুষ হতে হবে, পরে ভালো মুসলমান। যিনি ভালো মুসলমান তিনি ভালো মানুষও বটে। হাদিসে শরিফে এসেছে, ‘তোমরা ইমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আবার পরস্পরকে ভালোবাসতে না পারা পর্যন্ত ইমানদার হতে পারবে না।’ প্রকৃত মুমিন হতে হলে অন্তরে মানবপ্রেম জাগাতে হবে। মানুষের প্রতি দায়বোধ বাড়াতে হবে। দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণে যিনি কাজ করেন তিনিই আল্লাহর প্রিয়, সফল মুমিন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ