• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

অনুপ্রবেশকারী আর হাইব্রিডরা বহিষ্কার ও গ্রেফতার আতঙ্কে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৮ আগস্ট ২০২০  

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে কয়েকদিন আগে পর্যন্তও এমন ইমেজ সংকট কিংবা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েনি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। চলমান শুদ্ধি অভিযানে পুলিশের হাতে দলের প্রভাবশালী নেতারা একের পর এক ধরা পড়ছেন। দলের প্রবীণ ও ত্যাগীদের মতে, কয়েক নেতার আটকের মধ্য দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের উজ্জ্বল ভাবমূর্তির যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। অনেক নেতা এজন্য ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে দায়ী করছেন।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার মামলায় আটক শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই প্রেস ক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া সিআইডির করা ২ হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং মামলায় জিজ্ঞাসাবাদে দুই ভাই প্রভাবশালী কয়েক নেতার নাম বলেছেন। ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি নাজমুল হাসান খন্দকার লেভী, শ্রমিক লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন ও শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহানকে। এখন পর্যন্ত পুলিশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৬ জনকে আটক করেছে। সূত্র জানান, বরকত-রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের বিভিন্ন অপকর্মের সহযোগী হিসেবে ৬০ জনের নাম বলেছেন। সে তালিকার মধ্যে এখনো পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ৪৪ জন। শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার হওয়ার পরপরই গা-ঢাকা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক শ নেতা-কর্মী। গ্রেফতার এড়াতে তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ আবার ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সুনাম বিনষ্ট করার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কমপক্ষে ৩০ নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এখন গ্রেফতার ও বহিষ্কার আতঙ্কে ভুগছেন বিভিন্ন দল থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী দুর্নীতিবাজ ও ‘হাইব্রিড’ নেতারা।

 

জানা যায়, এক যুগে যারা আধিপত্য, টেন্ডার, চাঁদাবাজি, খুন, গুম, অপহরণ, জমি দখল, শালিস বাণিজ্য করে অবৈধ উপায়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছেন তাদের বিষয়েও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজখবর নিচ্ছে।

 

এদিকে, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক বিশেষ সভায় গ্রেফতারকৃত নেতাদের এবং যাদের নাম দুর্নীতির তালিকায় এসেছে তাদের দায় দল নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন নেতারা। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় দলের ত্যাগী নেতারা দীর্ঘকাল পর উপস্থিত ছিলেন। সভায় বলা হয়, আইন অনুযায়ী দুর্নীতিবাজদের যে বিচার হবে তাকে স্বাগত জানানো হবে। সভা দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের জন্য দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাধুবাদ জানায়। একই সঙ্গে বক্তারা অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে দ্রুত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

 

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন জানান, আওয়ামী লীগের ঘাড়ে ভর করে যারা বিভিন্ন দল থেকে এসে দলের সুনাম নষ্ট করেছে তাদের বহিষ্কার এখন সময়ের দাবি। শুধু দল থেকে বহিষ্কারই নয়, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত যাদের নাম এসেছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। ‘এটা বরকত-রুবেলের ষড়যন্ত্র’ : সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া বরকত-রুবেলের স্বীকারোক্তিতে যে চারজন চেয়ারম্যানের নাম উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছেন ডিক্রির চর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু, কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন, আলিয়াবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ডাবলু, ঈশান গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মজনু। তবে কানাইপুর ও ডিক্রির চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা বরকত-রুবেল তাদের নাম বলাটা ষড়যন্ত্রমূলক বলেছেন। গত বৃহস্পতিবার বিকালে ডিক্রির চর ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান মিন্টু এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করে আসছেন। গত নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন পেলেও টাকা খেয়ে বরকত-রুবেলরা বিএনপি থেকে আসা সাদিকুজ্জামান মিলন পালকে নৌকার মনোনয়ন পাইয়ে দেন। সে নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। সেই থেকে বরকত-রুবেলদের সঙ্গে তার বিরোধ। নির্বাচনের আগে ও পরে তাকে ও তার ভাইয়ের ওপর হামলা চালিয়ে মারাত্মক আহত করে। নির্বাচনের পর গ্রাম আদালতে হামলা চালিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ তুলে এবং মেম্বারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনান। যদিও পরে সেটা তারা আর করতে পারেননি। মিন্টু বলেন, ‘আমার কাজের সাইটের বিল থেকে ২৫ লাখ টাকা রুবেল জোরপূর্বক কেটে রাখেন। আরও টাকা দাবি করলে না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কয়েকটি মামলা করেন। রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বরকত-রুবেল-সিদ্দিকদের সঙ্গে বিরোধ হলে তারা আমাকে নানাভাবে হেনস্তা করেন। তারা তাদের স্বীকারোক্তিতে আমার নামটি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বলেছেন বলে আমি মনে করি। তারা নিজেরা যখন ২ হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলায় ফেঁসে গেছেন তখন আমাকে হয়রানি করতেই এমনটি করেছেন।’ এদিকে, গতকাল দুপুরে কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বরকত-রুবেল জিজ্ঞাসাবাদে আমার নাম বলেছেন বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। আমি সব সময়ই বরকত-রুবেলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। এজন্য দীর্ঘদিন নানাভাবে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হেনস্তার চেষ্টা করেছেন। আমি তাদের দুর্নীতি ও হাতুড়ি বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই হয়তো আমাকে সমাজের কাছে হেয় করতেই তারা এসব করছেন।’

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ