• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

আগের স্বামীর তালাক না নিয়ে বিয়ে করলে কি জায়েজ হবে?

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

মানবজীবনে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জীবনের অত্যাবশ্যকীয় এক প্রয়োজনীয়তা পূরণের লক্ষ্যে পবিত্র এক বন্ধনের নাম বিয়ে।

স্রষ্টার নির্দেশিত ও অনুমোদিত পন্থায় মানবসন্তানের বংশবৃদ্ধির একমাত্র হাতিয়ার।

দাম্পত্য সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝাতে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, স্ত্রীরা তোমাদের ভূষণ এবং তোমরা তাদের ভূষণ। (সূরা বাকারা, আয়াত- ১৮৭)

বৈবাহিক সম্পর্কের অনিবার্যতা প্রমাণিত হয় কোরআনের আরো একটি আয়াতের মাধ্যমে।

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তোমাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি (স্বামী স্ত্রীরূপে) জোড়ায় জোড়ায়। (সূরা নাবা, আয়াত- ৮)

ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ শুধু জৈবিক প্রয়োজন পূরণের মাধ্যম নয়- বরং একটি মহান ইবাদত। এটি ধর্মীয় অনুশাসন ও রিচুয়ালের অন্যতম অংশ।

রাসূলুল্লাহ (সা.) দ্ব্যর্থহীনকন্ঠে ঘোষণা করেছেন, বিবাহ আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (সুনানু ইবনি মাযাহ, হাদিস নং-১৯১৯)

ইসলামে প্রতিটি বিষয়ে যেমন দিকনির্দেশনা রয়েছে তেমনি বিবাহের জন্যও রয়েছে অনেক বিধি নিষেধ।

কাকে বিয়ে করা যাবে আর কাকে করা যাবেনা তা নিয়েও রয়েছে বিস্তারিত পর্যালোচনা।

যাদেরকে বিবাহ করা যাবেনা তাদের অন্যতম হচ্ছেন ১৪জন মাহরাম। (সূরা নিসা, আয়াত-২৩) এছাড়া সকল কাফের মুশরিককেও বিবাহ করা অবৈধ।

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। ইসলাম গ্রহনকারী ক্রীতদাসীও মুশরিক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে (মুশরিক রমনী) তোমাদের কাছে ভালো লাগে।

এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরিকের তুলনায় অনেক ভালো, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। (সূরা বাকারা,আয়াত-২২১)

এছাড়া অন্য পুরুষের বিবাহে থাকা স্ত্রীও অপর পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ।

বিবাহিতা নারীরা নিশ্চিত ও কার্যকরী পন্থায় তালাকপ্রাপ্তা/বিধবা হয়ে ইদ্দত পালনের আগে দ্বিতীয় কোন পুরুষের ঘরণী হতে পারবেনা। এটাই আল্লাহ তায়ালার ফয়সালা।

কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, এবং সব সধবা নারীরাও বিবাহের ক্ষেত্রে তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ। (সূরা নিসা, আয়াত-২৪)

কোন বিবাহিতা নারী যদি তার স্বামীর পক্ষ থেকে তালাকপ্রাপ্তা হন এবং তিন মাস (তিনটি পিরিয়ড) ইদ্দত পালন শেষ করেন শুধুমাত্র তাহলেই তিনি নতুন করে বিবাহের বৈধতা পাবেন।

এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সুস্পষ্ট নির্দেশ, আর তালাকপ্রাপ্তা নারীরা নিজেদেরকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েজ পর্যন্ত। (সূরা বাকারা, আয়াত-২২৪)

বিবাহ যেহেতু আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্দেশিত একটি ধর্মীয় রিচুয়াল। তাই তার নির্দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করলে সেই বিবাহ শুদ্ধ হিসেবে গন্য হবেনা।

যেমন, কোরআন হাদিসের বাইরে মনগড়া কোন পদ্ধতিতে নামাজ পড়লে নামাজ হবেনা। তেমনি বিবাহের ক্ষেত্রেও মুসলমানদের জন্য আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত এই নির্দেশগুলো মানা জরুরী।

কেউ এর বিপরীত করলে তার বিবাহ অশুদ্ধ ও বাতিল বলেই গন্য হবে। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে বিগত প্রায় দেড় হাজার বছরে এ ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।

তালাক প্রদানের অধিকার আল্লাহ তায়ালা শুধুমাত্র পুরুষকেই দিয়েছেন। তবে কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে কোন প্রেক্ষাপটে সচেতনভাবে তালাক গ্রহণের অধিকার প্রদান করেন তাহলে স্ত্রী নিজের ওপরে তালাক নিতে পারবেন।

কোরআনে কারীমে পুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, তালাক (প্রথমত সর্বোচ্চ) দুইবার। (অর্থাৎ রজয়ী বা বায়েন তালাক দুয়ের বেশি হতে পারেনা। দুই তালাকের বেশি দিলে আর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ বাকি থাকেনা)

এরপর ন্যায়সঙ্গতভাবে রাখো অথবা অনুগ্রহ সহকারেই বিদায় দাও। (অর্থাৎ ইচ্ছে হলে এরপরে পূর্ণ বিচ্ছেদকে গ্রহন করো।) সূরা বাকারা, আয়াত-২২৯।

এখন কারো যদি পূর্বের স্বামীর সঙ্গে শরীয়তসম্মতভাবে ছাড়াছাড়ি না হয়ে থাকে, তাহলে কোনভাবেই এ বিয়ে বৈধ নয়। তবে এর জন্য দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।

প্রথম বিষয় হলো, প্রথম স্বামীর ছাড়াছাড়িটা ইসলামী শরীয়ত সম্মতভাবে হয়েছে কি-না। আর তালাকনামা পাঠানো এবং সেটি ইসলামী শরীয়ত সম্মতভাবে বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া পর্যন্ত পৌঁছেছে কি-না, এই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

আররেকটি হলো, যদি শরীয়তসম্মতভাবে ছাড়াছাড়ি বা বিচ্ছেদ হয়ে থাকে, তবুও তিন মাস অথবা তিন পিরিয়ডের সময় পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। সেটি হয়েছে কি-না নিশ্চিত করতে হবে।

এই দুটি বিষয়ের কোন একটি বিষয় যদি অনুপস্থিত থাকে, তাহলে বিয়ে শুদ্ধ হবে না। বরং এটি একটি অবৈধ বিয়ে।

সূত্র: ইসলামী আইনের বিখ্যাত গ্রন্থ রদ্দুল মুহতার- ৪/৪৫৬, কানযুদ দাকায়েক-৯/১৮৭, কিতাবুন নাওয়াযিল-৯/১৫২, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১০/৪০৮-৪৪৩, বাহরুর রায়েক-৯/৩৯৭।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ