• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

আলেমদের আত্মার আত্মীয় ছিলেন শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২০  

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের পর সর্বপ্রথম যে কাজটি করেছেন তা হল সরকার ও আলেম-ওলামাদের মাঝে সুসম্পর্ক তৈরি করেছেন। যার প্রমাণ মেলে তার মৃত্যুর পর আলেম সমাজের প্রতিক্রিয়া থেকে। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর বিয়োগে আলেম সমাজ তাদের অভিভাবক হারানোর বেদনা প্রকাশ করেছে সমবেতভাবে। দেশের কোনো মন্ত্রীর মৃত্যুতে আলেম সমাজ স্বপ্রণোদিত হয়ে দেশব্যাপী মাদ্রাসা-মসজিদে কোরআন খতম, মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছেন এমন ঘটনা আমাদের জানা নেই।

শেখ আবদুল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহধন্য এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আস্থাভাজন ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই ছাত্রজীবনে তার রাজনীতি শুরু। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তার বিশেষ অবদান ছিল। তিনি খুলনা আযম খান কমার্স কলেজের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। পর্যায়ক্রমে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিক। শেখ আবদুল্লাহ ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও সরকারি চাকরিতে যোগ না দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সহচর হিসেবে জনগণের সেবা করেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যতবার গোপালগঞ্জ-৩ আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ততবারই শেখ আবদুল্লাহ তার নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গোপালগঞ্জের মানুষের কাছে শেখ আবদুল্লাহ জনপ্রিয় ছিলেন বলে শোনা যায়। এত বড় বড় দায়িত্ব পালন করছেন; কিন্তু তার চরিত্রে দুর্নীতির একটু কালিও লাগেনি। সততা ছিল তার চরিত্রের উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য। সে কারণেই কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কারণে তাকে ঢাকায় দাফন করার কথা থাকলেও গোপালগঞ্জের মানুষ দাবি তোলে তাদের আত্মার আত্মীয়কে গোপালগঞ্জের মাটিতেই দাফন করতে হবে। শেষ পর্যন্ত গ্রামের বাড়ি কেকানিয়াতেই তাকে দাফন করা হয়।

শেখ আবদুল্লাহর আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গোপালগঞ্জের মাটিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছিল। তবুও তিনি আজীবন নির্বাচনের বাইরে থেকে দলীয় প্রধানের আস্থার ওপর ভরসা করে দল ও দেশের সেবা করে গেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আস্থার পুরস্কার হিসেবে শেখ আবদুল্লাহকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। শেখ আবদুল্লাহ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর কর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে নির্দেশ দেন। তিনি ঘোষণা দেন, আমি নিজে দুর্নীতি করব না এবং কাউকে দুর্নীতি করতে দেব না। তিনি হজ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেন। তার প্রচেষ্টায় হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি, সৌদিতে হাজীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, হজ ইমিগ্রেশন ঢাকাতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা, জেদ্দা বিমানবন্দরের হজ টার্মিনাল এয়ারকন্ডিশন লাগানোসহ আরও অনেক সুবিধা হাজীরা পেয়েছেন। তাই হজ এলেই ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর কথা মনে পড়বে বাংলাদেশের মানুষের।

শেখ আবদুল্লাহর প্রচেষ্টায় গত বছরের মতো এবারও আল্লামা শফি, মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদসহ ৫৫ জন বিশিষ্ট আলেম সরকারি খরচে হজ আদায়ের সুযোগ পান; কিন্তু এ বছর তো আর হজে যাওয়া হচ্ছে না। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব শান্তিপূর্ণভাবে নিরসন হয়। তার প্রচেষ্টায় মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প সপ্তম পর্যায়ে অনুমোদন লাভ করে। দারুল আরকাম মাদ্রাসাকে স্বতন্ত্র প্রকল্প হিসেবে অনুমোদনের খুব কাছাকাছি তিনি নিয়ে যান এবং ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ বাস্তবায়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। করোনাকালে দেশের মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় এবং জনগণের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে মসজিদভিত্তিক প্রচারণায় তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। শেখ আবদুল্লাহ মাত্র দেড় বছরের মন্ত্রিত্বকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করার পাশাপাশি আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা তথা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে অবদান রেখেছেন তা চিরকাল জাতি স্মরণ রাখবে।

শেখ আবদুল্লাহ সম্পর্কে আমার নানা হন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর দৈনিক যুগান্তরে তার সাক্ষাৎকার নেয়ার প্রস্তাব করি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান; কিন্তু সে সাক্ষাৎকার আর নেয়া হল না। তার আগেই দেশবাসীকে কাঁদিয়ে তিনি মহান প্রভুর ডাকে লাইব্বাইক বলে চলে যান।

লেখক : পেশ ইমাম, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ