• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ঈদে রঙিন পোশাকে সাদা-কালো ক্লাসে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২০  

ঈদ মানেই আনন্দ। নতুন জামা-কাপড় পড়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো ও আড্ডা দেওয়া। এমন উৎসবের দিনে নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়া কোন ছাত্র-ছাত্রীরই বা ক্লাস করতে ভালো লাগে?

স্বাভাবিকভাবে কারওই উপভোগ করার কথা নয়। তবে ক্লাসটি যদি বই, খাতা-কলম ছাড়া গণিতের মারপ্যাঁচ বা ইংরেজি ব্যাকরণের বাইরে গিয়ে নিজের পছন্দের কোনো বিষয়ে হয়, তাহলে তো অন্য কথা। করোনাকালীন এই ঈদে মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকার চেয়ে বরং আনন্দ নিয়ে সেই ক্লাসে মাথা খাটানোই ভালো। দেশের সেরা দুই দাবাড়ুকে এবার ঈদের দিনে অনলাইন জুমে বসতে হয়েছিল সাদা-কালো ৬৪ খোপের বোর্ডের পাঠশালায়। শিক্ষকের ভূমিকায় যে কেউ নয়, ছিলেন স্বয়ং রাশিয়ান বংশোদ্ভূত ইসরায়েলি গ্র্যান্ড মাস্টার লেভ বরিসোভিচ সাখিস।

বিশ্ব দাবা ফেডারেশনের সহায়তায় অনূর্ধ্ব-২০ বছর বয়সী মেয়ে দাবাড়ুদের নিয়ে অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করেছে এশিয়ান দাবা ফেডারেশন। গতকাল থেকে শুরু হওয়া দাবার এই অনলাইন পাঠশালা চলবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। শিক্ষকের ভূমিকায় আছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথ আনন্দ সহ আরও পাঁচ বিখ্যাত গ্র্যান্ডমাস্টার। এশিয়ার সেরা প্রতিভাবানদের এই পাঠশালায় বাংলাদেশ থেকে সুযোগ পেয়েছে নোশিন আনজুম ও আহমেদ ওয়ালিজা। ঈদের ছুটির আমেজে এরই মধ্যে গতকালও আজ দুপুরে (১টা থেকে ৩ টা) ক্লাসে বসা হয়ে গিয়েছে দুই উচ্ছল কিশোরীর।

গতকাল ঈদের দিনে লেভ বরিসোভিচের ক্লাসের বিষয়বস্তু ছিল ‘আইসোলেটেড পন।’ নতুন জামা পরেই সৈন্য সামলানোর ক্লাসে বসে গিয়েছিল নোশিন। দশম শ্রেণিতে পড়া মেয়ের কাছে ঈদের দিনে এই প্রথম কোনো ক্লাস করার অভিজ্ঞতা। তবে দাবা বলেই মন খারাপ না করে দুই ঘণ্টা ক্লাসটি উপভোগ করেছেন নোশিন, ‘ঈদের দিনে তো আর এখন তেমন বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। তাই ক্লাস করতেই ভালো লেগেছে। ঈদের নতুন জামা পরেই বসে গিয়েছিলাম ক্লাসে।’

দাবার ট্রেনার হিসেবে বেশ খ্যাতি আছে সাইবেরিয়ায় জন্মগ্রহণ করা বরিসোভিচের। তাঁর কাছ থেকে কী শিখলেন নোশিন? ‘সৈন্য দিয়ে কীভাবে ভালো খেলা যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্য শক্তিশালী বিষয়গুলোর সাহায্য না নিয়েও কীভাবে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা যায়, দেখানো হয়েছে সেগুলো’—জানালেন নোশিন। গতকালের ক্লাসটি ভালোভাবে করতে পারলেও ইন্টারনেট সমস্যায় আজকের ক্লাসটি পুরোপুরি না করতে পারায় মন খারাপ এই দাবাড়ুর।

আজকের ক্লাসটিও দারুণ উপভোগ করেছেন ওয়ালিজা। ‘বিল্ডিং অ্যান্ড ওপেনিং রিপেরটর’ এর উপড়ে ক্লাস নিয়েছেন মালদোবার গ্র্যান্ড মাস্টার ভিক্টর ভলোগান। ৪৮ বছর বয়সী এই দাবাড়ুর সঙ্গে দুই ঘণ্টার ক্লাস শেষে বেশ খুশি ওয়ালিজা। লেভ বরিসোভিচ সাখিস ও ভিক্টর ভলোগানের অধীনে ক্লাস করে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবছেন নবম শ্রেণিতে পড়া এই কিশোরী, ‘এই দুই দিনে যে বিষয়ে আমরা ক্লাস করেছি, তা আমরা আগেও জানতাম। কিন্তু এখন ধারণাগুলো আরও পরিষ্কার হয়েছে। খেলার শুরুর দিকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ক্লাসে এই বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’

চলতি মাসের ১২ থেকে ১৬ জুলাই দাবা অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশ। দলের ছয় সদস্যের একজন ওয়ালিজা ও অতিরিক্ত ছয় সদস্যের দলে আছে নোশিন। কোর্সটি অলিম্পিয়াডের জন্য ভালো কাজে আসবে বলে মনে করে তারা। তাই ঈদের আমেজের মধ্যেও তাই দুই উচ্ছল কিশোরীর কাছে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়ানোর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ক্লাস।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ