• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

উন্নয়ন চলবেই

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৯  

প্রধানমন্ত্রী খুব দ্রুত একটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে অনেক রাঘববোয়াল, রুই-কাতলা ধরা পড়ায় অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন, সরকার বুঝি থমকে যাবে। অথবা স্থবির হয়ে পড়বে উন্নয়নের ধারা ও অগ্রগতি। কেননা, ধৃতদের অনেকের কাছেই নগদ গচ্ছিত শত শত কোটি টাকা ও সঞ্চায়পত্র পাওয়ার পাশাপাশি ছিল সরকারী একাধিক প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ। উদাহরণত বলা যায়, মাদক ও অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাবাসরত জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকেবি এ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের হাতেই ছিল গণপূর্ত অধিদফতরের ৫৩টি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের বাস্তবায়ন, যেগুলো জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ। এসবের আর্থিক মূল্যও কম নয়, সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ওপরে। শুধু এক ব্যক্তির হাতে এত বিপুল অঙ্কের কাজ প্রাপ্তি সম্পর্কে অনেকে বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুযোগ-সুবিধা মতো উৎকোচ দিয়ে অথবা মদ-নারী ইত্যাদি সরবরাহ করে রীতিমতো প্রলুব্ধ করে বাগিয়ে নিয়েছে এসব বিপুল অঙ্কের কাজ। প্রাথমিক তদন্তে এর প্রমাণও মিলছে বৈকি। বলাবাহুল্য, গ্রেফতারের পর থেকেই প্রায় বন্ধ অথবা স্থগিত হয়ে গেছে এসব প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। ফলে স্বভাবতই এক ধরনের আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল এসব প্রকল্প ঘিরে। এসব কর্মকা-ে জড়িত শ্রমিকসহ কর্মরতদের ক্ষেত্রেও নেমে এসেছিল এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সব সন্দেহ সংশয়-দূর করে দিয়েছেন। প্রকল্পের কাজ যেন কোন অবস্থাতেই থেমে না থাকে, সেজন্য বিকল্প হিসেবে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দ্রুত এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন আইনমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্টদের।

চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ব্যাপক ধরপাকড়ে একে একে বেরিয়ে আসছে বড় বড় গডফাদারের নাম। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, যত বড় গডফাদারই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দুর্নীতি, অপকর্ম ও শৃঙ্খলা ভঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা তথা শাস্তি দেয়া হবে। ছাড় পাবে না কেউ। জনসাধারণ সরকারের এই কঠোর অবস্থানকে অকুণ্ঠচিত্তে সাধুবাদ ও সমর্থন জানিয়েছে। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার। সেহেতু সরকারের ভাবমূতি রক্ষার্থে দলের ভেতরে ও বাইরে এ রকম একটি শুদ্ধি অভিযান জরুরী ও অপরিহার্য ছিল।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমান সরকার সব রকম দুর্নীতি, মাদক ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। সেটা যে কোন মূল্যে বাস্তবায়ন করতে সরকার বদ্ধপরিকর এবং দেশ ও জাতির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। জাতির পিতা বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘুষ-দুর্নীতিকে কখনই প্রশ্রয় দেননি। তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে অনড় ও অনমনীয়। কথা নয়, কাজেও এর একাধিক প্রমাণ মিলেছে ইতোমধ্যে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে যথেষ্ট শক্তিশালী করা হয়েছে। ত্রিশ লাখ শহীদ ও তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রাখতে হবে অমলিন ও কলুষমুক্ত। মুষ্টিমেয় কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজের জন্য দেশের অর্জন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকে ভূলুণ্ঠিতে হতে দেয়া যাবে না কোন অবস্থাতেই। বাংলাদেশের স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার স্বার্থে সেটাই প্রত্যাশিত। সে অবস্থায় যে কোন মূল্যে চলমান প্রকল্পগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নও জরুরী ও অপরিহার্য।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ