• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন মা ও ছেলে !

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

মা হুরে জান্নাত আর ছেলে আবদুল্লাহ আহসান। দুজন একই রিকশায় চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যান। এত বড় ছেলেকে মা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিতে আসেন, বিষয়টা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে গুঞ্জন ছিল। পরে তাঁরা যে তথ্য জানতে পারেন, তা নিয়ে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। কারণ, তাঁরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

হুরে জান্নাত ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আর তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ আহসান একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ১৮তম ব্যাচে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছেন। কিন্তু কেন এমনটা হলো, সে গল্প তাদের কাছেই শোনা যাক।

হুরে জান্নাত ১৯৯৮ সালে সোনাগাজীর বেলায়েত হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ওই বছরই নূর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এরপর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু সংসারের ঝামেলায় পড়াশোনা আর এগিয়ে নিতে পারেননি। এরই মধ্যে সংসারে আসে দুই ছেলে আবদুল্লাহ আহসান ও আবদুর রহমান। ছেলেদের বড় করতে করতেই দিন কেটে যাচ্ছিল তাঁর। একটা সময় মনে হলো আরেকটু পড়াশোনা করা উচিত। বিয়ের এক যুগ পর ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। চার বছর বিরতি দিয়ে ২০১৬ সালে ভর্তি হন ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে। এরই মধ্যে তাঁর বড় ছেলে আবদুল্লাহ আহসান ঢাকার মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু মা চান, ছেলে তাঁর সঙ্গে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করুক। ছেলেও সেটা মেনে এখানে ভর্তি হন।


মা ও ছেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়ছেন গত দুই বছর ধরে। মা বললেন, ‘বাসা ফেনী শহরেই। আমরা মা-ছেলে প্রায়ই একসঙ্গে ভার্সিটিতে যাওয়া-আসা করি। এ নিয়ে আমার মধ্যে কখনো অস্বস্তি লাগে না। বরং আমার কাছে স্বস্তির বিষয় হলো যে আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। চোখে চোখে রাখতে পারছি। সে যাতে ঠিকভাবে নিজের পড়ালেখা শেষ করতে পারে, সেই দোয়াই করছি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে দেখা যায় অনেক ছেলে বখে যায়। কিন্তু আমার ছেলের এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই।’

ছেলে আবদুল্লাহ আহসান এরই মধ্যে বাণিজ্য অনুষদের তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ছেন। মায়ের পড়ার প্রতি আন্তরিকতা মুগ্ধ করে আহসানকে। অনুপ্রাণিত হন তিনি। তিনি বলেন, ‘আম্মু সব সময় আমাদের দিকে খেয়াল রাখেন। এত বড় হয়েছি তারপরও মায়ের যত্নআত্তি এতটুকু কমেনি। আশা করছি জীবনে ভালো কিছু করতে পারব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি অনার্সের শেষ বর্ষে আছেন হুরে জান্নাত। একটি পরীক্ষা আর ভাইভা দিলেই শেষ, পেয়ে যাবেন স্নাতক ডিগ্রি। কিন্তু নিজের সন্তানের বয়সী সহপাঠীদের সঙ্গে কেমন কেটেছে চার বছর—জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘এখানে আমি বেশ কিছু ভালো বন্ধু পেয়েছি। কখনো অস্বস্তি বোধ করিনি। তারা আমার ছোট, সেটা মনে হয়নি। বরং সবার থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। শিক্ষকেরাও অনেক আন্তরিক।’ এখন অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। ভবিষ্যতে তিনি নিজেকে ভালো আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ