• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

করোনাযুদ্ধে সাধারণ মানুষের পাশে যুবলীগ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২০  

রাজধানী থেকে তৃণমূলে সবখানেই ইতিবাচক সংবাদে, ভালো কাজে সম্পৃক্ত থাকছে সংগঠনটি। সেই ধারাবাহিকতায় করোনা যুদ্ধেও এখন সক্রিয় অবস্থান যুবলীগ নেতাকর্মীদের।

বিশ্বজুড়ে দাপট দেখানো নভেল করোনাভাইরাস এখন বাংলাদেশের মানুষকেও বাধ্য করছে ঘরবন্দি থাকতে। এ পরিস্থিতিতে কর্মহীন নিম্নআয়ের মানুষ, যারা দিন আনে দিন খায়। সময় যতো যাচ্ছে, নিম্নবিত্তদের সঙ্গে যোগ হচ্ছে মধ্যবিত্তদের তালিকাও। রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রাম-সবখানে চিত্র একই। খাদ্য সংকটে থাকা এসব মানুষের পাশে আশার আলো হয়ে দাঁড়াচ্ছে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী এরই মধ্যে রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যায়ে ‘যুবলীগের উপহার’ নিয়ে হাজির হচ্ছেন তারা। এর পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় নানামুখী পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই জরুরি বৈঠক করে সারাদেশে মানুষের পাশে দাঁড়োনোর জন্য নির্দেশ দেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। নির্দেশনার পরই সারাদেশে ত্রাণ তৎপরতা থেকে শুরু করে মানুষকে করোনা সম্পর্কে সচেতন করতে কাজ করছে নেতাকর্মীরা।

সম্প্রতি ত্রাণ তৎপরতা আরও সমন্বিতভাবে করার জন্য ওয়ার্ড পর্যায়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট (মোবাইল নম্বরসহ) ত্রাণ বিতরণ প্রস্তুত কমিটি গঠন করে দ্রুত পর্যায়ক্রমে যেমন ওয়ার্ড কমিটি-ইউনিয়ন কমিটিকে, ইউনিয়ন কমিটি-থানা কমিটিকে, থানা কমিটি-জেলা কমিটিকে, জেলা কমিটি-কেন্দ্রীয় কমিটিকে পাঠাতে বলা হয়েছে। এ কমিটির কাজ হলো দল মত নির্বিশেষে প্রকৃত দরিদ্র, দুস্থ ও কর্মহীন অসহায় মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা, ত্রাণ কার্যক্রম, মানবিক সংকটে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করা।

এছাড়া যে কোনো জরুরি স্বাস্থ্য সেবা দিতে টেলি মেডিসিন সার্ভিস টিম গঠন করা হয়েছে। এ টিম পর্যায়ক্রমে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক উপ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি সমন্বয় টিম এবং সর্বমোট ৯০ জন চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ৫টি পরামর্শক টিম গঠন করা হয়েছে। টিমগুলো কাজও শুরু করেছে। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগরের রোগীদের যাতায়াতের সংকট বিবেচনা করে আওয়ামী যুবলীগ দুটি অ‌্যাম্বুলেন্স ঢাকা মহানগরে ২৪ ঘণ্টা ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে। যুবলীগের ফ্রি অ‌্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক (০১৭১২০৪১০০৮ ও ০১৭১২০৩৮২৫৩৭) মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা যা‌বে।

ঢাকার বাইরে ছাড়াও রাজধানীতে ত্রাণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যুবলীগের বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। এমন একজন যুবলীগ নেতা এন আই আহমেদ সৈকত। নিজ উদ্যোগে খেটে খাওয়া মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তুলে দিচ্ছেন খাবার। আর তাদের সচেতনতায় দিচ্ছেন মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যুবলীগ চেয়ারম্যান-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্ব যার যার অবস্থান থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের একজনের সহযোগিতাও যদি একটি পরিবার অনাহার থেকে দূরে থাকে সেটিই আমাদের প্রাপ্তি।’

ত্রাণ নিয়ে কেউ কেউ ছুটে যাচ্ছেন কর্মহীন এসব মানুষের বাড়ি বাড়ি। হটলাইন খুলেছেন অনেকে। ম্যাসেঞ্জারে পেজ খুলে সাহায্যপ্রার্থী খুঁজছেন তারা। চাহিদা জানালে রাতের আধারে নিজেই ব্যাগ নিয়ে হাজির হচ্ছে ঘরের দুয়ারে। এমন একজন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ যুবনেতা প্রায় ৩ হাজার পরিবারের কাছে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিয়েছেন। তার খাদ্যতালিকায় থাকছে চাল, ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ, লবণ, কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি। করোনা সংকট থাকা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালু রাখার কথা জানান তিনি।

বাবু বলেন, ‘খাদ্যসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি যারা স্বাস্থ্য নিরাপত্তার আওতায় পড়ে অর্থাৎ ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের ৪শ পিপিই পৌঁছে দিয়েছি। শুধু সংকটে থাকা মানুষ নয়, অনেক দলীয় নেতাকর্মীও আছেন যারা সংকটে আছেন; এমন দু’শ নেতাকর্মীর বাসায় আর্থিক সহায়তা ও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি।’ যুবলীগের আরেক নেতা সৈয়দ আলাওল ইসলাম সৈকত নিজের বাসায় খাবার কিনে এনে পরিবারের সদস্যরা মিলে প্যাকেট করে সেই খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন নিজেই মোটরসাইকেলে করে।

যুবলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, সংগঠনের পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের এমন ব্যক্তিগত উদ্যোগগুলোতে ভালো থাকছেন হাজারো পরিবার। আর অনুপ্রেরণা পেয়ে অনেকেই এখন মানবতার ডাকে নিজেই হয়ে যাচ্ছেন ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’।

ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশের জেলাগুলোতে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা মানুষের কাছে গিয়ে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন দলীয় প্রধান ‘শেখ হাসিনার উপহার’। যেখানে থাকছে করোনা সুরক্ষার মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ খাদ্যসামগ্রী।

অসহায় এসব মানুষের জন্য জেলায় ব্যাপক কর্মযজ্ঞ নিয়েছেন নড়াইলের যুবলীগের আহ্বায়ক ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘গত ১২ বছর আমি নড়াইলের সর্বোচ্চ করদাতা। সেজন্য সমাজের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা বেশি বলে  মনে করি। এজন্য গত মাস থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছি। আমি নিজে ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল-সরকারের একটি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি) ডিলার। যতোদিন ওই চাল দিয়েছি কোনো টাকা নিচ্ছি না। আমি ফ্রি দিচ্ছি সবাইকে। এর সঙ্গে আলু, পেঁয়াজ, তেল, লবণ, সাবান, মাস্কসহ ৭টি আইটেম দিচ্ছি।’

মানুষের পাশে আরও ব্যাপকভাবে থাকার জন্য নিজের নামে একটি ওয়েবসাইট খুলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে মানুষ প্রয়োজন জানাচ্ছে। সেগুলো তালিকা করে রাতে মানুষের বাসায় বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি। রমজানে এই কর্মসূচি আরও বাড়াবো।' এছাড়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের সুরক্ষা ও সারঞ্জাম কেনায় দশ লাখ টাকা দেবেন বলেও জানান ওয়াহিদুজ্জামান।

গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল জানান, গত ২৩ মার্চ থেকে  যুবলীগ প্রায় ১২ হাজার পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা তুলে দিয়েছে। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন অবরুদ্ধ অসহায় মানুষের জন্য কাজ করছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৯ হাজার পরিবারের কাছে ‘খাদ্য উপহার’ পৌঁছে দিয়েছেন তারা।

করোনা যুদ্ধে দেশব্যাপী মানবতার কল্যাণে কাজ করা নেতাকর্মীদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে যুবলীগ মানুষের কল্যাণে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করে চলেছে।’

তিনি বলেন, ‘যুবলীগ এই আপদকালের শুরু থেকেই যেভাবে মানুষের পাশে ছিল, আগামীতে যতদিনে এই সংকট থাকবে সংগঠনের নেতাকর্মীরা সামর্থ্য ও সাধ্য অনুযায়ী থাকবে। ইতোমধ্যে আমরা ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি নিজস্ব ট্রাকে করে। নেতাকর্মীরা যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রাখছে। আমি নেতাকর্মীদের নিজে সুরক্ষিত থেকে এ ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

যুবলীগের মানবিক কর্মকাণ্ডের প্রশসংসা করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং সংগঠনটির সাবেক জাহাঙ্গীর কবির নানকও। তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিকালে যুবলীগ মানুষের পাশে থেকে সবসময় সাহয়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনা সংকটে তারা যেভাবে সরকারের সহযোদ্ধা হয়ে কাজ করছে তা অনুপ্রেরণাদায়ক। আমি আশা করি সবসময়ই এভাবে যুবলীগ মানবতার পতাকা উঁচুতে তুলে ধরবে।’

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ