• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জে দূর্গা প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত শিল্পীরা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২০  

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূঁজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জের মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরী। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী ও আযোজকেরা। ইতিমধ্যে খড়, মাটি আর দো-মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরী কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে রং এর কা্জ। তবে এবছর করোনা ভাইরাসের কারনে জাঁকজমকপূর্ণভাবে না হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূঁজা আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছেন আয়োজকেরা।

জেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় রেকর্ড ১ হাজার ১৯৮টি মন্দিরে পূঁজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলায় ৩১৩টি মন্দিরে পূঁজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া কোটালীপাড়া উপজেলায় ২৮৫টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ২৭১টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ২৩৭টি এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৯২টি মন্দিরে পূঁজা অনুষ্ঠিত হবে।

জেলার বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, গত ১৭ সেপ্টম্বর মহালয়া অনুষ্ঠিত হবার পরপরই গোপালগঞ্জের মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। এ বছর ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূঁজার আনুষ্ঠিকতা। চলবে আগামী ২৬ আক্টোবর পযর্ন্ত। এবছর মহাষষ্ঠীতে দোলায় চড়ে পৃথিবীতে আসবেন। আর পূঁজার সকল আনুষ্ঠিকতা শেষে গজে (হাতি) চড়ে কৈলাশে ফিরবেন দেবী দূর্গা। কয়েকদিন পড়েই ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতীতে মুখরিত হয়ে উঠবে পাড়া-মহল্লা থেকে গ্রাম।

ইতিমধ্যে মন্দিরগুলোতে খঁড় ও মাটি দিয়ে পরম যত্নে গড়ে উঠছে প্রতিমা। দোঁ-আঁশ মাটির কাজ শেষ হয়ে এখন চলছে রং এর কাজ। রং তুলির টানে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন প্রতিমা শিল্পীরা। আর এসব প্রতিমা তৈরীতে দম ফেলার ফুসরত নেই প্রতিমা শিল্পীরা। দেবী মা দুর্গা তার সাথে বিদ্যার দেবী স্বরসতী, ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী এবং তার সাথে দেবতা কার্তিক ও গনেশসহ নানা দেব-দেবীর প্রতিমার রূপকে ফুটিয়ে তুলবেন নিপুন হাতের ছোঁয়ায়।

এ বছর এক-একজন প্রতিমা শিল্পীরা ৪ থেকে ৮টি করে প্রতিমা তৈরী করেছেন। তবে করোনাকালীন সময়ে চাহিদার তুলায় মজুরি কম পেলেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রেখেছন তারা।

এদিকে করোনা প্রাদূর্ভাবের কারণে এবছর জাঁক-জমকভাবে পূজার আয়োজন করছেন না আয়য়োজকেরা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীদের প্রতিমা ও পূঁজা দেখার ব্যবস্থা করছেন তারা। মন্দিরগুলোতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকলেও থাকবেনা সড়কগুলোতে।

প্রতিমা শিল্পী পঞ্চনন পাল, রনজিৎ পাল, রবীন্দ্রনাথ পাল জানান, এবছর এক-একজন ভাস্কর ৪ থেকে ৮ টি করে প্রতিমা তৈরি করেছেন। পূঁজা শুরুর দিন পর্যন্ত রং এর কাজ করতে হবে তাদের। তবে করোনাকালীন সময়ে চাহিদার তুলায় মজুরি কম পাচ্ছেন তারা। সেই সাথে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির এ বাজারে পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পান তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেলেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা।

আয়োজক ভজন কুঁড়ি, দুলাল বিশ্বাস ও টিটু বৈদ্য জানান, ইতেমধ্যে আমরা পূঁজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির চিঠি পেয়েছে। এতে স্বাস্থ্য মানার পাশাপাশি শুধুমাত্র মন্দিরের ভিতরে বিভিন্ন আয়োজনের কথা বলেছে। তবে এবার সড়কগুলোতে আলোকসজ্জা, গান-বাজনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান না করার জন্য অনুরোধ করেছে। আমরাও সেই ব্যবস্থা গ্রহন করছি। তবে যারা প্রতিমা দেখতে আসবেন তাদের জন্য তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মনে চলার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূজা উদযাপন পরিষদ, গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ডা: অসিত কুমার মল্লিক জানান, ইতিমধ্যে আমাদের সাথে বাংলাদেশ পূঁজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে আলোচনা হয়েছে। এবছর শুধু মাত্র মন্দিরের মধ্যে আলোকসজ্জ্বা করা হবে। বাইরের সড়ক গুলোতে আলোকসজ্জ্বা, গান বাজনাসহ কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে না। প্রতিটি মন্দিরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিটি মন্দিরে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাথে আইন-শৃংখলা রক্ষকারী বাহিনী আগের মত এ বছরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির জেলা গোপালগঞ্জে এবছর নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ