• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

চোরাচালান ছেড়ে সবজি চাষে ঝুঁকেছে শার্শা সীমান্তের মানুষ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

একটু আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৬ থেকে ৩৫ বছরের যুবকেরা জীবন বাজী রেখে বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে গরু নিয়ে আসতো। তারা ভারতে যেত রাতের আঁধারে চোরাই পথে। বিএসএফের গুলি উপেক্ষা করে এ কাজ করতো। শুধু মাত্র সীমান্ত পার করানোর বিনিময়ে গরু বিশেষে পেতো দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। শুধু জীবনের ঝুঁকি নিতে হয় বলেই তাদের মজুরী এত বেশি। ১৮ বছর বয়সী এক যুবক মাসে তিনবার ভারতে যেয়ে ৬টি গরু আনতে পারলে আয় করতো কমপক্ষে ১২ হাজার টাকা। ক্ষেত্র বিশেষ আয়ের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হতো।

১৫ দিন ভারতে যেয়ে ৩০টি গরু সীমান্ত পার করতে পারলেই আয় করতো ৬০ হাজার টাকা। কোনো পেশায় স্বল্প শিক্ষিত মানুষের জন্য এত অল্প পরিশ্রমে এত বেশি টাকা আয়ের সুযোগ নেই। তাই টাকার লোভে যুবকরা সীমান্তের ওপারে যাচ্ছিল, বিএসএফের গুলি খাচ্ছে। আবারও যাচ্ছে। দিন পরিবর্তনের হাওয়ায় এখন এসব পাচারকারীরা গরু পাচার বাদ দিয়ে ক্ষেতের মাঠে ঝুঁকে পড়েছে।

একদিকে বিএসএফের গুলি অন্যদিকে মাদক মামলা থেকে বাঁচতে যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা গোগা ইউনিয়নের রুদ্রপুর গ্রামে চোরাচালান কারবার ছেড়ে সবজি চাষে ঝুঁকেছেন অনেকে। গ্রামটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়ে গ্রামের অধিকাংশ লোকজন। তারা ভারতীয় গরু আনার কাজসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। 

এলাকার কয়েকজন চোরাচালানী জানান, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলি আর বিজিবি সদস্যরা পাচারকারীদের ধরে ফেনসিডিল দিয়ে মামলায় জড়িয়ে দিত। মিথ্যা মামলায় জর্জরিত গ্রামবাসীর অনেকেই এখন তাদের চোরাচালান পেশা ছেড়ে ফিরে এসেছে মাঠের সবজি চাষে। সবজি চাষ করে এখন তারা স্বাবলম্বী এবং সুস্থ জীবন যাপন করছেন। বদলে নিয়েছেন তাদের জীবনের পাশাপাশি পরিবারের জীবন। সীমান্তের দু‘শ গজের মধ্যে পাটসহ কোনো উঁচু গাছ বা ফসল লাগানো নিষেধ রয়েছে বিজিবির পক্ষ থেকে। তাই গ্রামের লোক সীমান্তের ধার ঘেঁষে এখন পটল, উচ্ছে, বেগুন, কাঁচা মরিচসহ নানান ধরনের সবজির চাষ করছেন। তবে পটল চাষে মানুষের আগ্রহ বেশি।

পটল চাষি রেজাউল জানান, তিনি ১২ কাঠা জমিতে পটল, নালার ধার ঘেঁষে পেঁয়াজ ও রসুন চাষ করেছেন। আর জমির আইলের ধারে বাঁধাকপি লাগিয়েছেন। এবছর প্রথম তিনি ৯০ টাকা কেজি দরে পটল বিক্রি করেছেন। পটল চাষে তার খরচ খুব একটা বেশি হয়নি। গত বছর এই জমিতে তিনি প্রায় এক লাখ টাকার পটল বিক্রি করেছিলেন।

রুদ্রপুর বিজিবি ক্যাম্পের পূর্বপাশ থেকে খালমুখ পর্যন্ত সীমান্ত সংলগ্ন সারা মাঠেই পটলের চাষ। ক্যাম্পের পশ্চিম পাশের সীমান্ত সংলগ্ন সব জমিতে একই কায়দায় পটলের চাষ চলছে। ফলে চোরাচালান ও গরু টানা কাজে আর কেউ যেতে চাইছেন না। তাদের জীবন কাটছে এখন সুন্দরভাবে।

স্থানীয় সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম জানান, মূলত দারিদ্র ও বেকারত্বের কারণে সীমান্ত এলাকার যুবকেরা গরু চোরাচালানের দিকে ঝুঁকে পড়ছিল। আর এ উপার্জনের দিকে তাকাতে গিয়ে প্রানকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতেও পিছপা হয়নি গরু পাচারকারীদল। এ পেশাকে তারা চোরাচালান নয় ব্যবসা হিসাবে দেখেছে। আর এই চোরাচালান করতে গিয়ে প্রায়শই বিএসএফের হাতে তাদের প্রাণ দিতে হচ্ছিল অথবা হতে হচ্ছিল অমানুষিক নির্যাতনের শিকার। এখন আর তারা গরু আনতে ভারত সীমান্তে যাচ্ছে না। নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে পরিশ্রম করে চোরাচালানী থেকে বেশি টাকা আয় করছে। পাশাপাশি পরিবারের দুঃচিন্তা মুক্ত করেছে।

এ বিষয়ে গোগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানান, সীমান্তে চোরাচালান ও গরু পাচার বন্ধে বিজিবির পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সীমান্তের মানুষকে সভার মাধ্যমে জনসচেনতনা করা হচ্ছে। এখন আর কেউ গরু আনতে ভারত সীমান্তে যাচ্ছে না। ফলে সীমান্তে গোলাগুলিও নেই। যারা চোরাচালানীর সাথে জড়িত তাদের অধিকাংশ এখন মাঠে কাজ করছে। সবজিসহ বিভিন্ন চাষাবাদে মনোযোগী হয়েছে। তবে এদের চাষাবাদে সরকারের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ